পথরেখা অনলাইন : অম্লমধুর অভিজ্ঞতা নিয়ে গত বছর কাটিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। যার মধ্যে বছরের শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের দারুণ হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। রোববার বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করেছে নিউজিল্যান্ড। এর মধ্য দিয়ে সাফল্য-ব্যর্থতায় মোড়ানো একটি বছর শেষ করল বাংলাদেশের ক্রিকেট। বছরজুড়ে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টে নিজেদের পরিসংখ্যান কিছুটা স্বস্তি দিলেও ওয়ানডের গর্ব ধুলিস্যাৎ হয়েছে টিম টাইগার্সের। ভারতের মাটিতে ওডিআই বিশ্বকাপে ভরাডুবি সমর্থকদের চূড়ান্ত হতাশ করেছে। এ ছাড়া বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের মধ্যকার দ্বন্ধ। অন্যদিকে, দারুণ একটি বছর পার করেছে বাংলাদেশ নারী দল। ঘরের মাঠে ভারত ও পাকিস্তানকে হারানো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও ইতিহাস গড়েছে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। এ ছাড়া বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও ট্রফিখরা কাটিয়েছে লাল-সবুজের দল। যুব এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। বলা যায় ভাল-মন্দের মিশেলেই কেটেছে বছরটি।
স্বপ্নের মতো কেটেছে টি-টোয়েন্টিতে
কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে কখনোই বাংলাদেশ ভাল দল ছিলনা। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে এই ফরম্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। গেল মার্চে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ঠিক এই দলটিই বিশ্বকাপ জয় করেছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। কিন্তু নিজের দেশে ইংলিশদের দাঁড়ানোর সুযোগও দেয়নি টাইগাররা। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় টাইগাররা। এ বছর ১১ টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৮টিতে জয় ও ২টিতে হার ও একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে বাংলাদেশের।
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় টেস্টে
টেস্ট ক্রিকেটে বিবর্ণ বাংলাদেশের চিত্রটা কিছুটা হলেও বদলেছে চলতি বছর। ২০২৩ সালে খেলা চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের সাবেক চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও জয় পেয়েছে টাইগাররা। আফগানদের বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় বড় এবং যেকোনো দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় টাইগারদের। মুমিনুল হকের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ঐ টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। রেকর্ড জয়ের পর সিলেটে ভালো মানের উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারায় বাংলাদেশ। ঐ জয়ের পর এ বছর টেস্টে অপরাজিত থাকার সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। কিন্তু মিরপুরে নিজেদের পাতানো ফাঁদে পড়ে কিউইদের কাছে ৪ উইকেটে ম্যাচ হেরে যায় টাইগাররা।
ওয়ানডেতে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি
২০১৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ওয়ানডে ফরম্যাটে মাত্র একটি সিরিজ হেরে ঘরের মাঠকে নিজেদের দুর্গে পরিণত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৩ সালে দুর্গটি ভেঙে চুরমার হয়। এ বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের লজ্জা পায় বাংলাদেশ। এরপর দুঃস্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ অভিযান যেন বাংলাদেশের ওয়ানডের গর্ব ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য ছিল টিম টাইগার্সের। লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়া টাইগাররা অষ্টম স্থানে থেকে আসর শেষ করায় কোনো মতে ২০২৫ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে । সব মিলিয়ে এ বছর ৩২টি ওয়ানডের মধ্যে ১১টিতে জয়, ১৮টিতে হার এবং তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় বাংলাদেশের।
যুবাদের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট
বলার মতো সাফল্য পেয়েছে যুব ক্রিকেট দল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় সাফল্য ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এশিয়া কাপ জয়। দুবাইয়ের মাটিতে ফাইনালের লড়াইয়ে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বাংলাদেশ হারায় ১৯৫ রানের বড় ব্যবধানে। আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক আশিকুর রহমান শিবলির সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৮৩ রান। জবাবে আরব আমিরাত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৮৭ রানে। প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের পথে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মত দলকে হারায় তারা। দু’টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৬ গড়ে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান করেন শিবলি। এখন পর্যন্ত দেশকে দু’টি বড় মেগা ইভেন্টের ট্রফি জয়ের স্বাদ দিয়েছে যুবা ক্রিকেটাররা। কিন্তু জাতীয় দল এখনও কোনো ট্রফি জিততে পারেনি।
বলার মতো সাফল্য নারী দলের
দুর্দান্ত একটা বছর পার করেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। গেল জুলাইয়ে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ১-১ এ ড্র করে নিজেদের উন্নতির ইঙ্গিত দেয় নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এমনকী ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারলেও ১টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জিতে নেয় তারা। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস গড়েছে নারী দল। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় তারা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-১এ ড্র করলেও ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারে বাংলাদেশ। তারপরও নারী ক্রিকেটারদের জন্য এটি স্মরণীয় বছরই ছিল।সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পথরেখা/আসো