• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
    ৯ পৌষ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০০:২১
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

সাদি মোহাম্মদের আত্মহনন ও বিষন্নতা

খ্যাতি, অর্জন ও আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাসত্বেও বিষন্নতা যে মানুষকে চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে, তার প্রমাণ খ্যাতিমান রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদি মোহাম্মদের আত্মহননের ঘটনা। বিশ্বে বহু সফল ব্যক্তি বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। নোবেল পুরস্কার লাভ করেও আমেরিকান ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিষন্নতা কাটেনি। মাথায় গুলি করে মরে গেছেন। ইংলিশ কবি ভার্জিনিয়া ওলফ বিষন্নতার শিকার হয়েছিলেন এবং সুইসাইড নোট লিখে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। ফ্রাঞ্জ কাফকা বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তিনি তার চিকিৎসককে পর্যন্ত বলেছিলেন, তাকে আফিমের ওভারডোজ দিতে, যাতে তিনি তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারেন। লিও টলস্টয় সম্পর্কেও বলা হয় যে তিনি জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আত্মহত্যা করতে ভীত ছিলেন। জাপানের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক ইওকিও মিশিমা আত্মহত্যা করেছেন। 
 
আমি সঙ্গীত প্রেমিক হলেও বলতে দ্বিধা নেই যে আমি বাংলা গান কমই শুনি। এই কম শোনার মধ্যেও সাদি মোহাম্মদের কণ্ঠে অনেক রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেছি। গানের মধ্যে তার যে মগ্নতা থাকতো, যে কারণে মনে হতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝি গানগুলো তার জন্যই লিখেছেন। শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতে মগ্নতাও সাদি মোহাম্মদের বিষন্নতায় তাকে আশ্রয় দেয়নি। সঙ্গীতের প্রতি তার প্রেম ও আবেগজাত যে আস্থা ছিল, সে আস্থাও তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। 
 
কেউ বিষন্ন হয়ে পড়লে তা যদি তার প্রিয়ভাজনদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে, তাহলে সেক্ষেত্রে তার উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিচর্যা এবং তাকে সঙ্গ দেওয়া জরুরী ছিল। সাদি মোহাম্মদের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এসবের ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে তিনি জীবনকে আর উপভোগ্য বিবেচনা করেননি। জীবনের অবসানের মধ্যে সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।
 
বিষন্নতা সম্পর্কে নোবেল বিজয়ী তুর্কি সাহিত্যিক ওরহান পামুক তার আত্মজৈবনিক উপন্যাস “ইস্তাম্বুল : মেমোরিজ এন্ড দ্য সিটি’তে লিখেছে—  “তুর্কি ভাষায় বিষন্নতাকে বলা হয় ‘হুজুন’। এই ‘হুজুন’ গভীর আধ্যাত্মিক ক্ষতির প্রকাশ এবং এক ধরনের আবেশ— ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে না পারা। কিন্তু কেউ যদি ভালো ও সৎ ব্যক্তি হয়, তাহলে পার্থিব লাভক্ষতি নিয়ে তার পরোয়া করার কিছু নেই। 
 
মধ্যযুগের চিন্তাবিদরা  ‘হুজুন’ বা বিষন্নতাকে অসুস্থতা হিসেবেই দেখেছেন। দার্শনিক আল কিন্দির মতে, ‘হুজুন’ প্রিয় কাউকে হারানো অথবা তার মৃত্যুর সাথে জড়িত কিছু নয়, বরং ক্রোধ, প্রেম, বিদ্বেষ অথবা ভিত্তিহীন ভয়ের মতো আধ্যাত্মিক যন্ত্রণার সঙ্গে জড়িত। দার্শনিক-চিকিৎসক ইবনে সিনা ‘হুজুন’কে প্রায় একইভাবে দেখেছেন এবং এ কারণে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, যদি কোনো যুবক অসহায় আবেগের শিকার হয়, তাহলে তার জন্য চিকিৎসা হচ্ছে, নাড়ি পরীক্ষার সময় যুবককে তার প্রেমিকার নাম জিজ্ঞাসা করা। এছাড়া তিনি বিষন্নতা থেকে নিরাময়ের পদ্ধতি হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে যুক্তি, কর্মব্যস্ততা, সুশৃঙ্খল জীবন ও উপবাসের মধ্যে স্বস্তি অন্বেষণ করতে।“
 
ওরহান পামুক আরও উল্লেখ করেছেন: “ষোড়শ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক মিশের ডি মন্টেইন (Michel de Montaigne) যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে,  `ক্লান্তিকর বিষণ্নতার মাঝে কোনো আবেগ ও সম্মান নেই; বরং তা যুক্তি ও ব্যক্তিতন্ত্রের দুশমন।‘ তাঁর বহু বছর পর  গুস্তাভ ফ্লবের (Gustave Flaubert) যা বলেছেন, ‘বিষন্নতা এক ধরনের পাগলামি ও আহতাবস্থা এবং মন্দ কাজের সাথে তুলনীয়। তুর্কি ঔপন্যাসিক তানপিনারের উপন্যাস ‘পিস’-এর নায়করা বিষন্নতার কারণে খণ্ডবিখণ্ড ও পরাজিত। বিষন্নতার কারণেই নির্ধারিত যেকোনো প্রেমের পরিসমাপ্তি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে না।“
 
পামুক তার উপন্যাসে বিষন্নতার ওপর আরও একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন: “নবী মুহাম্মদ (স.) তাঁর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.) এবং চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর বছরকে উল্লেখ করেছেন, ‘সেনেততুল হুজন’ অর্থাৎ বিষাদের বছর বলে। ‘হুজুন’ শব্দ থেকে ক্ষতির স্থান ও জীবনের দুঃখ বিষাদ সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশিত হয় “
 
সাদি মোহাম্মদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
পথরেখা/ আসো

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।