পথরেখা অনলাইন : ৪ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বজয় করেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এবার সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ চারেও উঠতে পারলেন না বাংলাদেশের যুবারা। বেনোনিতে ৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের কাছে হেরেই আকবর আলীদের কীর্তি পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ হারিয়েছে মাহফুজুর রহমানের দল। হেরেছে মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে। সুপার সিক্সের এক নম্বর গ্রুপের বাঁচামরার লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১৫৫ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। দারুণ বোলিং করে ৪টি করে উইকেট নেন পেসার রোহনাত দৌল্লাহ ও অফ স্পিনার শেখ পারভেজ।
৫০ ওভারের ম্যাচ, কিন্তু পাকিস্তানের ইনিংস শেষেই বাংলাদেশের জন্য যেটি হয়ে যায় ৩৮.১ ওভারের। সেমিফাইনালে উঠতে ১৫৬ রানের লক্ষ্যটা যে ৩৮.১ ওভারে ছুঁতে হতো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে। তাহলেই পাকিস্তানকে টপকে ভারতের পর গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চারে উঠে যেতে বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না! ৩৫.৫ ওভারে ১৫০ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের যুবারা হেরেছেন ৫ রানে। আর এই জয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠা পাকিস্তান শেষ চারে খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অন্য সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
রান তাড়ার শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ১৫ বলেই দলকে ২৬ রান এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার আশিকুর রহমান ও জিশান আলম। পাকিস্তানি পেসার উবায়েদ শাহর একটু লাফিয়ে ওঠা বলটা জিশানের ব্যাটে চুমু খেয়ে উইকেটকিপার সাদ বেগের গ্লাভসে জমা হতেই ধসের সূচনা। দুই বল আগেই আরেকবার উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলেও বেঁচে গিয়েছিলেন জিশান। তাঁর ব্যাটের কানায় লাগলেও উইকেটকিপার ও স্লিপ ফিল্ডারের মাঝ দিয়ে বাউন্ডারি দিয়ে সীমানাছাড়া হয় বল। পরের বলেই অবশ্য কাভার দিয়ে চোখজুড়ানো এক চার পেয়ে গিয়েছিলেন ১২ বলে ১৯ রান করা জিশান।
জিশানকে ফেরানো উবায়েদই নিজের পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন আরেক ওপেনার আশিকুর রহমানকে। ১১ বলে ৪ রান করা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানও ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটকিপারকে। পাকিস্তানের উইকেটকিপার সাদের গ্লাভসবন্দী হয়ে ফিরেছেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ২৯ বলে ২০ রান করার পর তিনে নামা ব্যাটসম্যান আরেক পেসার আলী রাজার দুর্দান্ত এক বলে ক্যাচ তুলতে বাধ্য হন।
দলকে ৪৭ রানে রেখে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রিজওয়ান ফেরার পরও রানের গতি কমেনি বাংলাদেশের যুবাদের। চতুর্থ উইকেটে ৩৩ বলে ২৯ রান যোগ করেন আরিফুল ইসলাম ও আহরার আমিন। ১৬তম ওভারে নাসিম শাহর সহোদর উবায়েদের তৃতীয় শিকার হওয়া আহরার ২৩ বলে করেন ১১ রান। স্লিপে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন হারুন আরশাদ। পরের ওভারে রাজার বলে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন আরিফুল (২০ বলে ১৪)। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দাঁড়ানো শামিল হুসেন বাঁ পাশে ঝাঁপিয়ে স্তব্ধ করে দেন গ্যালারিতে উপস্থিত বাংলাদেশের সমর্থকদের।
৫ বল ও ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ষষ্ঠ উইকেট হারায় ২০তম ওভারে। উবায়েদের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন শেখ পারভেজ। ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে সেমিফাইনালে স্বপ্ন তখন ধূসরপ্রায়। শিহাব জেমসকে নিয়ে সেই স্বপ্নেই এরপর রং লাগানোর কাজ শুরু করেছিলেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। সপ্তম উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন দুজন। ২৯তম ওভারের প্রথম বলটায় যখন সহজ ক্যাচ তুলেও উবায়েদের সৌজন্যে বেঁচে গেলেন শিহাব, মনে হচ্ছিল নাটক শেষে দিনটা বাংলাদেশের যুবাদেরই হচ্ছে! কিন্তু ২৪ রানে জীবন পাওয়া শিহাব আর ২টি রান যোগ করেই সেই উবায়েদের বলেই সাদের চতুর্থ শিকার হলেন। আর নিজের শেষ ওভারে উবায়েদ পেয়ে গেলেন পঞ্চম উইকেটের দেখা। ৫ ম্যাচে ১৭ উইকেট নেওয়া নাসিম ভাইদের ছোটজনের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপে বেশি উইকেট পেয়েছেন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি পেসার কেওয়েনা মাফাকা (১৮)।
শিহাব ফেরার ৪ বল পর বিদায় অধিনায়ক মাহফুজুরেরও। রাজার বলে সাদ বেগের পঞ্চম শিকার হওয়া মাহফুজুর ফিরেছেন ১৩ রানে। পরের ওভারে রানআউট ইকবাল হোসেন। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান মারুফ মৃধাকে নিয়ে এরপর রোহনাত দৌল্লাহ স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ৩৬তম ওভারে মোহাম্মদ জিশান মারুফকে বোল্ড করতেই স্বপ্নের সমাধি। রোহনাত অপরাজিত ছিলেন ২১ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৪০.৪ ওভারে ১৫৫ (আরাফাত ৩৪, শাহজাইব ২৬; রোহনাত ৪/২৪, পারভেজ ৪/২৪)।
বাংলাদেশ : ৩৫.৫ ওভারে ১৫০ (শিহাব ২৬, রোহনাত ২১*, রিজওয়ান ২০; উবায়েদ ৫/৪৪, রাজা ৩/৪৪)।
ফল : পাকিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দল ৫ রানে জয়ী।
পথরেখা/আসো