পথরেখা অনলাইন : প্রত্যাশিতভাবেই জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক প্যানেলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে সরিয়ে প্রধান নির্বাচক করা হয়েছে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। সঙ্গে হাবিবুল বাশার সুমনকে সরিয়ে আব্দুর রাজ্জাক রাজের সঙ্গী করা হয়েছে হান্নান সরকারকে। একই সভায় তিন ফরর্ম্যাটের অধিনায়ক করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সে হিসেবে তিন নিবর্চাকের পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে অধিনায়ককে। দ্রুতই যেন পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠল লিপুর ফোন। একটি কল রিসিভ করতেই ওই সময়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে আরও দু-তিনটি কল। সবাইকে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সৌজন্য রক্ষা করছেন লিপু। লিপুর ফোন হঠাৎ অনেক ব্যস্ত হওয়ার একটাই কারণ, তিনি বিসিবির নতুন প্রধান নির্বাচক। যাঁর জায়গায় লিপু এলেন, সেই নান্নু যে আর প্রধান নির্বাচকের পদে থাকছেন না, সেটি তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। বিষয়টি কদিন ধরে ছিল আলোচনায়। কিন্তু আট বছর পর তাঁর জায়গায় কে হচ্ছেন নতুন নির্বাচক প্যানেলের প্রধান, সেটিই ছিল প্রশ্ন। কাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, নতুন নির্বাচক হচ্ছেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
আগের প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন ১১ বছর ধরে নির্বাচক হিসেবে কাজ করা হাবিবুল বাশার সুমনও। সমৃদ্ধ খেলোয়াড়ি জীবন, ক্ষুরধার ক্রিকেট বিশ্লেষণের ক্ষমতা, ব্যক্তিত্ব, সব মিলিয়ে লিপু দেশের ক্রিকেটে গ্রহণযোগ্য এক নাম। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এর আগে পালন করেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব। হয়েছেন বোর্ড পরিচালক। সামলেছেন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের মতো প্রধানের দায়িত্ব। ছিলেন বিপিএলের শুরুর দিকে গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধানও। সেই লিপু আবার ফিরছেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক হয়ে। লিপুকে অবশ্য দায়িত্ব নিতে রাজি করাতে যথেষ্ট বেগই পেতে হয়েছে বিসিবিকে। লিপু নিজেও বলেছেন, তিনি শুরুতে রাজি ছিলেন না। অতঃপর রাজি হয়েছেন। প্রধান নির্বাচক হওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লিপু বললেন, চ্যালেঞ্জটা তিনি নিচ্ছেন, যখন বিসিবি থেকে প্রস্তাব দিল, একটু তো তাদের কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। যখন আর এড়াতে পারিনি, তখন নিতেই হয়েছে। চ্যালেঞ্জটা কীভাবে নিতে পারি।
নিজের যে গ্রহণযোগ্যতা আর ভাবমূর্তি, কঠিন এক দায়িত্বই লিপু নিয়েছেন। বিসিবির এই থ্যাংকলেস চাকরিতে দল ভালো করলে প্রশংসা জোটে কম, খারাপ করলেই সমালোচনার তির ছুটে যায় নির্বাচক প্যানেলের দিকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে ব্যঙ্গবিদ্রুপ আর বিষাক্ত ট্রল তো আছেই। আরও একটি চ্যালেঞ্জ নতুন নির্বাচক কমিটির, কর্তৃত্বপরায়ণ প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে রসায়নটা জমিয়ে তুলতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ দল নির্বাচনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার কাজটাও লিপুকে করতে হবে। লিপুর সঙ্গে নির্বাচক প্যানেলে নতুন যুক্ত হওয়া হান্নান সরকার এসব চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। হান্নান গত ৮ বছর কাজ করেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ দল নির্বাচনে তিনি যুক্ত ছিলেন। দুটি দলই পেয়েছে সাফল্য। হান্নান মনে করেন, এত দিনের কাজের পুরস্কার হিসেবে সিনিয়র নির্বাচক হয়েছেন তিনি, ভালো কাজ করলে পুরস্কার তো আশা করতেই পারি।
৮ বছর ৮ মাস দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নির্বাচক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাকে কাজে লাগাতে চাইছেন সাবেক এই ওপেনার। জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, এ মাসে শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল করবে আগের নির্বাচক প্যানেলই, তাদের মেয়াদ শেষ হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি। নতুন নির্বাচকেরা কাজ শুরু করবেন ১ মার্চ থেকে। এদিকে তিন সংস্করণে বাংলাদেশের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন শান্ত। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর বিদায় নিয়ে গুঞ্জন, সাকিব আল হাসান নেতৃত্বে থাকবেন নাকি শান্তর কাঁধে দায়িত্ব উঠবে, তামিম ইকবালের জাতীয় দলে ফেরা না ফেরার আলোচনার মধ্যে শুরু হয় বোর্ড সভা। সেখানে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমে সাকিব জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করতে চান না। অবশ্য সে বিষয়ে ৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার বিসিবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু জানাননি। তবে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর তাঁকে আর নেতৃত্বে দেখা যায়নি। খেলেননি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও। সাকিবের পরিবর্তে কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। এরপর থেকে এই বাঁহাতি ব্যাটারকে দলের ভবিষ্যতের দলনেতা হিসেবে চিন্তাভাবনা শুরু করে বিসিবি। শেষ পর্যন্ত সেটিই বাস্তবায়ন হলো বোর্ড সভায়। সাকিবের পরিবর্তে তিন সংস্করণের জন্য বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক হলেন শান্ত। শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছেন অধিনায়ক শান্ত।
পথরেখা/আসো