পথরেখা অনলাইন : বাংলাদেশের একমাত্র ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসর রয়েছে শেষ পর্যায়ে। শুরুতে না হলেও শেষদিকে বেশ জমজমাট হয়েছে এই আসর। এখন এলিমেনেটরসহ ফাইনাল খেলার অপেক্ষায় রয়েছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমিরা। তবে ঘটনা ঘটলেও এবার যেন শাস্তি-জরিমানা অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে।
২০২৩ বিপিএলে কদিন পরপরই ঘটছিল শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা। ম্যাচ চলার সময়ে খালেদ মাহমুদ সুজন ড্রেসিংরুমে ধূমপান করেছেন, সাকিব আল হাসান বাগ্বিতন্ডায় জড়িয়েছেন আম্পায়ারের সঙ্গে। নাজমুল হোসেন শান্ত-শেখ মেহেদী হাসানের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা হেলমেট ছুঁড়ে ফেলে অশোভন আচরণ করেছেন। ডিআরএস না থাকায় আউট নিয়ে আম্পায়ারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন কুমিল্লা কোচ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। বিসিবি অবশ্য আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তিও দিয়েছে সবাইকে।
পরিসংখ্যান বলছে, গতবার শাস্তির ঘটনা ১০টি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অথচ এবার দেখুন, কাল পর্যন্ত ডিমেরিট পয়েন্ট আর ম্যাচ ফি কেটে নেওয়ার শাস্তি একটিও ঘটেনি। ৪৬ ম্যাচের মধ্যে শেষ হয়েছে ৩৬টি। এ পর্যন্ত কোনো শাস্তি কিংবা ডিমেরিট পয়েন্টের ঘটনা নেই টুর্নামেন্টে। হ্যাঁ, এবারও বিপিএলে যে বিতর্ক নেই, তা নয়। তবে শৃঙ্খলা-ইস্যুতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। এ বিষয়ে বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান এএসএম রকিবুল হাসান পত্রিকাকে বলেছেন, ‘বিপিএলে এবার এখনো কোনো ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়নি কোনো কোচ বা খেলোয়াড়কে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে বসে আলোচনা হয়েছে, খেলোয়াড়-কোচদের নিয়মনীতি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেভাবে ফল পাচ্ছি। এটা দারুণ ব্যাপার। এটা টুর্নামেন্টের জন্য শুভ দিক।’
যদিও আগের বার ম্যাচ অফিশিয়ালরা যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছেন নিয়মভঙ্গকারীদের। পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এবার বিপিএল কাউন্সিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সব নিয়ম জানিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সতর্ক করে দিয়েছে। আউট নিয়ে বিতর্ক এড়াতে শুরু থেকেই আছে উন্নত প্রযুক্তির ডিআরএস। এমনকি স্লো ওভার রেটেরও কোনো ঘটনা নেই। রকিবুল হাসান বললেন, ‘ডিআরএস আছে, ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে পরের বোলার বোলিং শুরু করবে, সবাই নিয়ম মানছে। শাস্তি-জরিমানাও নেই।’ এর মধ্যেও মাঠের বাইরের কিছু বিষয় সামনে এসেছে। টিম হোটেলে কুমিল্লার ম্যাথু ফোর্ডের কক্ষে রংপুরের নুরুল হাসান সোহানের ঘটনা, সাংবাদিকদের সঙ্গে সিলেটের সামিত প্যাটেলের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ। জাকের আলী অনিক জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার ব্যাখ্যায় কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের বর্ণবাদী মন্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা আছে।
কুমিল্লা কোচ সালাহ উদ্দিনের মন্তব্য নিয়ে রকিবুল বললেন, ‘সালাহ উদ্দিনের ব্যাপারটা নিয়ে নিন্দা জানিয়েছি। বর্ণবাদের কোনো সুযোগ নেই। এটা তো বিসিবির দিকে চলে গেছে, নির্বাচকদের নিয়ে বলেছে। বিসিবি চাইলে এটার ব্যবস্থা নিতে পারে।’ বিপিএল চলে এসেছে প্রায় শেষ পর্বে। বাকি অংশেও যদি শাস্তি-জরিমানার ঘটনা না ঘটে, শৃঙ্খলার প্রশ্নে এই বিপিএলকে বিশেষ জায়গা দিতেই হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর এই বিপিএল। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট মানেই যেন বিতর্ক। প্রতিটি জায়গাতেই অগোছালো আর অব্যবস্থাপনার ছাপ সুস্পষ্ট। তিক্ত অতীত ঝেড়ে মুছে এবার নতুন আঙ্গিকে বিপিএল আয়োজনের চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। মাঠ ও মাঠের বাইরের বিতর্কই হয়েছে এবারের আসরের সঙ্গী। সাত দলের এবারের দশম আসরে বেশ কিছু জায়গায় এসেছে নতুনত্বও।
টিভি সম্প্রচারে নতুনত্ব আনতে প্রথমবারের মতো স্পাইডার ক্যাম, ড্রোন ক্যামেরা, ব্যাগি ক্যামেরাসহ উন্নতমানের সব প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আসরের শুরু থেকেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। সঙ্গে যুক্ত রয়েছে হক আই প্রযুক্তিও। এ ছাড়া বিপিএলে প্রথমবার সব দলের দায়িত্বেই রয়েছেন দেশি কোচ। কিন্তু এতসব আয়োজনই যেন সকলই গরল ভেল, এড়ানো যাচ্ছে না বিতর্ক। টিম হোটেলে সোহান-ফোর্ডের হাতাহাতি : বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে টিম হোটেলে দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির দুই ক্রিকেটারের মধ্যে হাতাহাতির মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। রুমে উঁকি দেওয়া নিয়ে এই ঘটনা ঘটে রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ম্যাথু ফোর্ডের মধ্যে। সোহান রংপুর রাইডার্সের এক কর্মকর্তার রুমে যেতে গিয়ে ভুল করে ফোর্ডের রুমে উঁকি দিয়ে বসেন। এতে চটে গিয়ে সোহানকে বাজে মন্তব্য করে বসেন ফোর্ড। এরপর দুজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে যায়।
পথরেখা/আসো