ইতিহাস ঘাটলে প্রাতঃস্মরণীয় দাপুটে সম্রাটদের মৃত্যু কতই না অস্বাভাবিক ঠেকে। তুঘলক বংশের দাপুটে বাদশাহ মোহাম্মদ বিন তুঘলক বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘটাতেন; তা ঐ সময়ের জন্য গ্রহণযোগ্য ছিল না। অনেকেই পিছনে ‘পাগলা তুঘলক’ বলত। ১৩৫১ তে অস্বাভাবিকভাবে মারা যান। একদিন সিন্ধু নদীতে এক মাছ ধরা পরল যে মাছ আগে কেউ দেখেই নাই। তুঘলক বললেন- এ মাছ আমি খাব। সভাসদরা বললেন এ মাছ বিষাক্ত হতে পারে, খাবেন না। ওই যে পাগলা স্বভাব, খাবেই। খেলেন এবং মাছের বিষে মারা গেলেন। নিন্দুকেরা বলেন, এ মাছ যখন কেউ খাইই নাই; তাই রান্নার সময় বিষ দিয়ে দাও। আর প্রচার কর যে মাছের বিষেই তুঘলক মারা গেছেন।
বিষে মারা যান নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। সেন্ট হেলেনা দ্বীপে তাকে বন্দী করে রেখেও বৃটিশরা নিশ্চিত ছিলনা। খাবার সাথে আর্সেনিক বিষ মিশিয়ে দিত। অত বড় বীরপেটের যন্ত্রণায় ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতেন। ১৮২১ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে শেষ হয় নেপোলিয়নের জীবন।
আলেক্সজান্ডার ৩২ বছর বয়সে মারা যান। ভারত বর্ষ জয় করে মেসডনিয়াতে ফেরত যাবার পর জ্বর হয়। ধর্ম রীতি মেনে প্রতিদিন খুব ভোরে নদীতে গোসল করে এসে এক কোপে একটি ষাড়ের মুন্ড কাটার সাথেই সে দিনের কর্মকাণ্ড শুরু হত। আলেক্সজান্ডারের জ্বর থাকা সত্বেও কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল শেষ করে প্রতি দিন ষাড় কাটতেন। জ্বর প্রচণ্ড বেড়ে যাবার পরও ঠাণ্ডা পানির নদীতে গোসল করতে হত। জ্বর এত বাড়ল যে ঠিক মতন উঠে দাঁড়ান কষ্টের। কিন্তু তিনি সম্রাট সবাই তার কাছেই দিন শুরুর কর্মকাণ্ড দেখতে চায়। জ্বরের তৃতীয় দিন নদীতে গোসল করে ষাড় কাটার পর সেই যে শুলেন আর উঠলেন না। অনেকে বলেন ভারত থেকে ফেরত যেতে শরীরে ম্যালেরিয়া নিয়ে গিয়ে ছিলেন।
ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি মাত্র ১৭ জন ঘোড় সওয়ার নিয়ে বংগ জয় করেন। বংগ জয়ের পর তিনি নেপাল জয় করতে গিয়ে পাহাড় বরফ বৈরি আবহাওয়া সাথে প্রচণ্ড জ্বরে কাহিল হয়ে ফেরত আসেন। জ্বরে আচ্ছন্ন এই বীরকে তারই অনুগত আলিবর্দি খান বালিশ চাপা দিয়ে দম বন্ধ করে হত্যা করে। যিনি হত্যার শিকার তিনি জানেনই না তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার জন্য কতই না পরিকল্পনা হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুবর রহমানের মৃত্যু। উনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আর তাকে যারা গার্ড দিবে তারা থাকছেন গুলিস্তানের কাছে বংগ ভবনে। তিনি গুলির আওয়াজ পেয়ে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে জানালেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি তিনি জাতির পিতাকে ওয়াল টপকে পাশের বাসাতে আশ্রয় নিতে বলেন। জানিনা এই কথা শুনে কি বলেছিলেন তিনি। ভোর রাত তিনটা, রাস্তা ঘাট শুনসান ফাঁকা, ক্যান্টনমেন্ট থেকে গাড়ি মুভ করলে ১৫ মিনিটের মধ্যে জাতির পিতার বাসাতে পৌঁছান যেত। কিন্তু কোন আর্মি গাড়ি মুভ করে নাই। কর্নেল জামিল, বংগভবন মানে সেই গুলিস্তান থেকে আসলেন- একা। তার গার্ড রেজিমেন্টের সৈন্যরা ছিলনা। জাতির পিতার মৃত্যুর জন্য জেনারেল শফিউল্লাহর নিষ্ক্রীয়তা চোখে পরবেই। জেনারেল জিয়া এবং শফিউল্লাহ কোর্সমেট। তবে জিয়া সিনিয়র ইন নাম্বার ছিলেন।
দুঃখজনক হল জাতির পিতা মারা গেলেন। জেনারেল জিয়া মারলেন। এত এত ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ, দেশ বিদেশ থেকে নিত্যদিন প্রশিক্ষণ পাওয়া এনারা কেউ কোন আগাম ইনফরমেশন দিতে পারল না। এ ভারতবর্ষ দেখে আলেক্সান্ডার তার সেনাপতি সেলুকাসকে বলেছিল, কি বিচিত্র এই দেশ। খৃষ্ট পূর্ব তিন শত বছর আগে বংগ নিয়ে যে কথা বলে ছিল সেই বিচিত্র পরিবেশ রয়েই গেছে আর অন্তহীন চলতে ই থাকবে।
লেখক : কলামিস্ট
পথরেখা/আসো