বান্দরবনে তখন আমি সিনিয়র টাইগার্সে। ফার্স্ট বেঙ্গলকে এ নামেই ডাকা হত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বেটালিয়ন নিয়েই বীর মুক্তিযাদ্ধা মেজর হাফিজ বীরবিক্রম। বর্ডার পার হয়ে যুদ্ধ শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিল।
অমি ফার্স্ট বেঙ্গলের আলফা কোম্পানির কমান্ডার হিসাবে লিরাগাও ছিলাম। এর থেকে মাইল দশেক পেট্রল করে উঁচু পাহাড়িয়া ঢালে লুংলাই পাড়া। একদিন পেট্রল করে গেলাম, দেখি ওখানে যে ব্যোম জাতি থাকে তারা ক্রিশ্চিয়ান আর তাদের পোষাক শার্ট প্যান্ট। মেয়রো মানানসই গাউন পড়ে। অবাক হলাম। ক্রিশ্চিয়ান মিশনারিরা এত দুর্গম এলাকাতে গিয়ে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করছে। সফল যে হচ্ছে তাত নিজ চোখেই দেখলাম। এরা বেশ ভাল অবস্থায়। এদের প্রচুর গয়াল মানে বন্য গরু আছে। আমাকে দেখানোর জন্য হনেরল আশে পাশে লবণ ছিটিয়ে দিল। সেই লবণ চাটতে চাটতে এক একটা গয়াল জংগলের ছোট খাট গাছ মারিয়ে। বড় বড় গাছের ফাঁক গলিয়ে উঠে আসল। বেশ শক্তিশালী এক এক একটা।
এরপর ঘেরাও ক্যাম্পে। সাংগু নদী চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে সেই এলাকার নাম ঘেরাও। এরপর রুমা। এক দিন দেখি নৌকাতে গান বাজিয়ে কারা যাচ্ছে। সিরিউরিটি থামাল।আমার কাছে নিয়ে আসল । ক্রিশ্চিয়ান মিশনারি। দেখলাম নৌকা বোঝাই কাপড়। সস্তা আয়না-চিরুনি, চুলের ফিতা লজেন্সের প্যাকেট ইত্যাদি যাচ্ছে সাংগু নদীর আশে পাশের পাড়াতে খৃষ্টান ধর্ম প্রচারে।
ফার্স্ট বেঙ্গলের এ্যাডজ্যুট্যান্ট। বান্দরবনে হেড কোয়ার্টারে। পাঁচ ছয় জন তাবলীগের মওলানা এলেন আমার কাছে। আমাকে বহুক্ষণ হেদায়েত করলেন। বললাম- আমি পাঁচ ওয়ার্ক নামায পড়ি। আপনারা বিভিন্ন চাকমা, ব্যোম, তংচইংগিয়া এদের পারাতে যান। ওদের মুসলমান করার চেষ্টা করেন। বললেন জংগলের অতো ভিতরে যাওয়া রিস্কের। কি বলার আছে , অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। [চলবে]
পথরেখা/আসো