স্বাধীনতার পর পর ঢাকায় জনাধিক্য ছিল না। আমার সাইকেল ছিল। আমরা দুই ভাই ডাবলিং করে বন্ধু মনুদের বাসাতে যেতাম। আর মনুর সাইকেলে স্বপন ভাই আর আমার সাইকেলে ইনু মামা মিলে চলে যেতাম ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাঠে। মাঠের পাশে ছিল টেনিস মাঠ। পরিত্যক্ত তাই ওটা ব্যবহৃত হত হকি মাঠ হিসেবে।
ওই সময় দৈনিক কাগজে এক ভয়ের খবর ছাপা হয় খলিলউল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি মরা মানুষের কলিজা খায়- গোরস্থানে গিয়ে ও মর্গের লাশের। মা বললেন ভোর রাতে খেলতে যেতে পারবে না। বললাম জেতা মানুষের কলিজা তো খায় না। মা অসন্তুষ্ট হলেন, তখন অনার্স পড়ি। মানলেন না। ধমাধম গালে পিঠে পরল। বিকেলে মিটিং হল মনুদের বাসায়। ঠিক হল ভোর রাতে না গিয়ে আর একটু আলোয় বেড় হব। একদিন প্রাকটিস করছি, এহতেশাম ভাই এসে বললেন তুমি ভাল খেল। ন্যাশনাল ব্যাংকে খেলবে, চাকরি দেব। বললাম আমিত ইউনিভার্সিটি তে পড়ি, চাকরি কেমনে করব। বলল শুধু হাজিরা খাতাতে দিনের যে কোন সময় এসে সাইন করে যেও। এভাবে রাজু , মোহাম্মদ আলি, আশিকুল্লাহ কায়েস চাকরি করত। মিলু ভাই, বশীর ভাই, মীর ভাই, সাবের আলি ভাই, মাশকো স্যুয়ের মালিক আনোয়ার ভাই, গোলে রনজিত দা মিলে এক শক্তিশালী দল ছিল। দিল্লিতে এক টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে, এহতেশাম ভাই বললেন রেডি হও যেতে হবে। বললাম আমার পরীক্ষা আছে, যাব না। ১৬ জন হকি প্লেয়ারপাওয়া ভার, ইউনিভার্সিটি মাঠে ফুটবল প্রাকটিসে আসি এক ছেলেকে নিয়া ১৫ জনের দল তৈরি তরে দল দিল্লী গেল।
বলছিলাম কলিজা খেকো খলিলুল্লাহর কথা। ওই ৭২/৭৩ সনে ঢাকাতে এক ভয় আর অস্থিরতা ছিল ওর জন্য। আর এই মূহূর্তের ভয় হল। ট্রেনের বগিতে আগুন দিয়ে মারা। এক মা তির তিন বছরের শিশু, সেই বগির দরজা বন্ধ করে আগুন দেয়, মা তার ছোট্ট আদরের আগুন থেকে বাঁচাবার কতই না চেষ্টা তারপর দুইজনেই ঝলসে মারা গেল। কি নিদারুণ। ট্রেনের বগির জানালা শিক লাগিয়ে বন্ধ তাই দরজা বন্ধ হলে বেড় হওয়া যায় না। এই শিকগুলো এই মূহূর্তে খুলে ফেলার দাবী রাখছি। ভোটে এবার সহিংসতা হচ্ছে। ভোট হলে গা জোয়ারি এক স্বাভাবিক চিত্র তবে ট্রেনে পুড়িয়ে মারা বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি তলানিতে নিয়ে এসেছে। ভোটে যেতে দেয়া হবে না, সে টার জন্য এই যে আগুন ইতরামি। এটা যার মস্তিক প্রসূত, তার মাথায় কোন ধরনের গোবর ভড়া তার জন্য রিসার্চ করার এখনই সময় ।
(চলবে)
পথরেখা/আসো