পথরেখা অনলাইন : প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে লিগ খেলতে গেছেন সানজিদা আক্তার। কলকাতার ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছেন এই মিডফিল্ডার। সেখানে যাওয়ার পর থেকে দলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করছেন বাংলাদেশ ফুটবলের পোস্টারগার্ল খ্যাত এই ফুটবলার। এরইমধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচও খেলেছেন তিনি। তবে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে লিগ ম্যাচে নামতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের এই উইঙ্গারকে। কারণ, ইন্ডিয়া উইমেন্স লিগে ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ ৩০ জানুয়ারি। ইস্টবেঙ্গলের মাঠে এ ম্যাচে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ স্পোর্টস ওড়িশা। কলকাতা থেকে সানজিদা জানিয়েছেন, ‘এখানে সবকিছু মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছি। তাইতো আশা করছি ৩০ জানুয়ারির ম্যাচ দিয়ে নতুন এই ক্লাবের জার্সিতে প্রথম মাঠে নামতে পারবো। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে খেলার মধ্যে দিয়ে আমার হয়ে যাবে নতুন ইতিহাস।’ সানজিদা আক্তার কেবল বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবেই ইস্টবেঙ্গলে নাম লেখাননি, তিনি ঐহিত্যবাহী ক্লাবটিরও প্রথম নারী ফুটবলার। গত মৌসুমে নারী লিগে নাম লেখানো লাল-হলুদরা এবার একজন বিদেশিই নিয়েছে।
প্রীতি ম্যাচ অনুশীলনে সানজিদার পারফরম্যান্স দেখে ক্লাবের সবাই খুশি। বাংলাদেশ থেকে সানজিদা এসেছেন-এই খবরে ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনেও বাড়ছে উৎসুক সমর্থকদের ভিড়। স্থানীয় গণমাধ্যমও পিছু নিচ্ছে বাংলাদেশের এই তারকা ফুটবলারের। এই লিগে খেলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও। তার দল কর্নাটকের কিকস্টার্ট। এরই মধ্যে নতুন ক্লাবের জার্সিতে অভিষেক হয়ে গেছে সাবিনার। এখন অপেক্ষায় সানজিদার। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি মুখোমুখি হবে সাবিনা ও সানজিদার ক্লাব। খেলা হবে ইস্টবেঙ্গলের মাঠে। ওয়াসিম ইকবাল, শেখ মোহামম্মদ আসলাম, মোনেম মুন্না, গোলাম গাউস, রিজভী করীম রুমি, রাকিব হোসেন, মিজানুর রহমানদের খেলা ইস্টবেঙ্গলে অনেক দিন পর পা পড়েছে বাংলাদেশের আরেক ফুটবলারের। এবার ইতিহাস নারী ফুটবলে। সেই ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন সানজিদা আক্তার।
জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের পর এবার সানজিদা আক্তারও ভারতের লিগে খেলবেন। সানজিদা খেলবেন ভারতের বিখ্যাত ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে। তাই সানজিদার ভালো লাগা একুট বেশি, ’আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা ঘটনা এটি। বাংলাদেশে ইস্ট বেঙ্গলের অনেক সমর্থক রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক সিনিয়র ফুটবলাররাও ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলেছেন’। ইস্ট বেঙ্গলের সমর্থকদের বাংলাদেশের ফুটবলারদের উপর প্রত্যাশাটাও তাই অনেব বেশি। মুন্নাকে এখনো কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা মনে রেখেছেন। আসলাম-রুমিদের পর আবার বাংলাদেশি কেউ খেলতে যাচ্ছেন। তাই সানজিদার উপর চ্যালেঞ্জও একটু বেশি, ’খেলার সুযোগ পেলে আমার সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশের সুনাম রক্ষা করব ইনশাআল্লাহ’। বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন কিকস্টার্টের হয়ে খেলছেন। ২০১৮ সালে সাবিনার সঙ্গে ভারতের লিগ খেলেছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে মোনেম মুন্নাকে নিয়ে এখনো আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন সানজিদা।
বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে বিশেষভাবে মিশে আছে ভারতের ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। নব্বইয়ের দশকে আসলাম, মুন্নাদের পর এবার ইস্ট বেঙ্গলে খেলবেন সানজিদা আক্তার। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই ফুটবলারকে নিয়ে কলকাতায় চলছে উন্মাদনা। বাংলাদেশের বাইরে এমন উন্মাদনা দেখে বেশ খুশি ২২ বছর বয়সী এই ফুটবলার। নিজের চেয়ে এখনো বাংলাদেশের কিংবদন্তি প্রয়াত মোনেম মুন্নাকে কলকাতার ফুটবলাঙ্গন মনে রেখেছে এতেই বিস্ময় বেশি সানজিদার, ’কলকাতায় মুন্না ভাইকে নিয়ে এখানে অনেক আলোচনা করে। আমি ইস্ট বেঙ্গলে আসার পর উনার নাম খবরের শিরোনামে। এটা অনেক বড় সম্মানের। বড় কথা হলো উনাদের সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্মান জড়িত। আমার উপরে অনেক চাপ এসে পড়েছে’। মুন্নাকে ভিন দেশের মানুষ স্মরণ করেছে খেলার কারণে। তাই খেলা নিয়েই মনোযোগ সানজিদার, ’অনেক জায়গা আছে ঘোরার। খেলাতেই মনোযোগ। এখানে ভালোভাবে খেললে আমার নাম দেয়ালে (ক্লাবের বিদেশিদের ছবির) উঠবে’।
জানা গেছে, সেখানে প্রথম ফরেন (নারী ফুটবলে) সানজিদা। অবশ্যই এটা তার কাছে খুব ভালো লাগার বিষয়। ইস্ট বেঙ্গল দল নিয়ে সানজিদা বলেন, ’আমার দলে ন্যাশনাল টিমের কেউ নেই। আমার দল ৫-৬ নম্বরে। টিম দুর্বল। মেসি কি একা কিছু করতে পারে। আমি ১০০-১২০ দিয়ে চেষ্টা করব।' কিছু দিন আগে মুন্না, আসলাম ও গাউসদের সম্মাননা জানিয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। নারায়ণগঞ্জ থেকে কলকাতায় সানজিদার খোঁজ নিয়েছেন গাউস, ’গাউস ভাই (গোলাম গাউস) ফোন দিয়েছিলেন আমাকে। ভাই ফোন করেন। এখানকার তপন আঙ্কেল এর সঙ্গে গ্রুপে আছেন। উনি আমাকে গিফট দিতে চান। অনেক কথা বললেন। উনি খুশি আমি খেলতে এসেছি। বললেন আমার পছন্দ মতো গিফট কলকাতা থেকে কিনে নিতে বলেছেন’।
পথরেখা/আসো