পথরেখা অনলাইন : সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে হারের মুখে ছিটকে পড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। শ্রীলংকার ছুঁড়ে দেওয়া ৫১১ রানের বিশাল টার্গেটের জবাব দিতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ৪৭ রান করেছে টাইগাররা। ম্যাচ জিততে বাকী দু’দিনে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ৪৬৪ রান করতে হবে বাংলাদেশকে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১১৯ রান করেছিলো শ্রীলংকা। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ২১১ রানে এগিয়েছিলো তারা। অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ২৩ ও বিশ^ ফার্নান্দো ২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ তৃতীয় দিনের তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার খালেদ আহমেদ। ফার্নান্দোকে ৪ রানে থামিয়ে দেন তিনি। ১২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকাকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসে ৫৭ রানে ৫ উইকেট পতনের পর ষষ্ঠ উইকেটে ২৪৫ বলে ২০২ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা।
এই ইনিংসেও আবারও জ¦লে উঠেন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। হাফ-সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরির জুটিতে প্রথম সেশনেই শ্রীলংকার লিড ৩শ পার করেন দু’জনে। ৬ উইকেটে ২৩৩ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় শ্রীলংকা। ধনাঞ্জয়া ৮৫ ও কামিন্দু ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন।
বিরতির পর বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ভুলে ৯৪ রানে জীবন পান ধনাঞ্জয়া। মিরাজের বলে ধনাঞ্জয়া গ্লাভস ছুঁড়ে বল জমা পড়ে লিটনের হাতে। কিন্তু সেটি বুঝতে পারেননি লিটন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ধনাঞ্জয়ার গ্লাভস স্পর্শ করেছিলো। জীবন পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধনাঞ্জয়া।
সেঞ্চুরির পর শরিফুলের বলে রানার হাতে ক্যাচ দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জীবন পেলেও বেশি দূর যেতে পারেননি ধনাঞ্জয়া। মিরাজের শিকার হন ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৭৯ বলে ১০৮ রান করা ধনাঞ্জয়া। প্রথম ইনিংসে ১০২ রান করেছিলেন তিনি। সপ্তম উইকেটে কামিন্দুর সাথে ২৭৩ বলে ১৭৩ রান যোগ করেছিলেন ধনাঞ্জয়া।
দলীয় ২৯৯ রানে ধনাঞ্জয়া ফেরার পর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে দ্বিতীয় শতকের দেখা পান কামিন্দু। প্রথম ইনিংসের মত এই ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নেন ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। তৃতীয়বারের মতো টেস্ট ইতিহাসে একই দলের নির্দিস্ট দুই ব্যাটসম্যান দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন । সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ভাই গ্রেগ চ্যাপেল ও ইয়ান চ্যাপেল।এরপর ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবু ধাবিতে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের আজহার আলি ও মিসবাহ উল হক।
সেঞ্চুরির পর অষ্টম উইকেটে প্রবাথ জয়সুরিয়ার সাথে ৬৭ এবং শেষ ব্যাটার কাসুন রাজিথার সাথে ৫৪ বলে ৫২ রান যোগ করে শ্রীলংকাকে লিডের পাহাড় এনে দেন কামিন্দু। তাইজুলের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে কামিন্দু আউট হলে ৪১৮ রানে শেষ হয় শ্রীলংকার ইনিংস। প্রথম ইনিংসের ৯২ রানের লিডসহ বাংলাদেশকে ৫১১ রানের টার্গেট দেয় শ্রীলংকা। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৩ সালে সেন্ট জোন্সে ৪১৮ রানের টার্গেট স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিলো ক্যারিবীয়রা। তাই এ ম্যাচ জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ^ রেকর্ড মুছে নতুন ইতিহাস গড়তে হবে বাংলাদেশকে।
১৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় ২৩৭ বলে ১৬৪ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন আট নম্বরে নামা কামিন্দু। জয়সুরিয়া করেন ২৫ রান । বাংলাদেশের মিরাজ ৭৪ রানে ৪টি, অভিষিক্ত নাহিদ রানা-তাইজুল ২টি করে এবং শরিফুল-খালেদ ১টি করে উইকেট নেন। ৫১১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শ্রীলংকার পেসারদের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। নবম ওভারে ৩৭ রানে ৫ ব্যাটারকে হারায় টাইগাররা। মাহমুদুল হাসান জয়-শাহাদাত হোসেন ও লিটন দাসকে রানের খাতাই খুলতে দেননি বাঁ-হাতি পেসার ফার্নান্দো।
জাকির হাসানকে ১৯ রানে লাহিরু কুমারা এবং বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ৬ রানে শিকার করেন কাসুন রাজিথা। দিন শেষে মোমিনুল হক ৭ ও তাইজুল ইসলাম ৬ রানে অপরাজিত আছেন। শ্রীলংকার ফার্নান্দো ৩টি, রাজিথা-কুমারা ১টি করে উইকেট নেন।
পথরেখা/আসো