পথরেখা অনলাইন : ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রত্যাশিতভাবেই অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। এবার সেমিফাইনালে খেলার মিশন নিয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় স্টুয়ার্ট ল’র শীষ্যরা। তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যা জিতে বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এখন সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই জুনিয়র টাইগারদের। তবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েই সেমির মিশন শুরু করতে হচ্ছে বাংলাদেশের যুবাদের। সুপার সিক্স পর্বে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত চলতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছে ভারত ও আয়ারল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন টাইগার যুবারা। আর তৃতীয় স্থান লাভ করেছে আয়ারল্যান্ড। এবারের বিশ্বকাপের নতুন ফরম্যাট অনুযায়ী ভারতের পয়েন্ট ৪, বাংলাদেশের ২ আর আয়ারল্যান্ডের ০। গ্রুপ পর্ব থেকে শুধু সুপার সিক্সে ওঠা দলগুলোর পয়েন্ট যোগ হবে।
সুপার সিক্স পর্বে নিজেদের গ্রুপের কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা হবে না। সেরা ছয়ের লড়াইয়ে ‘এ’ গ্রুপের তিন দলের সঙ্গে থাকবে ‘ডি’ গ্রুপের তিন দল। ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও নেপাল। নিউজিল্যান্ড ও নেপালকে হারানোর সুবাদে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থান পাওয়া নিউজিল্যান্ডের ঝুলিতে ২ পয়েন্ট। আর নেপাল পয়েন্টশূন্য। বাইলজ অনুযায়ী দুই গ্রুপের সমান অবস্থানে থাকা দলগুলোর মধ্যে কোনো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না। যার অর্থ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে না বাংলাদেশ। তবে ‘ডি’ গ্রুপে প্রথম ও তৃতীয় স্থান পাওয়া দলের মুখোমুখি হবেন জুনিয়র টাইগাররা। অর্থাৎ পাকিস্তান ও নেপালের সঙ্গে খেলতে হবে লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ নেপালের সঙ্গে। গুণে-মানে-ঐতিহ্যে অনেক পেছনে থাকা নেপালের বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবেই নামবেন বাংলাদেশের যুবারা। এই ম্যাচটি জুনিয়র টাইগারদের জন্য ডু অর ডাই।
এদিকে এমনিতেই ‘ডি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি ভারতের। তাই এই ম্যাচে হারলেই সেমিফাইনালের আগে বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে জুনিয়র টাইগারদের। আবার পাকিস্তানকে হারালেও বাংলাদেশ সেমিতে উঠবেই- এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে অনেক ‘যদিকিন্তু’র সমীকরণ মেলাতে হবে লাল-সুবজ প্রতিনিধিদের। তবে সেমির রেসে থাকার জন্য মাহফুজুর রহমান রাব্বি ব্রিগেডের জন্য প্রথম শর্ত, হারাতে হবে পাকিস্তানকে। চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বাংলাদেশের যুবারা। সর্বশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপাও জিতেছে বাংলাদেশ। চলতি আসরে ভারতের কাছে হেরে শুরু করলেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রাব্বি ব্রিগেড। এশিয়া চ্যাম্পিয়নের আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে দলটির মধ্যে। আর গত কয়েক বছর ধরে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও বেশ সন্তোষজনক। সব মিলিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো অবস্থায় আছে সদ্য এশিয়া বিজয়ীরা। সুপার সিক্স পর্বে আগামী বুধবার জুনিয়র টাইগারদের প্রথম ম্যাচ নেপালের বিপক্ষে। আর দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবেন বাংলাদেশের যুবারা।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের যুবাদের বিপক্ষে ১২১ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। এই জয়ে সুপার সিক্স নিশ্চিত করল মাহফুজুর রহমান রাব্বির দল। শুক্রবার ব্লুমফন্টেইনের মানগাউং ওভালে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৯১ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৪৭.১ ওভারে ১৭০ রানেই গুটিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের যুবারা। এদিন টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক ঋষি রমেশ। ব্যাট করতে নেমে ধীরগতিতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। নবম ওভারে দলীয় ২৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার আদিল বিন সিদ্দিক। ২৮ বলে ১৩ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তাকে পার্থ প্যাটেলের ক্যাচে পরিণত করে সাজঘরে ফেরান যুক্তরাষ্ট্রের বাঁহাতি পেসার আর্য গর্গ। প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে মাত্র ৩৮ রান তুলতে পেরেছিল টাইগার যুবারা। এরপর তিনে ব্যাট করতে নেমে আশিকুর শিবলীকে নিয়ে এগোতে থাকেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান। শুরুর চাপ সামলে দুজন খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি শিবলী। গেল মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া এশিয়া কাপে টুর্নামেন্টসেরা এই ব্যাটার অরিন নাদকার্নির বলে সেই পার্থ প্যাটেলকে ক্যাচ দিয়ে বসেন। বিদায়ের আগে ৪৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৭ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এরপর আরিফুলকে সঙ্গে নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলছিলেন রিজওয়ান। কিন্তু দলীয় শতকের আগেই বিদায় নেন রিজওয়ান। ৯৪ রানের মাথায় পার্থ প্যাটেলের বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। বিদায়ের আগে ৪০ বলে ২ বাউন্ডারিতে ৩৫ রান করেন এই ব্যাটার। এরপর আরিফুল ও আহরার আমিনের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে তারা দুজনে মিলে ১১৫ বলে ১২২ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথ দেখান।
পথরেখা/আসো