পথরেখা অনলাইন : দ্বিতীয়মেয়াদে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। প্রথম মেয়াদে মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে অধিনায়ক হিসেবে পেলেও এবার শুরুতে সাকিব আল হাসানকে পেয়েছিলেন। এরপরই পেলেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। প্রথম এসাইনমেন্ট হিসেবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয় পেয়েছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরি করে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক শান্ত। বছরের প্রথম একদিনের ম্যাচটি জয় দিয়ে শুরু করেছে স্বাগতিকরা। কিছুটা ধীরে হলেও কোচ হাথুরুর সাথে অধিনায়ক ও খেলোয়াড়দের রসায়ন জমে উঠেছে। যেমন করে ব্যাটিং কোচও কাজ করে দারুণ মজা পাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পান ডেভিড হেম্প। পূর্ণমেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই শুরু হয়েছে তার অ্যাসাইনমেন্ট। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে ব্যাট হাতে অধিনায়ক শান্তর পাশাপাশি মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও অবদান রেখেছেন।
মুশফিকের সেই ৭৩ রানের দারুণ ইনিংস নিয়ে ব্যাটিং কোচ হেম্প বলেন, ‘মুশফিকের ইনিংস আউটস্ট্যান্ডিং। সে মোটেও বিচলিত হয়নি। রিয়াদ বাউন্ডারিতে রান বের করছিল, মুশফিক সেটাকে নিজের মতো খেলে অব্যাহত রেখেছে। সে প্রমাণ করেছে রান করা মানেই শুধু বাউন্ডারি নয়, সিঙ্গেল রোটেশন করেও রান বের করা যায়। পুরো ইনিংসজুড়েই সে দারুণ খেলেছে।’ মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়া শান্ত শেষ পর্যন্ত ১২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। দুজনের জুটি নিয়ে হেম্পের ভাষ্য, ‘১৬৫ রানের পার্টনারশিপ আমাদের ম্যাচ জিতিয়েছে, শান্ত ও মুশফিক ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছে দেখে খুব ভালো লাগল। ক্যাপ্টেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিচ্ছে। খেলোয়াড় হিসেবে তো বটেই, অধিনায়ক হিসেবেও এমন ইনিংস মুগ্ধকর। ব্যাটাররা নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলছে। আমিও ওদের বলেছি, সবার শক্তির জায়গা বুঝে খেলো।’
বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও, চাপের মুহূর্তে বাংলাদেশের হয়ে হাল ধরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তার ৩৭ ইনিংস নিয়েও তাই প্রশংসা করতে ভোলেননি টাইগারদের নতুন ব্যাটিং কোচ। ব্যাটিং কোচের আগেই হেড কোচ হাথুরুর সঙ্গেও জুটি বেধে কাজ করছেন অধিনায়ক ও খেলোয়াড়রা। বিসিবির মিডিয়া বিভাগের নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট প্রকাশ করায় দর্শকের সুযোগ হচ্ছে বাংলাদেশ দলের অন্দর দেখার। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন ড্রেসিংরুমের ব্যতিক্রম কিছু ঘটনাও। এবার যেমন দেখা গেল কোচ হাথুরু ড্রেসিংরুমে নাজমুল হোসেন শান্তকে পরিয়ে দিচ্ছেন ‘মেরুন জ্যাকেট’। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে একাধিক পারফরমার ছিলেন এই মেরুন জ্যাকেট গায়ে জড়ানোর। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে পারফরমার সতীর্থদের পেছনে ফেলে শান্তই পেয়েছেন মেরুন জ্যাকেট। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে হাথুরুর দেওয়া ভাষণে বোঝা যাচ্ছিল, বাংলাদেশ যে ‘ক্যারেক্টার’ দেখিয়েছে, এটাই তিনি চান দলের কাছ থেকে। শ্রীলঙ্কা ভালো শুরু করার পরও বাংলাদেশের বোলাররা প্রত্যাবর্তন করেছেন।
ব্যাটিংয়েও বাজে শুরুর পর মাহমুদউল্লাহ, শান্ত আর মুশফিকুর রহিমের পাল্টা লড়াই মুগ্ধ করেছে সবাইকে। বিপর্যয়ে ঘুরে দাঁড়ানোই হচ্ছে প্রকৃত যোদ্ধার পরিচয়। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে ফিরে এই লড়াকু মানসিকতা তৈরির চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন হাথুরু। খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে কোচরা অনেক কিছুই করেন। হাথুরু যেমন বাংলাদেশ দলে নতুন সংস্কৃতি তৈরি করতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০২৩ বিশ্বকাপে গুয়াহাটি থেকে বিশেষ বই ‘দ্য টাইগার্স কোড’ তুলে দিচ্ছেন জাতীয় দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের হাতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি কেমন হবে, কীভাবে ক্রিকেটাররা একটা আদর্শ দল হয়ে খেলতে পারবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিস্বার্থ দূরে রেখে কী করে সবকিছুর ঊর্ধ্বে দলীয় বিশ্বস্ততাকে প্রাধান্য দেওয়া যায়, এটিই টাইগার্স কোডের মূল কথা। শুধু ক্রিকেট নয়, এর বাইরেও একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনবৈচিত্র্য কেমন হবে সেটি উল্লেখ আছে। মেরুন জ্যাকেট, টাইগার্স কোডের সঙ্গে গত কয়েক মাসে পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফে।
নতুন কয়েকজন কোচ যুক্ত হয়েছেন এরই মধ্যে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন নেতৃত্বে। নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে সওয়ার হয়ে বাংলাদেশ শুরু করেছে নবযাত্রা। এই পরিবর্তনের হাওয়ায় বাংলাদেশ যদি পেছন ফেলতে পারে দলকে ঘিরে থাকা কিছু বিতর্ক। মাশরাফি বিন মর্তুজার বিদায়ের পর চার সিনিয়র ক্রিকেটারকে একসঙ্গে খুব কমই পাওয়া গেছে গত চার বছরে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে সাকিব-তামিম ইকবালের দ্বন্ধ। স্পষ্ট হয়েছে কোচের সঙ্গে তামিমের দূরত্বও। মজার ব্যাপার, গত বছর বাংলাদেশে ফেরার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে হাথুরুকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামলানো সবচেয়ে কঠিন কাজ হবে কি না। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘নাহ! একেবারেই না।’ এর ঠিক কয়েক মাসের মধ্যেই তামিম-মাহমুদউল্লাহর দলে থাকা-না থাকার পেছনে হাথুরুর ভূমিকা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এখনো যা চলছে। বিতর্ক-সমালোচনার মধ্যেও হাথুরু নিজের কাজে অটল থেকেছেন। কয়েক মাসের অদল-বদলের সময়ে দলে নতুন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হাথুরুর ট্রাম্পকার্ড হয়ে এসেছেন ‘লিডার’ শান্ত। ইম্প্যাক্ট, ইনটেন্ট, পারফরম্যান্স, সব মিলিয়ে এ দায়িত্ব নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
পথরেখা/ আসো