পথরেখা অনলাইন : নানা কারণে মাঠের চেয়ে বাইরের ঘটনা নিয়ে বেশি আলোচনায় থাকে দেশের ক্রিকেটের একমাত্র ফ্রাঞ্চাইজি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএল। এই আসরে বিদেশি খেলোয়াড়দের অসংযত আচরণের কারণে ক্ষুন্ন হচ্ছে টুর্নামেন্টের সুনাম। সময়ের হিসেবে এক যুগ পার হলেও নানা বিতর্ক যেন এর পিছুই ছাড়ছে না। চলতি আসরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন দুই বিদেশি ক্রিকেটার। সর্বশেষ গুঞ্জন ছড়ায় রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নূরুল হাসান সোহান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারের রুমে ঢুকে পড়েছিলেন। এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং শেষ পর্যন্ত গড়ায় হাতাহাতিতে। যা শুক্রবার দেশের একটি শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশও পায়। যদিও এই ঘটনার ব্যাখ্যায় রংপুরের ম্যানেজার শাহনিয়ান তানিন তেমন কিছু নয় বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবী করেছেন, ‘আসলে এটি সংবাদ পত্রে আসার মতো কোনও ঘটনা নয়। দুই ক্রিকেটারের মধ্যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। যা সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান হয়ে গেছে। একটা দল এখন শীর্ষে, তারা এত ভালো খেলছে ঠিক সেই সময় এমন আলোচনা ঠিক নয়। সংবাদপত্রে যা প্রকাশ হয়েছে তা সঠিক নয়।’
সে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে টিম হোটেলের এমন গোপন ঘটনা বাইরে কীভাবে প্রকাশ পেলো! জানা গেছে বিসিবি’র কয়েকটি বিভাগের দায়িত্বে অবহেলাতেই এমন সংবাদ বাইরে এসেছে। যা চলতি টুর্নামেন্টের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। এর আগে অন্য আরেক ঘটনায় সিলেট স্ট্রাইকার্সের ভিনদেশি ক্রিকেটার সামিত প্যাটেল সংবাদকর্মীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ইল্যান্ডের এ অলরাউন্ডার। পরে সিলেট দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়। এই ঘটনায় সামিত প্যাটেল দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে দলের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে আসলেই কি নূরুল হাসান হোসান কুমিল্লার সেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারের রুমে ঢুকে পড়েছিলেন! তার ভুলেই কি মারামারি বা হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটেছে? কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে এই ঘটনা ছিলো অনাকাঙ্খিত। সোহান ভুল করে ঢুকে পড়েছিলেন সেই ক্রিকেটারের রুমে। তবে ঘটনার জন্ম নিয়েছে সেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার বিনা কারণেই সোহানকে বাজে উক্তি করায়। মূলত সেই ক্রিকেটারই সোহানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তর্কে।
তবে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে বলে যে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে এসেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে রংপুরের পক্ষ থেকে। শাহনিয়ান জানিয়েছেন, ‘হাতাহাতির মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি।’ তাদেরও প্রশ্ন কিভাবে টিম হোটেলের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনা বাইরে প্রকাশ পেলো। অন্যদিকে সামিত প্যাটেলের ঘটনায় সিলেট স্ট্রাইকার্সের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ‘জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকালে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনুশীলন চলাকালে একজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে ইন্টারভিউ প্রদান পরবর্তী সময়ে দলের বিদেশি ক্রিকেটার সামিত প্যাটেলের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যানেজার নাফিস ইকাবল ও দলের মিডিয়া/কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিনহাজ উদ্দিন খান বিষয়টি সমাধানের পদক্ষেপ নেন। তারা উভয়ে ক্রিকেটার সামিত প্যাটেলের সঙ্গে কথা বলেন। সামিত তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেই দিকে সজাগ থাকবেন বলে প্রতিজ্ঞাও করেন।’ জানা গেছে এখানেও মূলত ঘটনাটি ঘটে এই বিদেশি ক্রিকেটারের ভুলেই।
মূলত এক সংবাদকর্মীকে তার করা প্রশ্নের উত্তরের রেকর্ডটি ডিলিট করে দিতে বলেন সামিত প্যাটেল। সেই সময় তিনি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন যা থেকে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উত্তেজনা। বিপিএলের দশম আসরে প্রায় শেষ দিকে চলে এসেছে। চট্টগ্রাম পর্ব শেষ হলেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে কোন চার দল খেলছে প্লে-অফ পর্বে। তার আগে এমন বিতর্ক টুর্নামেন্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিদেশি ক্রিকেটাররা অতিরিক্ত মর্যাদা ও স্বাধীনতা পেয়ে খেই হারাচ্ছেন। নানা সময়ে তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছোট করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে! বিসিবি’র একটি সূত্রে জানা গেছে এরই মধ্যে বিপিএল গভর্নি কাউন্সিল ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে যা হচ্ছে সেটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দিচ্ছে। এমনিতেই নানা কারণেই দিনে দিনে মানহীন আসরে পরিণত হচ্ছে এটি। এখন যদি ক্রিকেটারদের আচরণের পাশাপাশি লাগামহীন কথাবার্তা বলতে থাকে তাহলে আরও বেশি বিতের্কর মুখে পড়বে। এই বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী।
পথরেখা/আসো