হকির যাদুকর বলা হয় ধ্যান চাঁদকে। ১৯২৮,৩২,৩৬ এই তিন অলিম্পিক গোল্ড তার একবার স্টিকের ছন্দে ভারত পেয়েছিল। মেজর ধ্যান চাঁদা তার ইউনিট ঝাসি হিরোজ নিয়ে ঢাকার পিলখানাতে ছিলেন, তার ভাই অলিম্পিয়ান রূপচাঁদ ও ওই ইউনিটে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়রে মাঠে অনুশীলন করতে আসতেন, আমার বাবা শামসুদ্দিন চাকলাদার ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় দলের হকি অধিনায়ক প্রায়ই অনুশীলন ম্যাচ হতো। সব সময়ই এ উপমহাদেশ ‘দাদা গিরি’ দেখিয়েছে ইউরোপীয়দের উপর। শারীরিকভাবে ইউরোপীয়দের থেকে পিছনে থাকলেও স্টিক ওয়ার্ক আর বল কন্ট্রোলে বারবার শুধু হারেই নাই, এবারও হয়েছে সাদা চামড়ারা। অন্তর্জাতিক হকির শাসন ইউরোপীয়দের হাতেই। কৃত্রিম মাঠে রাগবি খেলা হয়, ১৯৭৬ সনের মন্ট্রিল অলিম্পিকে প্রথমবারের মতন কৃত্রিম মাঠে হকি চালু হল।
এ মাঠে খেলার শুরুতে চার হাজার গ্যালন আর হাফ টাইমে আর দুই হাজার গ্যালন পানি ঢালতে হয়, বিরাট এক কার্পেট তা আবার অতি মসৃণ এমনই মাঠের ‘সারফেসে’ খেলা দ্রুত গতি হতে বাধ্য। মাঠ মসৃন হওয়াতে হঠাৎ বল লাফিয়ে উঠে শরীরে লেগে ফাউল হবার ভয়ও কম, ফাউল হলে কিছুক্ষনের জন্য ছোট্ট রেস্ট এ দম জমা করা যায়। টার্ফে সে সুযোগ নৈবচ্য। অনেক এস আছে তবে স্টেমিনা, স্পিড আর স্কিল এ তিন বাদে পুরো খেলা নান্দনিকভাবে সম্পন্ন করা অসম্ভব। উপমহাদেশ স্কিল মানে হাতের দখলে স্টিকে ছন্দ তুলে দর্শককে আপ্লুত করে তবে বল যত স্টিকে থাকবে তত স্টেমিনা লস হবে আর গতির মাঠে এ সব কারিকুরি বুমেরাং হয়ে নিজেদেরই সর্বনাশ করে। ইউরোপীয় বুঝে বিজিনেস, নো দর্শক মজা। পেনাল্টি কর্নার আদায় কর তা থেকে গোল আদায় কর। ওদের খেলাতে ফিল্ড গোল হয়ই না বলা চলে। এ মাতব্বরি ইউরোপীয়রা পেয়েছে আর্টিফিসিয়াল মাঠ সংযোজন করার পরই। ওরা নির্ভর করে স্টেমিনা আর স্পিডের উপর আর আমরা স্কিল যেটা আবার ড্রিবলিং নির্ভর। কৃত্রিম মাঠ নীল কালারের। হকি খেলা অতি দ্রুত। হলুদ বলের বিপরীতে নীল মাঠ এই জন্যই যে দ্রুত গতির খেলাতে খেলোয়াড় বলকে সহজেই দৃষ্টির সিমানায় রাখতে পারে।
আমরা স্কিলে প্রচুর দক্ষ। স্টেমিনা আর স্পিডে প্রথম থেকেই প্রয়োজন শারীরিক স্বচ্ছন্দতা। এর জন্য দরকার সুষম খাদ্য। আমি মনে করি বিশ্বকে চমকে দিকে হলে বছর ব্যাপী হকি ক্যাম্প করা। এ দল বি দল আর সি দল তৈরি করা।
শেষ হয়েও হইল না শেষ। আরো দশটি টার্ফ এনে জেলা শহরগুলোতে সংযোজন করা। ঘাসের মাঠে আমরা পায়ের টোর উপর নির্ভর করে দৌড়াই, ভিজা টার্ফে ফ্লাট ফুটেড দৌড়াতে হয় এতে ক্কাফ মাসেলে বেশী চাপ পরে, কোমড়ের নীচ যাতের জন্মগত শক্তিশালী তারা সহজাত ভাবেই এই টার্ফে ভাল খেলবে। রামা লুসাই, জনডন লুসাই এরা পাহাড়-জীবনে উচুতে উঠা নামতে শারীরিক ভাবেই কৃত্রিম মাঠ এদের স্বাভাবিক খেলাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে না।
মাঠে না দৌড়ে স্টেডিয়ামের সিড়িতে উঠা নামা করে চক্কর কাটলে কৃত্রিম মাঠ আর অপরিচিতর মতন ব্যবহার করবে না। হকি খেলোয়াড়, আম্পায়ার, কোচ সবই এশিয় মানের, দরকার এদের আর্থিক সাপোর্ট। এ জন্য হকি কর্তারা স্পন্সর যোগাড় করুন।
লেখক : সাবেক জাতীয় হকি দল অধিনায়ক এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত
পথরেখা/আসো