পথরেখা অনলাইন : দীর্ঘদিন জাতীয় দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার পর এবার নারী বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন দায়িত্ব হিসেবে নারী বিভাগের প্রধান করা হয়েছে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ককে। বিসিবির নারী উইং থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত কর হয়েছে। নির্বাচক হিসেবে নতুন চুক্তি না করা হলেও মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও সুমনকে অন্য কোনো পদে রাখা হবে বলে আগেই জানান বিসিবি সভাপতি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। দ্রুত জানা যাবে নান্নুর নতুন দায়িত্ব সম্পর্কেও। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন। বিসিবি কার্যালয়ে তাঁকে মঙ্গলবার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিসিবি পরিচালক ও উইমেন্স উইং কমিটির চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার লম্বা সময় বিসিবির জ্যেষ্ঠ নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিসিবির সবশেষ বোর্ড সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বদল আসে নির্বাচক প্যানেলে।
এর আগে নান্নুর জায়গায় প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। অন্যদিকে সুমনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে আরেক জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় হান্নান সরকারকে। মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমনের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি বিসিবি। আগামী ১ মার্চ থেকে গাজী আশরাফ ও হান্নান সরকার তাদের নিজ নিজ পদে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন। বিসিবির সভা শেষে ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যখন নান্নু আর বাশারের বদলে যথাক্রমে লিপু ও হান্নানের নাম ঘোষণা করেন, সেদিনই আরও একটি ঘোষণা আসে বিসিবি প্রধানের মুখ থেকে। পাপন তখনই জানিয়ে দেন, নির্বাচক পদে না থাকলেও নান্নু ও সুমন বিসিবিতেই থাকবেন।
এখন এই দুজনকে বোর্ডের কোনো না কোনো পদে বসানো হবে বলে ধারনা করা হয়েছিল। বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমের সামনে যে কথাটি সরাসরি মুখ ফুটে বলেন নি তা হলো, প্রধান নির্বাচক হিসেবে নান্নু আর নির্বাচক হিসেবে সুমন যে বেতন-ভাতা পেতেন তা বহাল রেখেই তাদেরকে বোর্ডের কোনো না কোনো পদে বসানো হবে। জাতীয় দলের এই সাবেক দুই অধিনায়ক যেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আসলে নান্নু আর সুমনকে বোর্ডে রেখে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। বিসিবি প্রধানের সেই ঘোষণার পর মুহূর্ত থেকে অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে কোথায় রাখা হবে নান্নু ও সুমনকে?
নান্নু সাত বছর জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন। সর্বশেষ বেতন কাঠামোতে তার মাসিক বেতন ছিল দেড় লাখ টাকার মতো। আর নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনও পেয়েছেন সোয়া লাখ টাকার মতো। পরবর্তীতে তারা কে কি পদে কাজ করবেন? বোর্ডে কি এমন পদ আছে, যেখানে তারা ওই বেতনে কাজ করতে পারবেন? তাদের কাজের ধরনই কি হবে? তারা কি কোচিং করাবেন? নাকি বোর্ডের কোন উচ্চপদে আসীন হবেন? তা নিয়ে ক্রিকেট অনুরাগী মহলে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে জানা গেল, নান্নু ও সুমনের জন্য দুটি ভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি করতে যাচ্ছে বিসিবি। বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটিতে কাজ করতে দেখা যাবে। আর হাবিবুল বাশার সুমনের কাজের সম্ভাব্য ক্ষেত্র হবে নারী ক্রিকেট উইং। তবে তাদের কার কী পদ হবে? আসলে তারা ওই দুই বিভাগে কী কাজ করবেন?
যদিও এখনো বিষয়টি ঠিক হয়নি। কারণ, আসলে তাদের পদই এখনো চুড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে, নান্নু ও সুমনের জন্য টুর্নামেন্ট কমিটি ও ওমেন্স ক্রিকেট উইংয়ে দুটি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই পদ চুড়ান্ত হলেই দুইজনের কাজের ধরন ও বেতন ভাতাও জানা যাবে। নির্বাচক হিসেবে কাজ করার পর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সম্প্রতি অনেকটা সময় কাটিয়ে গেলেন হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) বিভাগে। এতে গুঞ্জন, প্রধান নির্বাচকের পদ ছাড়ার পর নান্নু কি তবে এইচপিতে যোগ দিচ্ছেন? প্রশ্নটা শুনে নান্নু হেসে তিনি বললেন, ‘দেখি, সময়ই বলে দেবে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কোন দায়িত্ব পাচ্ছি। যেটাই করি এখন কোচিং করাব না। বিসিবি জানতে চেয়েছে আমার কমফোর্ট জোন কোথায়। সাত দিন সময় নিয়ে জানাব। বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেব।’
জানা গেছে, নান্নু হেড অব প্রোগ্রামে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বা অ্যাডভাইজর হিসেবে বোর্ডে তাঁর নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন। প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে গিয়ে তিনি খুব একটা হতাশও নন। বরং নতুন কোনো দায়িত্ব পেতে বেশ আগ্রহী। নান্নুর মতো সাবেক হওয়া যাওয়া আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকেও বিসিবি তাদের কোনো একটি বিভাগে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। নারী বিভাগের দায়িত্ব পেয়ে সেটাই প্রমাণ হলো। যদিও সুমনের আগ্রহ এইচপিতে থাকলেও বিসিবি যেখানে কাজে লাগাতে চাইবে, তাতে খুব বেশি আপত্তি তাঁর নেই।
পথরেখা/আসো