পথরেখা অনলাইন : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার অজিদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। ৯ পয়েন্ট নিয়েই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সারতে চায় সফরকারীরা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে-অক্টোবরে বাংলাদশের মাটিতে হবে নারী টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ওয়ানডে সিরিজে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট চায় সফরকারীরা। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে সবশেষ বাংলাদেশে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এবারই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে উভয় দল। ২০২২-২৫ আইসিসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হওয়ায় খানিকটা ‘বাধ্য’ হয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলতে হচ্ছে অজিদের। আইসিসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তুর্ভুক্ত হওয়ায় প্রতিটি ম্যাচের জন্য থাকছে ৩ পয়েন্ট। পুরো সিরিজের পূর্ণ ৯ পয়েন্টই পেতে চায় অস্ট্রেলিয়া। তবে বাংলাদেশ লড়াই করতে চায়। নিজেদের মাঠ আর পরিচিত কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
এই সিরিজকে নানা কারণেই বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এই সফরে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে বাংলাদেশে এসেছে অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল। দুই দল আগে কখনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়নি। এবার ওয়ানডে সিরিজটি আইসিসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এর সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ শেলি নিটস্কে। সংবাদ মাধ্যমকে শেলি বলেন, ‘তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপের মূল্যবান পয়েন্ট আছে তাই এটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’ টি-টোয়েন্টি সিরিজের গুরুত্বের কথা বোঝাতে গিয়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘মূলত বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই এই সফরটির গুরুত্ব রয়েছে। কন্ডিশনে আমরা বিশ্বকাপ খেলব সেখানে টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাওয়া দারুণ ব্যাপার। সব দিক বিবেচনা করলে সিরিজটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুই দলের শক্তির ব্যবধান বিস্তর হলেও বাংলাদেশ সফরে শক্ত দল নিয়ে এসেছে সফরকারীরা। শেলি বলেন, ‘যতবার আমরা মাঠে নামি সব সময়ই আমাদের উন্নতির সুযোগ থাকে। আমর আমাদের সেরা একাদশ বাছাই করতে চাই এবং ম্যাচ জিততে চাই। কিন্তু এই কন্ডিশনে কারা ভালো করে সেটা আমরা খুঁজে বের করতে চাই। সেপ্টেম্বরে যখন আমরা ফিরে আসব তখনকার জন্য আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে চাই।’ বাংলাদেশ সফরে যে স্পিন পরীক্ষা দিতে হবে সেটিও জানা আছে অজি কোচের, ‘আমরা এটাও বিশ্বাস করি, আমাদের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য স্পিনার রয়েছে। এই কন্ডিশনের জন্য স্পিনাররা উপযোগী হতে পারে। তাই আমার মনে হয় আমরা অনেকটা কাভার করতে পেরেছি।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি জয়ই হতে পারে বাংলাদেশ দলের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যবধান আসলে অনেক। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা ওয়ানডে ক্রিকেটে সাতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, টি-টোয়েন্টিতে ছয়বার। দুই সংস্করণেই র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর দল। বাংলাদেশের মেয়েদের বড় অর্জন বলতে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জয়। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ৭ নম্বরে, টি-টোয়েন্টিতে ৯ নম্বরে। শক্তি-সামর্থ্যে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা সেই অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে এখন ঢাকায়। আগের দুই দিনে দুই দফায় ১০ জন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ঢাকায় এসেছেন। ভারতে মেয়েদের আইপিএল ফাইনাল খেলা বাকিরা এসেছেন একদিন পর। আরও একটা কারণে সিরিজটি স্মরণীয় হতে যাচ্ছে। বিসিবির দুই নারী আম্পায়ার সাথিরা জেসি ও মিশু চৌধুরী অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সিরিজে ম্যাচ পরিচালনা করবেন। দুজনের মধ্যে সাথিরা টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকবেন। এখন পর্যন্ত ছয়টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ পরিচালনা করা সাথিরা এবারই প্রথম ঘরের মাঠে বাংলাদেশের কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ম্যাচ পরিচালনা করবেন।
এরপর অক্টোবরে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের নারী আম্পায়ারদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে চায় বিসিবি। সে জন্য অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই দুই নারী আম্পায়ারকে ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়া। সর্বশেষ বোর্ড সভায় এই দুই আম্পায়ারকে বেতনভুক্তও করা হয়েছে। এবারই প্রথম দুজন নারী আম্পায়ারকে বেতনের আওতায় আনল ক্রিকেট বোর্ড। এটাও মেয়েদের ক্রিকেটে নতুন কিছু।
পথরেখা/আসো