পথরেখা অনলাইন : জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। দুই মেয়াদেই নিজের প্রভাব রাখার চেষ্টা করে গেছেন। এবার যখন ব্যাটিং কোচের পদ শুন্য হয় তখন ঘনিষ্ট বন্ধু থিলান সামারিবিরাকে নিযোগ দিতে জোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম মেয়াদে বন্ধুকে টিমমেট হিসেবে পেলেও এবার আর পাননি। তার দাবীকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় দলের নতুন ব্যাটিং কোচ করা হয়েছে ডেভিড হেম্পকে। যা শ্রীলঙ্কার মাষ্টার মাইন্ডের জন্য ধাক্কা হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ কোচ হিসেবে ডমিনেট করতে চেয়েছিলেন। যে চেষ্টা এখনো অব্যহত রেখেছেন। আর সে কারনেই জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে স্বদেশি থিলান সামারাবিরাকে চেয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরু। প্রক্রিয়া মোতাবেক সামারাবিরা কোচ হতে আবেদনও করেছিলেন। দিয়েছিলেন সাক্ষাৎকারও। বিসিবির কোচ নিয়োগের জন্য যে কমিটি তাদের সুপারিশও ছিল সাবেক ব্যাটিং কোচকেই ফেরানো হোক। কিন্তু তাদের এই সুপারিশ প্রত্যাখ্যাত হয়েছে গত ১২ ফেব্রুয়ারির বোর্ড সভায়। সেখানে বোর্ডের একাধিক পরিচালক ব্যাটিং কোচ হিসেবে সামারাবিরাকে নিয়োগ না দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যুক্তি দিয়েছেন।
আর তাতেই বাতিল হয়ে যায় সাবেক শ্রীলঙ্কার কোচের নিয়োগ। বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাটিং কোচ হিসেবে হেম্পকে নিয়োগ দিয়েছে। পাশাপাশি বোলিং কোচও পেয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার আন্দ্রে অ্যাডামস আসছেন বোলিং কোচ হয়ে। দুজনকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই দুজন কাজ শুরু করবেন। হেম্পের সঙ্গে ব্যাটিং কোচ হতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট লও। সাবেক জাতীয় দলের প্রধান কোচ কিছুদিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে কাজ করেছেন। যুব ক্রিকেটের জন্যই ল’কে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার কথা চলছে। হেম্পকে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে বড় দুটি কারণ হলো, এইচপি ও বাংলা টাইগার্সে কাজ করাকালীন ক্রিকেটারদের উন্নতিতে তার পরিশ্রম ছিল চোখে পড়ার মতো।
এছাড়া কম বেতন-বোনাস-ভাতায় কাজ করতে আগ্রহী হেম্প। সময়ও বেশি দিতে চান তিনি। বারমুডার সাবেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ২২ ওয়ানডে খেলেছেন। ১ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৬৪১। এছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। বারমুডার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেও ইংল্যান্ডে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন হেম্প। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়ারউইকশ্যায়ার, গ্লামরগানের হয়ে ২৭১ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ৩০ সেঞ্চুরি ও ৮৬ ফিফটিতে সাড়ে ১৫ হাজারের ওপরে রান করেছেন। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন ৩০৯টি। যেখানে রয়েছে ৮ সেঞ্চুরি ও ৩৪ ফিফটি। রান করেছেন ৬৮৪৪। অবসরের পর ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রাহান ক্রিকেট ক্লাবের সহকারী কোচের দায়িত্ব নেন তিনি। ২০২০ সালে পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দলের হেড কোচ ছিলেন। বিসিবি’র প্রভাবশালী এক পরিচালক বলেছেন, ‘চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তারই দেশের সামারাবিরাকে কোচ হিসেবে চেয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ড সভায় আমরা এটা নাকচ করে দিয়েছি। একই প্যানেলে দুই লঙ্কান আমরা চাইনি। হেম্প এখানকার চেনাজানা, ক্রিকেটারদের চেনে। তাই তাকে নেওয়া।’
আন্দ্রে অ্যাডামস নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪৭ ম্যাচ খেলেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোচিংয়ে যুক্ত অ্যাডামস। নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচও। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটের দল নিউ সাউথ ওয়েলস ব্রুজের প্রধান বোলিং কোচ হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন অ্যাডামস। বিশ্বকাপের পর অ্যালান ডোনাল্ড বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পরবর্তী দুই সিরিজের জন্য এইচপির কোচ কলিন কলিমোরকে নিয়োগ দেয় বিসিবি। কলিমোর প্রধান কোচ হতে আগ্রহ দেখালেও তাকে বিবেচনায় আনেনি বিসিবি। বিপিএল শেষেই ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ শুরুর আগেই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ও বোলিং কোচের নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। দুই কোচের নিয়োগের বিষয়টি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বিসিবি। বিসিবি। বিবৃতিতে বিসিবি লিখেছে, ‘বিসিবির হাই পারফরম্যান্সের (এইচপি) প্রধান কোচ ডেভিড হেম্পকে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
২০২৩ সালের মে থেকে এইচপির প্রধান কোচের ভূমিকা পালন করছেন হেম্প। ৪ মার্চ দিয়ে টি-টোয়েন্টি দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ শুরু হবে। বারমুডার হয়ে ২৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ না হলেও হেম্পের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। ১৫৫২০ রান করেছেন ৫৩ বছর বয়সী কোচ। বাংলাদেশে আসার আগে ২০২০-২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান নারী দলের প্রধান কোচ ছিলেন তিনি। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের হয় সব মিলিয়ে ৪৭ ম্যাচ খেলেছেন অ্যাডামস। ৪৫০ রানের বিপরীতে ৬২ উইকেট নিয়েছেন কিউই পেসার।
পথরেখা/আসো