• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ২১:২৮

শামারের বীরত্বে ২৭ বছরের অপেক্ষা ফুরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

পথরেখা অনলাইন : সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলতে না পারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ঘরের মাঠে হেরে গেল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আর এতে ফুরাল দীর্ঘ ২৭ বছরের আক্ষেপ। দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের ফলে দুই ম্যাচ সিরিজটা শেষ হয়েছে ১-১ এ। বলা যায় এই জয়ের মাধ্যমে নতুন দিনের সূচনা হতে যাচ্ছে ক্যারিবীয় ক্রিকেটে। প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির ম্যাচ খেলতে নেমেই জয় পেল টানা দুটি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা দলটি। ম্যাচের শেষদিন জশ হ্যাজলউডকে বোল্ড করার পর শামার জোসেফের দৌড়টা যেন ঠিক উসাইন বোল্টের মতোই। জ্যামাইকান কিংবদন্তি ট্র্যাকে যে ঝড়টা তোলেন তাই যেন সেটা রবিবার গ্যাবায় দেখালেন এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা শামার। শামারকে ধরতে তখন অন্য সতীর্থরাও দৌড়াচ্ছেন প্রাণপণ। টেস্ট জয়ের নায়ককে বাউন্ডারি লাইনে ধরার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাসটা ছিল দেখার মতো। কেউ মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়ছেন বাতাসে, কেউ সিংহের মতো গর্জন দিয়ে খেলা দেখতে আসা সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন উদ্‌যাপনের রং। ব্রিসবেন এমন বুনো উদ্‌যাপন হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জয় পায় না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই খরা কাটানোর টেস্টটিও আবার ছিল রোমাঞ্চ ভরা।
 
ক্যারিবিয়ানদের ৮ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ের ম্যাচটি যে প্রায় ছিনিয়েই নিয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। ২১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্মিথকে একা রেখে সতীর্থরা ফিরছিলেন ড্রেসিংরুমে। আর এই সিরিজ দিয়ে প্রথমবার টেস্টে ওপেনিং করতে নামা ব্যাটার স্মিথ প্রতিপক্ষের বোলারদের বিপক্ষে লড়ে যাচ্ছিলেন নিঃসঙ্গ শেরপার মতো। ম্যাচ শেষে একাই থেকে গেছেন তিনি। ক্যারিবিয়ানরা জয় পেলেও যে তাঁকে আউট করতে পারেনি। ৯১ রানে অপরাজিত থেকে গেছেন তিনি। স্মিথের সেঞ্চুরি এবং অস্ট্রেলিয়ার জয়টা আসলে ছিনিয়ে নিয়েছেন শামার। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের যিনি ধসিয়ে দিয়েছেন। অথচ বোলিং করতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কা ছিল। কেননা আগের দিন ব্যাটিংয়ের সময় ডান পায়ের আঙুলে চোট পেয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী পেসার। কিন্তু সেই শামারই অস্ট্রেলিয়াকে একাই হারালেন। তাঁর এই বীরত্বে ২৭ বছর পর অজিদের মাঠে জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে জয় পেয়েছিল তারা। তখনো শামারের জন্ম হয়নি।
 
কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার সেঞ্চুরি ও কার্টলি অ্যামব্রোসের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেদিন ১০ উইকেটের জয় পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে জয়ের দুই বছর পর জন্ম আজকের টেস্ট নায়কের। অথচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয় পাওয়ার আগে ম্যাচটা অস্ট্রেলিয়ার ছিল। তৃতীয় দিন ২ উইকেটে ৬২ রানে দিন শেষ করা অজিরা টেস্ট হারবে এমন বাজি ধরার লোক কমই ছিল। ব্যাটাররা দুর্দান্ত ছন্দে থাকার সঙ্গে মাঠটাও যে তাঁদের হাতের তালুর মতো পরিচিত ছিল। কিন্তু সবকিছু ভোজবাজির মতো পাল্টে দিলেন শামার। শেষদিন অস্ট্রেলিয়ার বাকি ৮ উইকেটের ৭টি নিয়েছেন শামার। চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করতে নেমে শামারের বোলিং তোপে ১৩৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকেই দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন স্মিথ। কিন্তু শামারের দিনে তাঁর বীরত্ব পরাজয় মানল। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩১১ রানের বিপরীতে ২৮৯ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯৩ রানে অলআউট হয় ক্যারিবিয়ানরা। তবে ২১৬ রানের লক্ষ্য দিয়েও শামারের আগুন বোলিংয়ে প্রতিপক্ষে ২০৭ রানে অলআউট করে সফরকারীরা। ৮ রানের জয়ে সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করেছে।
 
এ টেস্টের ৮ উইকেটের সঙ্গে সব মিলিয়ে সিরিজে ১৩ উইকেট ও ৫৭ রানে সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি। ম্যাচসেরা শামা বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন, ডাক্তারের অনুপ্রেরণায় নেমেই হয়ে গেলেন নায়ক। মিচেল স্টার্কের বিধ্বংসী ইয়র্কারে পায়ের আঙুল ভেঙ্গে গিয়েছিল শামার জোসেফের। সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছাড়া ডানহাতি এই পেসারের টেস্ট তখনই শেষ হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু কে জানতো এই শামারের হাত ধরেই ব্রিসবেনের গ্যাবায় ইতিহাস লিখবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! উত্তেজনায় ঠাসা দিবা-রাত্রির এই টেস্টের রঙ বারবার বদলাচ্ছিল। ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছিল দু’দিকে। একবার অস্ট্রেলিয়া তো আরেকবার মনে হচ্ছিল জিতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত দারুণ জয়ে ইতিহাস গড়েছে ক্যারিবীয়রা। ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারাতে পেরেছিল ক্যারিবীয়রা। দলকে অবিশ্বাস্য এমন দিন এনে দেওয়ার নায়ক আর কেউ নন, শামার জোসেফ। ৬৮ রানে ৭ উইকেট শিকার করেছেন এই ক্যারিবীয় পেসার।  
পথরেখা/আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।