পথরেখা অনলাইন : পুরনো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় এখন আর আগের মতো ফিট নন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সে কারণেই ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শুরু থেকেই খেলছেন। বোলার হিসেবে খেললেও মাশরাফিময় হয়ে ওঠছেনা তার পারফরম্যান্স। মোহাম্মদ আশরাফুল, আকরাম খানদের মতো সাবেক অধিনায়করা সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই সাময়িক বিরতিতে যাচ্ছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। চলমান বিপিএলে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছে তার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। এমন হারে টুর্নামেন্টে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে তার দল। একের পর এক হারার পরও মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে খেলার কারণে চলছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যেই বিপিএল থেকে বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশরাফি। সংসদের হুইপের দায়িত্ব ও রাজনৈতিক ব্যস্ততায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে মাশরাফি। সেখানে জানানো হয়েছে, তার অনুপস্থিতিতে সহ-অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন সিলেটের নেতৃত্ব দেবেন।
কিন্তু আসলেই কি রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে বিরতি নিয়েছেন নাকি সমালোচনার কারণে করেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। চলতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মাশরাফি। এরপর তাকে দেওয়া হয় হুইপের দায়িত্ব। ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে উপস্থিত ছিলেন না সিলেট অধিনায়ক। এদিন দলটির হয়ে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে মাঠে নামেন মাশরাফি। তবে এবার সংসদে যোগ দিতে সিলেট স্ট্রাইকার্স ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি। দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাশরাফির দলের প্রতি ‘কমিটমেন্টের’ জন্য তাকে অভিবাদন জানিয়েছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা। তাকে এই বিপিএলেই আবার দলে ফেরত পাওয়ার আশা তাদের। বহু বিতর্ক আর প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার পর চলতি আসর থেকে সাময়িক বিরতিতে যাচ্ছেন সিলেট স্ট্রাইকার্স অধিনায়ক। দল থেকে সরে গিয়ে আপাতত জাতীয় সংসদে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক টাইগার অধিনায়ক।
চলতি বিপিএলে অবশ্য শুরু থেকেই চাপের মাঝে আছেন মাশরাফি। নিজে পারফর্ম করছেন নিজের ছায়া হয়ে। বোলিংয়ে রানআপ কমিয়ে হয়েছেন অফ-স্পিনার। ব্যাটার হিসেবে রানিংয়ে ব্যাপক আকারে ভুগছেন। আবার তার দলও ভুগছে। পাঁচ ম্যাচের মধ্যে সবকটিতেই দেখতে হয়েছে হারের মুখ। মাশরাফি এরমাঝে জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হয়েছেন। সবমিলিয়ে দলকে যিনি একসুতোয় বেঁধে রাখার কারিগর, তিনিই হয়ত আছেন খানিকটা চাপের মাঝে। ব্রডকাস্টিং পার্টনারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মাশরাফিরই সাবেক সতীর্থ মোহাম্মদ আশরাফুল প্রশ্ন তুলেছিলেন মাশরাফির ফিটনেস নিয়ে। তিনি সত্যিই খেলার মত অবস্থায় আছেন কিনা বা নিজ থেকে খেলতে আগ্রহী কিনা সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মাশরাফি নিজেও জানিয়েছেন, ফিট না হয়ে খেলা আদর্শ না। কিন্তু সিলেট দলের ম্যানেজার স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজ মালিকপক্ষের চাওয়াতেই ম্যাশ নামছেন মাঠে। আবার সংসদের অধিবেশন শুরু হলেও মাশরাফি ছিলেন খেলার মাঠে। সবমিলিয়ে এই বিদায়টা কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল সবার জন্যে। এখন তাকে ছাড়া কেমন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এর আগে অবশ্য মাশরাফি ‘ম্যাজিকের’ অপেক্ষায় ছিল সিলেট। সর্বশেষ ম্যাচের আগে টানা পাঁচ ম্যাচে হার, তবু চিন্তার বিন্দুমাত্র ক্লেশ নেই সিলেট স্ট্রাইকার্সের কোচ রাজিন সালেহর। তাঁর এখনো বিশ্বাস দল ছন্দে ফিরবে। হোম গ্রাউন্ডে জয়ে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল তাঁর দল; কিন্তু দুই দিন আগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ১৩০ রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছে সিলেট। প্রিয় দলের ব্যর্থতা হজম করতে না পেরে স্থানীয় সমর্থকেরাও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন রোজ। সিলেট নিয়ে স্থানীয় সমর্থকদের অভিযোগও কম নয়। সিন্ডিকেটে জার্সি বিক্রি করছে, খুচরা বিক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে না জার্সি বিক্রির সুযোগ। তাই অনেকে আবার সিলেটের এমন দুর্দশায় সুখও নিচ্ছেন! কিন্তু সিলেট জয় দিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা মেটাতে পারবে কি না, সেটাই মূল কথা। এদিকে শত সমালোচনা হলেও পা ঠিক থাকলে পরের বিপিএলও খেলবেন মাশরাফি। ক্যারিয়ারের সোনালি সময় অনেক আগেই পার করেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবু খেলার প্রতি টান থাকার জন্য খেলে যাচ্ছেন তিনি। তা না হলে ৪০ বছর বয়সেও বল হাতে নিতেন না বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। আবার সময়টাও মাশরাফির পক্ষে নয়। সবমিলিয়ে নতুন এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে সাবেক এই অধিনায়ককে।
পথরেখা/আসো