বিশেষ প্রতিবেদন : ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান থাকে। তবে মানের বিচারে আবেদন কিছুটা হলেও কমে গেছে। সেটা বিগত কয়েক মৌসুম দেখলে সহজেই পরিস্কার হয়ে যাবে। অধিনায়ক নিয়ে নানা লুকোচুরি, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা, অনুশীলন মাঠের সংকট নিয়ে গত কদিন ধরে চলা আলোচনার পর ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে মারকারটি বিপিএলের দশম আসর।
মাঘ মাস সবে শুরু হলেও হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু পুরো দেশ। মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী দিনে দুটি ম্যাচ। দুপুর আড়াইটায় প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকা মোকাবিলা করবে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে সিলেট স্ট্রাইকার্স। দুর্দান্ত ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার দলে আছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামের মতো জাতীয় দলের তারকারা। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন চাতুরঙ্গ ডি সিলভা, উসমান কাদির, সাদিরা সামারাবিক্রমার মতো পরিচিত মুখ। প্রথম ম্যাচে ঢাকার প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক এবার ইমরুল কায়েসের বদলে লিটন দাস। সাম্প্রতিক সময়ে সফল কুমিল্লা বরাবরের মতো তারকাসর্বস্ব দল গড়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান, মঈন আলি, সুনিল নারিন, মোহাম্মদ রিজওয়ান, আন্দ্রে রাসেল, ইফতিখার আহমেদ, রশিদ খানের মতো বড় বড় তারকারা এবার খেলতে মুখিয়ে আছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের নেতৃত্বে এবারও শুভাগত হোম চৌধুরী। দলে আছেন মোহাম্মদ হারিস, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ হাসনাইন, কুর্তিস ক্যাম্ফারের মতো তারকা ক্রিকেটার। সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গত আসরে ফাইনালে খেলা জাদুকরী এই অধিনায়কের অধীনে খেলবেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিম হাসান সাকিব, রায়ান বার্ল, বেন কাটিং, মোহাম্মদ মিঠুন, ইয়াসির আলি রাব্বিরা। মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পিচ কখনই ব্যাটিং সহায়ক না। সীমিত ওভারের আদর্শ পিচ বলতে যা বোঝায়, হোম অব ক্রিকেটের উইকেট তেমন নয়। প্রায় সারাবছর স্লথ গতি, নিচু বাউন্স আর একটু-আধটু টার্ন থাকে এই পিচে। এখানে ব্যাটারদের জন্য হাত খুলে খেলা কঠিন।
আর এ কারণে হাই স্কোরিং ম্যাচ কম হয়। বিশেষ করে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত শেরে বাংলার পিচ আরও অন্যরকম থাকে। সেই সময় বিপিএল হয় বলেই ব্যাটাররা হাত খুলে ফ্রি স্ট্রোক প্লে করতে পারেন না তেমন। তাই প্রতিবার শুরুর দিকে রান ওঠে কম। গতবারও তাই হয়েছিল। আর এবারতো প্রচন্ড ঠান্ডা। সঙ্গে ঘন কুয়াশা ও কনকনে বাতাস। এ ধরনের আবহাওয়াকে শেরে বাংলার উইকেটের জন্য বড় বাধা বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিপিএল শুরুর আগে টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্টরা আশার বাণী শুনিয়েছেন, এবার রান উঠবে। তবে বাস্তবে তা কতটা সত্য হবে, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় এই আসরে অংশগ্রহণ করছে ৭ দল। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে হয়ে গেল ট্রফি উন্মোচনটাও। আর সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গেল, এবার কোন দল খেলবে কোন অধিনায়কের অধীনে। অধিনায়ক নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে রংপুর রাইডার্স।
জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আছেন রংপুরে, তবুও দলকে নেতৃত্ব দেবেন গত আসরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। এদিকে বরিশালকে নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী তামিম ইকবালই নেতৃত্ব দেবেন দলকে। এনামুল হক বিজয় নেতৃত্ব দেবেন খুলনা টাইগার্সকে। প্রায় দেড় মাসব্যাপী এই টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে ১ মার্চ। এবারো বিপিএলের ভেন্যু তিনটি, ’হোম অব ক্রিকেট’ খ্যাত মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এবারের বিপিএলের দশম আসরে নতুন অনেক নিয়ম করা হয়েছে। মূলত আইসিসির কিছু পরিবর্তনের কারণে এটি করতে হচ্ছে বিপিএল আয়োজকদের। বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক রকিবুল হাসান জানান, টুর্নামেন্টটির প্লেয়িং কন্ডিশনেও কিছু পরিবর্তন আসছে। বোলিং পরিবর্তনে ৬০ সেকেন্ডের বেশি সময় নিলে ফিল্ডিং দলকে প্রথমবার সতর্ক করা হবে। দ্বিতীয়বারও একই ভুল করলে পেনাল্টি হিসেবে ব্যাটিং দল পাবে ৫ রান। বিপিএলের আগের আসরে ছিলো না এই নিয়ম।
এদিকে এবারের বিপিএলে স্ট্যাম্পিং রিভিউতে নো বল চেক করবেন না আম্পায়ার। টাইমড আউটের পরিবর্তে থাকবে ৫ রানের পেনাল্টি। তবে প্রথমবার সতর্ক করা হবে ব্যাটিং দলকে। কোনো দল বিদেশি কোটা পূরণ করতে না পারলে ম্যাচ রেফারির কাছে আবেদন করতে পারবে। হাই স্কোরিং উইকেট চায় বিসিবি। সিলেট ও চট্টগ্রামের চেয়ে মিরপুরের উইকেট নিয়ে বেশি চিন্তা থাকলেও টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক আশা করেন, ঢাকাতেও এবার রানের ফুলঝুরি ছুটবে। বিপিএলে এবার মিরপুরের উইকেটে ১৮০ থেকে ২০০ রানের ম্যাচ হবে বলে আশা।
পথরেখা/আসো