একবার ক্ষ্যাপ খেলতে গিয়ে ছিলাম। জিততে যাতে অসুবিধা না হয় তাই পীরের ফু দেয়া এক মুঠো তেল জিহ্বাতে লাগিয়ে দিল। একত অস্বস্থি সাথে জিহ্বা পিচ্ছিল হয়ে দাঁতের ফাঁক দিয়ে বেড় হতে চায়। জিহ্বা সামলাব না বল ধরব, হেরেই গেলাম।
নিজাম উদ্দিন আউলিয়া ১২৬৫/৬৬ তে দেখলেন দিল্লির জনগন পানির কষ্টে পেরেশান। তিনি মনস্থ করলেন বিরাট এক তালাব কাটাবেন। তখন বাদশাহ ছিলেন গিয়াস উদ্দিন তুঘলক, তিনি যুদ্ধে যাবেন, যাবার আগে দিল্লির চারিদিকে প্রাচীর তোলার নির্দেশ দিয়ে গেলেন, দিল্লিতে এত শ্রমিক নেই যে দুটো কাজ এক সাথে করে। বাদশাহর ইচ্ছাতেই উপেক্ষা করে শ্রমিকরা ফকির নিজাম উদ্দিনের কাজ বিনা পারিশ্রমিকে শুরু করল। বাদশাহর কাজ উপেক্ষিতই রইল। গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের ছেলে মোহাম্মদ বিন তুঘলক আবার পীর নিজাম উদ্দিনের মুরিদ, তিনি বাদশাহর যুদ্ধ থেকে ফেরত আসার সংবাদ দিয়ে বল্লেন, হুজুর আপনি দিল্লি থেকে সরে যান। বাবা এসে তার প্রাচীর হয় নাই দেখলে আপনাকে হত্যা করবে। নিজাম উদ্দিন আউলিয়া হাতের তসবি টি পেই চল্লেন আর বল্লেন, দিল্লি দুরস্ত। প্রতিদিন বাদশাহ যোজন-যোজন পথ অতিক্রম করে দিল্লির দিকে এগুচ্ছে, মুরিদ মোহাম্মদ বিন তুঘলক বার বার হুজুরকে বলছে পালিয়ে যেতে, দিল্লি পৌছলে বাদশাহ গিয়াস উদ্দিন চরম শাস্তি দিবে, তসবি টিপে টিপে নিজাম উদ্দিন বলেই যাচ্ছেন, দিল্লি দুরস্ত, দিল্লি বাদশাহর জন্য দূরে। বাদশাহ গিয়াস উদ্দিন যুদ্ধ জয়ী হয়ে এসেছেন দিল্লি শহরের বাইরে বিরাট সম্বর্ধনার আয়োজন, বাদশাহ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ বিন তুঘলক জানেন কি কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে হুজুরের জন্য। পালাবার রথা বলাতে এবার বল্লেন, দিল্লি হনুজ দূর, তার কাছে দিল্লি দূরেই। দিল্লির উপকণ্ঠে বিজয়ী বাদশাহর সম্বর্ধনা চলছে, সম্বর্ধনা শেষে বাদশাহ প্রবেশ করবে দিল্লিতে। হাতির কুচকাওয়াজ চলছে, হাতির মাথার ধাক্কায় প্যান্ডেলের মূল খাম্বা ভেংগে পরল বাদশাহ গিয়াসউদ্দিনের উপর। মারা গেলেন। দিল্লি কার জন্য চির কালই দূর অস্ত, হনুজ দূর অস্ত। দিল্লিতে নিজাম উদ্দিনের মাজারে গিয়েছি। মনে পুর ঘটনা স্মরণে শ্রদ্ধা অবনত শিরে মোনাজাত সাথে ফুল দিয়েছি। মনে পরে-
জোটে যদি একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি,
জোটে যদি আর একটি পয়সা, ফুল কিনিও হে অনুরাগী।
কোরানের আয়াতের অনুবাদ সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের।
সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে জাহানারা তার প্রিয় কাজের মেয়েকে আগুন থেকে বাঁচাতে নিজেও অগ্নিদগ্ধ হন, সম্রাটের মেয়েকে ত পর পুরুষ দেখতে পারে না তাই চিকিৎসা দিতে তার হাতে সূতা বেধে সেই সূতা ধরে রুগির পথ্য দেয়া হতে থাকল। দিন দিন জাহানরার শরীর খারাপ হতে থাকল, ডাকা হল ইংরেজি ডাক্তার গ্যাবরিয়েল বুইটন কে। তিনি সূতা ধরে চিকিৎসা করবে না, বল্লেন রুগিনি কে দেখতে হবে। বলে কি? গর্দান যাবে, বল্লেন, না দেখে তিনি চিকিৎসা করবেন না। বাবার মন, সম্রাট শাহজাহান অনুমতি দিলেন। জাহানরা সুস্থ হলেন। সম্রাট মহাখুশি, বল্লেন কি চাও? সার্জেন্ট গ্যাবরিয়েল বুইটন বল্লেন, আমার জন্য কিচ্ছু চাইনা, আমার ইংরেজদের জন্য বিনা শুল্কে ব্যবসার অনুমতি চাই, গ্রান্টেড হল। খাল কেটে কুমিড় ঢুকল।
প্রথম মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বোমা তৈরির একটি উপাদান প্রয়োজন, ইসরাইলের বিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহেরিম্যান সেই প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে দেন, তাকে বলা হয় তুমি কি চাও, সে বলে আমার জন্য কিছুই না তবে আমরা ইহুদীরা সমগ্র বিশ্বে এখানে ওখানে থাকি, আমাদের কোন নির্দ্দিষ্ট থাকার যায়গা নাই। যুদ্ধ শেষে ওটম্যান সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয় আর সেখানে ইসরাইল জন্ম লাভ করে। ব্ক্তিযগত লাভ না নিয়ে বিশ্বে এরা আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় থাকবে। এনারা নিজের জন্য ভাবেন নাই।
নবাব সিরাজদৌলা আত্মীয় না ভেবে যদি মীরজাফরকে হত্যা করতেন তবে সমগ্র ভারতের ইতিহাস চেঞ্জ হত। তিনি ওদের মতন সবাইর জন্য না ভেবে নিজের আত্মীয় গন্ডির বাইরে যেতে পারেন নাই। অবশ্য নবাব সিরাজ রে বুদ্ধি দেবার লোকও ছিল না। ক্ষুদ্রস্বার্থের বাইরেই কেউ যেতে পারে নাই।
লেখক : কলামিস্ট
পথরেখা/আসো