মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ঘোষণা দিয়েও অয়োজন করতে না পারার কারণে অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ। বেশ কয়েকবছর বিরতির পর মেয়েদের ফুটবল লিগ নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন নিয়ে মেয়েদের পক্ষ থেকে দাবী ছিল। এবার অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবী করা হলেও বিছুই হয়নি। ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের দোড়গোড়ায় দাড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ। বলা যায় এই লিগ শুরুর মধ্যে দিয়ে আরেকটি ইতিহাস তৈরির পথে ছিল দেশের নারী ফুটবল। সবকিছু ঠিক থাকলেও গেল মে মাসে বিভাগীয় শহর সিলেটে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ৬ দল নিয়ে দেশের প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ। এর আগে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিল আয়োজক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও কে স্পোর্টস। লিগের নামকরণ করা হয়েছিল উইমেন্স সুপার লিগ (ডব্লিউএসএল)। জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে লিগের লোগোও উম্মোচণ করা হয়। দেশিদের পাশাপাশি বিদেশি খেলোয়াড়রাও এই লিগে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। শুরুটা সিলেটে করলেও লিগের শেষ চার ম্যাচ ঢাকায় আয়োজনের পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে আয়োজক ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের।
এছাড়া নারীদের কোচিংয়ে আগ্রহী করে তুলতে অংশগ্রহনকারী সবগুলো দলের সহকারী কোচ হিসেবে স্থানীয় নারীদের করার কথা জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের ফুটবলে পৃষ্টপোষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কে স্পোর্টস অনেক নতুনত্ব আনতে চাইছে। এ লিগকে দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে নারীদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ও জমকালো আসরে পরিণত করার প্রতাশার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্টানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ করিম। লোগো উম্মোচণ অনুষ্ঠানে বড় স্বপ্নের কথা জানিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের অনেক অর্জনেই মেয়েদের নাম জড়িয়ে গেছে। আর মেয়েরা লিগ খেলে বর্তমানের যে অর্থ পাচ্ছে তা আমার দৃষ্টিতে যথেষ্ট নয়। এই লিগ থেকে তারা কিছু অর্থ পাবে, যা তাদের পরিবারকে অনেকদিন থেকে সহায়তা করবে। দ্বিতীয়ত এ লিগের কল্যাণে মেয়েরা বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়ায় বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা এ লিগ আয়োজনে সম্মতি দিয়েছি।’
লিগ নিয়ে বাফুফে নারী বিভাগের প্রধান ও এএফসির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরন এ লিগ আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ’বাংলাদেশের নারী ফুটবলে যে সকল মেয়েরা খেলছেন তারা অতি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাই এই লিগ দিয়ে তারা আর্থিকভাবে উপকৃত হবে’।
যদিও বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ঘরোয়া লিগের কাঠামো এখনো একটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌছেনি। বলা যায় নামকাওয়ান্তে মাঝেসাজে যে একটি নারী লিগ আয়োজন হয় তার মান নিয়েও বিশাল বড় প্রশ্ন রয়েছে। এক বসুন্ধরা কিংস ছাড়া বাকি দলগুলো যে খেলার জন্যই খেলে থাকে। নেই আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান লিমিটেড, শেখ জামাল, ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো দলগুলো। আর নড়বড়ে কাঠামোর নারী ফুটবলে হঠাৎ করেই চমক ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে এসেছে ‘বাংলাদেশ উইমেন্স সুপার লিগ’! ছেলেদের ফুটবলে ভারতের আদলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করা হবে, এমনটা শোনা যাচ্ছিল কত কয়েক বছর ধরেই।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ব্যর্থতার বেড়াজালে বন্দি হওয়া ছেলেদের ফুটবল রীতিমতো ধুঁকছিল। তাই সেখান থেকে নজর সরিয়ে দিয়ে চমক হয়ে এসেছে উইমেন্স সুপার লিগ। গত বছর নেপালে নারী সাফ জয়ের পর বাংলাদেশের ফুটবল যেন এখন কেবল নারী কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তাই কে স্পোর্টসের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলের আয়োজন নারী ফুটবলকে ঘিরেই করার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছে। লিগে ৫ থেকে ৬ দল নিয়ে হতে পারে, প্রস্তাবিত ম্যাচের সংখ্যা ১৯ থেকে ২৪। ভেন্যুর তালকায় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিন ক্যাটাগরিতে ফুটবলার বাছাই করার কথা ছিল। আর প্রতিটি দল ১৮ জন খেলোয়াড় নিতে পারবে। কোটা পদ্ধতিতে বিদেশি ফুটবলার আসবে দক্ষিণ এশিয়া ও ফিফা ভুক্ত দেশ থেকে। তিন বিদেশির সঙ্গে চাইলে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ যোগ করতে পারবেন আরও দুই বিদেশি ফুটবলার। তবে এসব কিছুই প্রস্তাবিত হওয়ায় চুড়ান্তভাবে কিছুই বলছেন না।
এর আসরে ফুটবলারদের পারিশ্রমিক কত হবে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে যখন খুব আশাবাদ বাফুফের তখন ছেলেদের ফুটবল যে ব্যর্থতার সাগরে ডুব দিয়েছে। কিন্তু এত ডাকঢোল পেটানোর পরও কেন মেয়েদের সুপার লিগ আয়োজন করতে পারেনি বাফুফে সেটা বিরাট ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন এতটাই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে এই লিগ আদৌ হবে কিনা সেই সংশয় দিনে দিনে গাঢ় হচ্ছে।
পথরেখা/আসো