পথরেখা অনলাইন : আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল লড়াই মানেই বিশেষ কিছু, সেটি জাতীয় দল কিংবা বয়সভিত্তিক যে দলেই হোক না কেন। ফুটবলের মোহনীয় লড়াই দেখার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকে। এবার এমন এক ম্যাচে দেশ দুটি তেইশ না পেরুনো ছেলেরা অংশ নিয়েছে সেখানে জড়িত ছিল প্যারিস অলিম্পিকে খেলার বিষয়টি। এবারও জয় হয়েছে আলবিসেলেস্তাদের। ১-০ গোলের জয় দিয়ে ব্রাজিলকে পরাজিত করে ২০২৪ অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে লিওনেল মেসির উত্তরসুরীরা। অথচ প্রথম দুই ম্যাচ ড্র করে অলিম্পিকের টিকিট কাটা বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার জন্য। ২০২৪ অলিম্পিক বাছাইয়ের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের চূড়ান্ত পর্বে রবিবার রাতে ব্রাজিলের বিপক্ষে তাই জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না আর্জেন্টিনার। সেই ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। কারাকাসের এস্তাদিও নেসিওনাল ব্রিজিদো ইরিয়ার্তে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল ও আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩ দল। অলিম্পিক বাছাইয়ের চূড়ান্তপর্বের এই ম্যাচে অবশ্য দাপট বেশি ছিল আর্জেন্টিনার।
ম্যাচে ৬১ শতাংশ বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের লক্ষ্য বরাবর আর্জেন্টিনা নেয় ৩ শট। অন্যদিকে ব্রাজিল ৩৯ শতাংশ বল দখলে রেখে ৩ শট করে প্রতিপক্ষের লক্ষ্য বরাবর। ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য ড্র। ৭৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোল করেন আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার লুসিয়ানো গুন্দু। গুন্দুকে অ্যাসিস্ট করেন দলটির মিডফিল্ডার ভ্যালেস্তিন বার্সো। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ১-০ গোলের জয় পায় চিরপ্রতিদ্বন্ধী ব্রাজিলের বিপক্ষে। তাতেই ২০১৬ ও ২০২০ অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী ব্রাজিলের এবারের পথচলা থেমে যায় বাছাইয়ের চূড়ান্তপর্বে। এস্তাদিও নেসিওনাল ব্রিজিদো ইরিয়ার্তে স্টেডিয়ামে অন্য ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে প্যারাগুয়ে অনূর্ধ্ব-২৩ দল ও ভেনেজুয়েলা অনূর্ধ্ব-২৩ দল। এই ম্যাচে প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য ড্র। ৪৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন প্যারাগুয়ের মিডফিল্ডার দিয়েগো গোমেজ। এরপর প্যারাগুয়ের দ্বিতীয় গোল ৭৫ মিনিটে করেন দলটির স্ট্রাইকার মার্সেলো পেরেজ। শেষ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পায় প্যারাগুয়ে। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের অলিম্পিক বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্ব শেষ হয়েছে এদিন।
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, ভেনেজুয়েলা প্রত্যেকেই তিনটি করে ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে প্যারাগুয়ে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আর্জেন্টিনা। তিন ও চারে থাকা ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলার পয়েন্ট ৩ ও ১। ব্রাজিল তিন ম্যাচের মধ্যে এক ম্যাচ জিতেছে ও দুই ম্যাচ হেরেছে। সেরা দুইয়ে থাকায় প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনা নিশ্চিত করেছে প্যারিস অলিম্পিক। অলিম্পিকের টিকিট পেতে ব্রাজিলের বিপক্ষে যেখানে জিততেই হতো আর্জেন্টিনাকে সেখানে ব্রাজিলের জন্য সমীকরণটা কিছুটা সহজ ছিল। ড্র হলেই চলত সেলেসাওদের। অলিম্পিক বাছাইয়ের কার্যত নকআউটে রূপ নেওয়া ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরাই। অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ার পর আকাশী-সাদাদের অলিম্পিক নিশ্চিত হওয়ার পর পুরনো একটি প্রশ্ন আবারও উঠছে, লিওনেল মেসি কি খেলবেন প্যারিসে? খুব বেশিদিন আগের কথা না। বছর তিনেক আগেও লিওনেল মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের একমাত্র অর্জন ছিল অলিম্পিক স্বর্ণপদক। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে এসেছিল সেই সাফল্য।
সেবার আর্জেন্টিনার সাফল্যের বড় কারিগর ছিলেন মেসি ও অ্যানহেল ডি মারিয়া। মেসির বাড়ানো পাসে বেইজিংয়ে ফাইনালের একমাত্র গোল করেছিলেন ডি মারিয়া। ১৬ বছর পর সেই উত্থানের মঞ্চেই আরও একবার দেখা যেতে পারে মেসি-ডি মারিয়া জুটিকে। এই আভাস আগেই দিয়েছিলেন তাদেরই একসময়ের সতীর্থ হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো। ২০০৮ এর সেই আসরে মাশ্চেরানো নিজেও ছিলেন। সেবার তিনি ছিলেন খেলোয়াড়। এখন কোচিংয়ে নাম লিখিয়েছেন আর্জেন্টিনার অলিম্পিক দলের কোচ ও সাবেক এই মিডফিল্ডার জানালেন, মেসির জন্য অলিম্পিকে খেলার দরজা খোলা রয়েছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়ের পর তিনি বলেন, ‘মেসির সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব কেমন তা ইতোমধ্যে সবাই জানে। তার মতো খেলোয়াড় আমাদের সঙ্গী হওয়ার জন্য দরজা খোলা রয়েছে। অবশ্যই এটা তার ওপর এবং তার প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে।’ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দুই দলেরই একসঙ্গে প্যারিস অলিম্পিকে যাওয়া সম্ভব ছিল না। জয় ছাড়া অন্য কোনো সমীকরণ ছিল না দল দুটির সামনে। সেখানে ব্রাজিলকে কাদিয়ে অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে অভিনন্দন জানিয়ে লিওনেল মেসি লিখেছেন, ভামোস। ২০২১ সালে মারাকানায় ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
পথরেখা/আসো