পথরেখা অনলাইন : সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সসে বিদায় করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দশম আসরের ফাইনালে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল। দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্সকে। ২০২২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মত বিপিএলের ফাইনালে উঠলো ফরচুন বরিশাল। এরআগে ২০১২ সালে বরিশাল বার্নার্স ও ২০১৫ সালে বরিশাল বুলস নামের দল দু’টি ফাইনালে উঠেছিলো। আগামী পহেলা মার্চ টুর্নামেন্টের ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশাল।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে বরিশালের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভারের মধ্যেই ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে রংপুর। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে রংপুরের মেইক শিপ্ট ওপেনার মাহেদি হাসানকে ২ রানে শিকার করেন বরিশালের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। মাহেদির বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। ওভারের শেষ বলে সাকিবকে ১ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান সাইফুদ্দিন। পঞ্চম ওভারে রংপুরের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটান ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডিয়াম পেসার কাইল মায়ার্স। ১২ বলে ৮ রান করা ওপেনার রনি তালুকদারকে শিকার করেন মায়ার্স। টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ২৬ রান পায় রংপুর। চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁধে রংপুরকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে অপরাাজিত ৯৭ রান করা নিউজিল্যান্ডের জেমস নিশাম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। মায়ার্সের করা সপ্তম ওভারের শেষ তিন বলে ৩টি চার মারেন নিশাম। নবম ওভারের শেষ বলে পুরানকে ৩ রানে থামিয়ে বরিশালকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। পরের ওভারের প্রথম বলে নিশামকে তুলে নিয়ে রংপুরকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন বরিশালের পেসার ইংল্যান্ডের জেমস ফুলার। চতুর্থ উইকেটে ২৬ বলে ৩০ রান যোগ করেন নিশাম ও পুরান। ৪৮ রানে ৫ উইকেট পতনে ব্যাকফুটে চলে যায় রংপুর। এ অবস্থায় বড় জুটির প্রয়োজন পড়ে রংপুরের। ষষ্ঠ উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ২ রানে ফুলারের হাতে জীবন পেয়ে সোহানের সাথে ৩১ বলে ২৮ রান যোগ করে উইকেটে সেট হয়ে যান নবি। ১৫তম ওভারে শেষবারের মত আক্রমনে এসে রংপুরের দুই সেট ব্যাটারকে বিদায় দেন ফুলার। ১টি করে বাউন্ডারিতে নবি ১২ রানে এবং সোহান ১৪ রানে ফুলারের বলে আউট হন। এতে ৭৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ১শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে রংপুর। কিন্তু অষ্টম উইকেটে আবু হায়দারকে নিয়ে শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন শামীম। ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে ২২ বলে শামীম ৫৮ রান ও আবু হায়দার করেন ৯ বলে ১২ রান। মাত্র ২০ বলে টি-টোয়েন্টি পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন শামীম। বরিশালের পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওবেড ম্যাককয়ের করা ১৯তম ওভারে ৩টি ছক্কা ও ২টি চারে ২৬ রান নেন শামীম। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ১৪৯ রানের সংগ্রহ পায় রংপুর। প্রায় আড়াইশ স্ট্রাইক রেটে ৫টি করে চার-ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৫৯ রান করেন শামীম। ১২ রানে অপরাজিত থাকেন আবু হায়দার। বরিশালের ফুলার ২৫ রানে ৩টি উইকেট নেন।
১৫০ রানের টার্গেটে সাবধানী শুরু করেন বরিশালের দুই ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৩ ওভারে ১৫ রান তোলেন দু’জনে। চতুর্থ ওভারে প্রথবারের মত আক্রমনে এসে বরিশালের দুই ওপেনারকে বিদায় দেন পেসার আবু হায়দার। তামিম ১০ এবং মিরাজ ৮ রানে শিকার হন আবু হায়দারের। ২২ রানে ২ উইকেট পতনের পর বরিশালের হাল ধরেন সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে ৩৭ বলে ৪৭ রান যোগ করে বরিশালকে লড়াইয়ে রাখেন দু’জনে। মুশফিক পঞ্চম এবং সৌম্য অষ্টম ওভারে ২টি করে চার ও ১টি করে ছক্কায় বরিশালকে যথাক্রমে- ১৬ ও ১৭ রান এনে দেন। দশম ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্পিনার নবির বলে স্টাম্পড আউট হন ১৮ বলে ২২ রান করা সৌম্য। সৌম্য ফেরার পর ক্রিজে এসে রংপুরের বোলারদের উপর চড়াও হন মায়ার্স। তাকে সঙ্গ দেন মুশফিক। ১৪তম ওভারে ১৮ রান তুলে বরিশালকে জয়ের পথে রাখেন মুশফিক ও মায়ার্স। পরের ওভারে আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকির শিকার হন ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৫ বলে ২৮ রান করা মায়ার্স। মুশফিক-মায়ার্স চতুর্থ উইকেটে ২৭ বলে ৫০ রান যোগ করেন ।
মায়ার্স যখন ফিরেন তখন ৩৩ বলে ৩১ রান দরকার পড়ে বরিশালের। পঞ্চম উইকেটে ২৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৩ রান তুলে ৯ বল হাতে রেখে বরিশালের ফাইনাল নিশ্চিত করেন মুশফিক ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার। ৭৭ রানে সপ্তম উইকেট পতনের পর রংপুরের শামীমের ২৪ বলে ৫৯ রানের অসাধারন ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত বৃথাই গেল। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করেন মুশফিক। মিলারের ১৮ বলে অনবদ্য ২২ রানের সাজানো ইনিংসে ২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। রংপুরের আবু হায়দার ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স : ১৪৯/৭, ২০ ওভার (শামীম ৫৯*, নিশাম ২৮, ফুলার ৩/২৫)
ফরচুন বরিশাল : ১৫২/৪, ১৮.৩ ওভার (মুশফিক ৪৭*, মায়ার্স ২৮, আবু হায়দার ২/৩৭)
ফল : ফরচুন বরিশাল ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহিম (ফরচুন বরিশাল)
পথরেখা/আসো