পথরেখা অনলাইন : দেশের ক্রিকেটে একমাত্র ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে হতাশা কম নয়। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও একটি কাঠামোর উপর দাড়াতে পারেনি, হয়নি স্থায়ী কোন দলও। মাঠের চেয়ে বাইরের ঘটনায় বেশি করে আলোচিত হয়েছে। যে ধারা চলমান আসরেও অব্যহত রয়েছে। এবার ঢাকা পর্ব শেষ হয়ে সিলেট পর্ব শেষে আবারও ঢাকা পর্বের অপেক্ষা। মাঠের বাইরের মরিচা ধরা অবস্থা যেন জাতীয় দল ও বাইরের ক্রিকেটারদের মধ্যে স্থায়ী রুপ নিতে যাচ্ছে। বিশেষত পারফরম্যান্স তুলনায় বিদেশিদের সাথে যোজন যোজন দুরত্বে পিছিয়ে রয়েছে এই আসর। সিলেট পর্ব বিদেশীতে রঙিন হয়ে আছে। বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরুর আগে নতুন করে যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিদেশী ক্রিকেটার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তাঁবুতে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ব্রাউন। এক দিন আগেই চট্টগ্রাম দলে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ হাসনাইন ও টম ব্রুস। পারিবারিক কারণের কথা বলে দুবাই গিয়েছিলেন বরিশালের হয়ে খেলা শোয়েব মালিক। ফেরার কথা না থাকলেও ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে এসে দলের হয়ে খেললেন এবং দলকে জেতালেন।
যদিও এর আগেই দলে ভিড়িয়েছে পাকিস্তানের আরেক ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদকে। এ ছাড়া পাকিস্তানের ২৩ বছর বয়সী পেসার আকিফ জাভেদকেও নিজেদের দলে টেনেছে বরিশাল। খুলনা দলে যোগ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক দাসুন শানাকা ও পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তবে ব্যাটে-বলে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয়রা। প্রচন্ড চাপের মুখে অসাধারণ সব ইনিংস খেলার রেকর্ডস রয়েছে সাকিব আল হাসানের। একাই বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। অথচ চোখের সমস্যায় বিপিএলে নিয়মিত ব্যাটিং করছেন না। বিপিএলের চলতি আসরে টাইগার অধিনায়ক খেলছেন রংপুর রাইডার্সের পক্ষে। দুই ধাপ শেষে সাবেক চ্যাম্পিয়ন রংপুর ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে রান রেটে সবার ওপরে অবস্থান করছে। অথচ সাকিব খেলেছেন পাঁচ ম্যাচ। ব্যাটিং করেছেন ৩ ইনিংসে। কিন্তু দুই অঙ্কের কোনো স্কোর করতে পারেননি এখনো।
তবে চোখেঁর সমস্যায় দেশসেরা ক্রিকেটার ব্যাটিং করতে না পারলেও বিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাপট লক্ষণীয়। ব্যাট এবং বল হাতে সেরা পাঁচে স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাপট অনেক। শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে তিনজন স্থানীয়। ৬ ম্যাচে ২২৯ রান করে সবার ওপরে মুশফিকুর রহিম। একই অবস্থা বোলিংয়েও। শীর্ষ পাঁচ বোলারের তিনজনই স্থানীয়। ১০টি করে উইকেট পেয়েছেন তিন বোলার, শেখ মেহেদি হাসান, শরীফুল ইসলাম ও এনগ্রাভা। এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে আসর। ২০ ওভারের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিপিএল ঘিরে পরিকল্পনা করেছে বিসিবি। উইকেটগুলোতে যেন ব্যাটাররা রান করতে পারেন, সেজন্য স্পোর্টিং উইকেট বানানো হয়েছে। যদিও কুয়াশার দাপটে এখনো বড় কোনো স্কোরের দেখা মেলেনি। আসরের এখনো বাকি দুই ধাপ। আগের দুই ধাপের কোনো ম্যাচে দুইশ ঊর্ধŸ স্কোর হয়নি। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৯৩ রান করে চট্টগ্রাম। সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড খুলনা টাইগার্সের।
বরিশালের ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৮৭ রান টপকে যায় খুলনা ১৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে। সবচেয়ে কম স্কোর করেছে চট্টগ্রাম। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১৬.৩ ওভারে ৭২ রানে অলআউট হয়েছে চট্টগ্রাম। কোনো ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা মেলেনি। হাফসেঞ্চুরি ২৩টি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর চট্টগ্রামের শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার আভিস্কা ফার্নান্দোর। বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আভিস্কা ৫০ বলে ৫ চার ও ৭ ছক্কায়। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর সিলেটের জাকির হাসানের। তিনি ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ৪৩ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায়। মুশফিক হাফসেঞ্চুরি করেছেন ২টি। তিনি ৬ ম্যাচে ৪৫.৮০ গড়ে রান করেছেন ২২৯। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৬৮ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩০.১১। রংপুরের পাকিস্তানি ক্রিকেটার বাবর আজম ৫ ম্যাচে দুই হাফসেঞ্চুরিতে রান করেছেন ২০৪। সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন তিনি। ৫১ গড় এবং স্ট্রাইক রেট ১১৫.৯০। জাকির ৭ ম্যাচে ৩২.১৬ গড়ে রান করেছেন ১৯৩।
আভিস্কার স্ট্রাইক রেট ১৫৯.৬৩। ৬ ম্যাচে ৩৪.৮০ গড়ে রান করেছেন ১৭৪। তামিম ইকবাল কোনো হাফসেঞ্চুরি ছাড়াই রান করেছেন ৬ ম্যাচে ১৪৯। এ ছাড়া টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে ইমরুল কায়েস ৬ ম্যাচে ১৪৬, এনামুল হক বিজয় ৬ ম্যাচে ১৪২, শাহাদাত হোসেন দীপু ৬ ম্যাচে ১৩৮, তানজিদ তামিম ৬ ম্যাচে ১৩২, তৌহিদ হৃদয় ৫ ম্যাচে ১২৬, সৌম্য সরকার ৬ ম্যাচে ১২৩, নুরুল হাসান সোহান ৬ ম্যাচে ১১৯ রান করেন। সাকিব ৫ ম্যাচে রান করেছেন ৪। বোলিংয়ে শীর্ষ পাঁচ বোলারের তিনজন পেসার। একজন স্থানীয় এবং দুজন বিদেশি। রংপুরের অফ স্পিনার শেখ মেহেদি ওভারপ্রতি ৫.৮৩ স্ট্রাইক রেটে উইকেট নিয়েছেন ১০টি। শরীফুল ১০ উইকেট নিয়েছেন ৮.৩৬ স্ট্রাইক রেটে। কুমিল্লার বাঁ হাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ৫ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। এনগ্রাভা ১০ উইকেট নিয়েছেন ৬ ম্যাচে। পেসার বিলাল খান ৯ উইকেট নিয়েছেন ৬ ম্যাচে। স্থানীয় বোলারদের মধ্যে হাসান মাহমুদ ৬ ম্যাচে ৭, মুস্তাফিজুর রহমান ৫ ম্যাচে ৭, খালেদ আহমেদ ৫ ম্যাচে ৭, সাকিব ৫ ম্যাচে ৬ এবং আল আমিন ৬ ম্যাচে উইকেট নেন ৬টি। সবমিলিয়ে পারফরম্যান্স বেশ হতাশই বলতে হবে।
পথরেখা/আসো