পথরেখা অনলাইন : মারকাটরি হিসেবে পরিচিত কুড়ি ওভারের ক্রিকেট লিগ এখন বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বলা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ব্যস্ততায় ডুব দিতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট। আগে থেকেই চলছে অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল)। এবার সেই দৌড়ে যোগ হয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইন্টারন্যাশনাল লিগ (আইএল টি-টোয়েন্টি)। বিপিএলের দশম আসরের উদ্বোধনী দিনে ১৯ জানুয়ারি চারটি দল একে অপরের মুখোমুখি হয়।
উদ্বোধনী ম্যাচে দুপুরে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং দুর্দান্ত ঢাকা মুখোমুখি হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে বর্তমান রানার্সআপ সিলেট স্ট্রাইকার্স মাঠে নামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। অথচ কত বিষয় নিয়ে আসর শুরুর আগে সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যানে কিটব্যাগ, পোডিয়ামের জায়গায় কার্টন নিয়ে জোড়াতালির বিপিএল! বিসিবির কর্তাব্যক্তিরা বেশ গর্ব নিয়েই বলে থাকেন, বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ বিপিএল! তবে খোদ সংশ্লিষ্টরাই এমন ‘অবাস্তব’ কথা মনেপ্রাণে কতটুকু বিশ্বাস করেন এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাস্তবতা বলছে, গত এক যুগে ৯ আসর পার করে দশম সংস্করণ মঞ্চায়নের অপেক্ষায় থাকা বিপিএল এখনো ক্রিকেট লিগের চেয়ে ‘প্রবলেম লিগ’ হয়ে থেকে গেছে।
বলা যায় অনেকটা নিয়ম করে প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নানা ঘটনা কিংবা বিতর্কের জন্ম দেয় বিপিএল। বিশ্বের এটাই হয়তো একমাত্র টুর্নামেন্ট যেখানে আসর শুরুর একদিন আগে অধিনায়কের নাম জানা যায়। বিপিএল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত খেলা ৮টি ফ্র্যাঞ্চাইজি নাম বদল করেছে ২৮ বার! বিপিএলের আসরগুলোতে ঘুরেফিরে যে বিতর্কগুলো দেখা যায়, আম্পায়ারিং, মিরপুরের উইকেট, ধারাভাষ্য ও সম্প্রচারের মান। যা নিয়ে টুর্নামেন্ট চলাকালে আলোচনা হলেও, পরে আর সমাধানের মুখ দেখা যায় না। প্রতিবারই বদলে যাওয়ার প্রত্যয় শোনা যায়। কিন্তু আদতে তেমন পেশাদারিত্বের ছাপ দেখা যায় না কোথাও। এই যেমন বিপিএলের দশম আসর শুরুর আগমুহূর্তে দুটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে।
যেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভ্যানে করে খেলোয়াড়দের কিটব্যাগ মাঠে আনছে। এ ছাড়া টুর্নামেন্টের একদিন আগে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন ফরচুন বরিশালের আইকন ক্রিকেটার ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু তার জন্য সামান্য একটা পোডিয়ামের বন্দোবস্ত করা যায়নি। কিছু বক্স জোড়াতালি দিয়ে কাজ সারা হয়েছে। এই ছবিটা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই ক্ষোভ ঝারছেন। সিনিয়র এক ক্রীড়া সাংবাদিক যেমনটা বলছিলেন, ‘এই ছবিটা কিন্তু বাইরে যাবে। তার চেয়ারটা দেখেন। এই এক ছবি দেখে বলে দিতে পারবেন বিপিএল টা কেমন?’ সব ছাপিয়ে মাঠের ক্রিকেটটা শুরু হয়ে গেছে। কিছুটা আশার খবর হচ্ছে, আগেরবারের ডিসিশিন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) না থাকার বিতর্ক এবার আর নেই। প্রথম দিন থেকেই থাকছে এই প্রযুক্তি। বিপিএলের ব্রডাকাস্টিংয়েও এবার ভিন্ন মাত্রা দেখা যাবে। ড্রোন ক্যামেরার সঙ্গে থাকছে, রোবট ক্যামেরা, স্পাইডার ক্যামেরার মতো আধুনিক সব প্রযুক্তি। সবমিলিয়ে ৩৬টি ক্যামেরা দিয়ে মাঠের খেলা সম্প্রচার করা হবে। থাকছে ভিন্ন ধরনের স্কোরকার্ডও। এবার বিপিএলের জন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইটও।
আর সেখান থেকে টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারবেন দর্শকরা। প্রথদিনের দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে। যদিও এখনও বেশিরভাগ দলেরই বিদেশি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশে আসেননি। এরপর এলেও, একই সময়ে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তারা থাকবেন আসা-যাওয়ার মাঝে। অবশেষে বাংলাদেশ ও আমিরাতের দুটি ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনুমতি পেয়েছেন পাকিস্তান দলের মোট চারজন ক্রিকেটার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের বড় একটা অংশ জুড়েই আছেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই আসরে বরাবরের মতো আকর্ষণ তারা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারেও। বিপিএলের সাত ফ্র্যাঞ্চাইজ সাধ্যমতো পাকিস্তানের তারকাদের দলে আনার চেষ্টা করেছে। নতুন করে পাকিস্তানের চার ক্রিকেটারকে ছাড়পত্র দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এতে বিপিএলে যোগ দিতে বাবর আজমদের সামনে আর কোনো বাধা থাকছে না। ছাড়পত্র পাওয়া পাকিস্তানের চার ক্রিকেটার হচ্ছেন, বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তাদের মধ্যে কেবল পেসার শাহিন আফ্রিদি খেলবেন আমিরাতের টুর্নামেন্টটিতে। বাকি তিন ক্রিকেটার শিগগিরই বিপিএল খেলতে বাংলাদেশে পা রাখবেন।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট পাকিস্তান। পাকিস্তান জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিজওয়ান এবারও মাঠে নামছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। গত আসরে বিপিএলে খেলেননি বাবর, তবে এবার তাকে দেখা যাবে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে রংপুর রাইডার্সে। পেসার ওয়াসিম জুনিয়র এবারের বিপিএলে নাম লিখিয়েছেন খুলনা টাইগার্সে। এদিকে যে কারণে ক্রিকেটারদের কাছে বিপিএল বড় মঞ্চ সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এটিই দেশের একমাত্র ধারাবাহিক টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে খেলেই কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের প্রস্তুতি সারেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সে কারণেই এই আসরটি সবার কাছে বিশেষ কিছু। তবে প্রতিবারের মতো এবারও অনেকটা অপূর্ণতকা নিয়ে শুরু হয়েছে। কবে কাটবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকা সমস্যাগুলো। সেটার উত্তর ক্রিকেটপ্রেমিদের মতো জানা নেই ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরও।
পথরেখা/আসো