ওয়ারী ক্লাব আর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ক্রীড়াঙ্গনের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। আমার বাবা মরহুম শামসুদ্দিন চাকলাদার ভিক্টোরিয়ার ফুটবল ও হকি অধিনায়ক ছিলেন। ক্রিকেট খেলতেন ওয়ারী ক্লাবে, ওপেনিং ব্যাট আর উইকেট কিপার ছিলেন । আমাকে বাবাই হকি শিখাতেন। একদিন নিয়ে আসেন ভিক্টোরিয়াতে, নূরু ভাইর হাতে তুলে দেন। মোটামুটি চোখে পরার মতন খেললে এহতেশাম ভাই আমাকে সোনালী ব্যাংকে নিয়ে নেন। মেহামেডান তখনও গুছানো দল নয়। সাদেক ভাই তখন টপ ফর্মে, তার সাথে ইব্রাহীম সাবের, মহসীন, সাব্বির, ইউসুফ মিলে আবাহনী তখন এক দর্শক জয়ী দল আর সোনালী ব্যাংক ও ভালই শক্তিশালী, ছিল টপ মোস্ট দলও।
১৯৭৩/৭৪ সনের কথা। ভিক্টোরিয়ার এক পয়েন্ট দরকার নইলে ‘বি’ ডিভিশনে নেমে যাবে। খেলা রয়েছে ওয়ারীর সাথে। ওয়ারীর সব কিছুই মমিন ভাইর হাতে আর ভিক্টোরিয়ার সব আলমগীর আদেল ভাইর নির্দেশে চলে। তখন বাংলাদেশ হকির এ দুজন হলেন ডেমি-গড। ওয়ারী ক্লাব এক পয়েন্ট ছেড়ে দিয়ে ভিক্টোরিয়াকে বি ডিভিশন থেকে বাঁচাবে এটা ওপেন সিক্রেট।
ওয়ারী ক্লাব, ভিক্টোরিয়া, আজাদ স্পোর্টিং, আজাদ বয়েজ সব ক্লাবগুলো তখন আউটার স্টেডিয়ামের ওয়াল ঘেঁষেই। আমি হাঁটতে হাঁটতে ওয়ারী ক্লাবে গেলাম। খেলার আগে মোনাজাত হয়, তখন ব্রিফিং করা হয় খেলা কি হবে খেলবে। তখন বলে দেয়া হল কোন গোল দেয়া হবে না। আবার গোল খাওয়াও চলবে না। মোনাজাতে দলের ফরওয়ার্ড মনসুর ছিলেন না। খেলার আগে শরীরের উপযুক্ত করার জন্য সরিষার তেল শরীরে মেখে নেন অনেকে। এটা আমিও করি। তবে পায়ের পাতার তলাতে পৃথিবীতে শুধু মনসুরই মনে হয় মাখে। আর এ জন্য মাঠে ধরাম ধরাম আছারও খায়। যাক। মনসুর ইউনিভার্সিটি তে থাকাতে মোনাজাতে ছিলনা তাই ব্রিফিংও শুনে নাই, আবার দলের ফরওয়ার্ড হয়েও একটা গোলও করে পারে নাই।
মাঠের পাশে পাশাপাশি চেয়ারে মমিন ভাই আর আলমগির ভাই বসা। খেলা চলছে, ছাড়া ছাড়া ভাবে, সেকেন্ড হাফেরও শেষ হতে ৩/৪ মিনিট, মনসুর ডির বাইরে বল পেয়ে দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মানে ডিফেন্ডার দুজন আটকানোর কোন প্রচেষ্টা নিলই না। টপ অব দ্য ডি শট এবং গোল। এ গোল মানে ভিক্টরিয়ার বি ডিভিশন নিশ্চিত। দুজন পাশাপাশি থেকে ঝটকা মেরে আলমগীর আদিল ভাই উঠে গন গন করে বের হয়ে গেলেন। মমিন ভাই তার গালাগালির শ্রেষ্ঠ গুলি ছাড়লেন মনসুরের উপর। তারপর প্রথমেই আম্পায়ারদের বললেন ভিক্টোরিয়া শোধ না দেয়া পর্যন্ত শেষ বাঁশি বাজবে না।
২২ জন খেলোয়াড়, দুই আম্পায়ার, কর্তাদের সম্মিলিত চেষ্টায় ভিক্টোরিয়া গোল শোধ করে টিকে রইল প্রথম বিভাগে। খেলা হল খনির মতন, যত খোজা হবে তত মনি মানিক্যসহ হাজার ঘটনা সামনে চলে আসবে।
লেখক : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত
পথরেখা/আসো