পথরেখা অনলাইন : টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজ শেষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৩২৮ রানের বড় পরাজয় দিয়ে সফরকারীদের বিপক্ষে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে স্বাগতিকরা। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দুই যুগ পরও সেই নৈতিবাচক ক্রিকেটই খেলছে বাংলাদেশ। পুরো কোচিং স্টাফ বিদেশি হওয়ার পরও খেলোয়াড়দের বাজে পারফরম্যান্স দর্শক মহলে ক্ষোভের সৃস্টি করেছে। লংকান ব্যাটররা যেখানে সাবলিলভাবে ব্যাট করে গেছে সেখানে নাজমুল হোসেন শান্তরা যেন লড়াই করে কিছু করতে পারেনি। চতুর্থদিন লড়াই যা করা সেটি করেছেন মুমিনুল হক সৌরভ। তার অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংসের উপর ভর করেও দুশ রান করতে পারেনি। বলা যায় টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংটাই করতে পারেনি কেউ। সিলেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ যে হারতে যাচ্ছে, সেটা টের পাওয়া গেছে আগেই। ৫১১ রান তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিন স্বাগতিকেরা শেষ করে ৫ উইকেটে ৪৭ রানে। হাতে দুই দিন থাকলেও শুধু দেখার অপেক্ষা ছিল বাংলাদেশ পরাজয়ের ব্যবধান কতটুকু কমাতে পারে।
সেখানে মুমিনুল হকের একার লড়াইয়ের পর বড় ব্যবধানে বাংলাদেশ হেরেছে। রানের হিসেব করলে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার ৪৬৫ রানে। সেটাও বাংলাদেশ হেরেছে ২০০৯ সালে জানুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেখানে বাংলাদেশ যদি এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে ৪৭ রানেই অলআউট হতো, তাহলে সেটা হতো বাংলাদেশের টেস্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানে হার। সেখানে চতুর্থ দিন তুলনামূলক ভালো ব্যাটিং করায় বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানটা ৪০০ বা তার বেশি রানের হয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৮২ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল। দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ খেলেছে ১৩ ওভার। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে মুমিনুলকে দেখতে হয়েছে তিন সতীর্থের বিদায়। সেখানে চতুর্থ দিনের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এবার আউট হয়েছেন মুমিনুলের আরেক সতীর্থ তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের ১৬ তম ওভারের প্রথম বলে তাইজুলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন লঙ্কান পেসার কাসুন রাজিথা। মাঠের আম্পায়ার আউট ঘোষণা করলে রিভিউ নেন তাইজুল। তবে বাংলাদেশের এই রিভিউ হয়েছে নষ্ট। স্বাগতিকদের স্কোর হয়ে যায় ১৫.১ ওভারে ৬ উইকেটে ৫১ রান। টেস্ট ম্যাচে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার লঙ্কানদের বিপক্ষে। ২০০৯ সালে ৪৬৫ রানে তাদের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার সেই লঙ্কানদের বিপক্ষে ফের রেকর্ড ব্যবধানেই হারতে হয়েছে শান্তর দলকে। রানের দিক থেকে ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয় দেখতে হলো সিলেটে। এশিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার এটি। লঙ্কানদের ছুঁড়ে দেওয়া ৫১১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যের সামনে টাইগারদের ইনিংস শেষ হলো ১৮২ রানে। সিলেটে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান তিন শতাধিক রানেরও ওপরে। যা স্বাগতিক দেশ হিসেবে লজ্জার।
তৃতীয় দিনের ৪৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দিন শুরুর পর চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ লড়েছে মুমিনুল হকের কল্যাণে। একপ্রান্তে টিকে থেকে দেখেছেন বাকিদের আসা যাওয়া। হার অনুমিতই ছিল। তবে মেহেদি হাসান মিরাজ আর শরিফুল ইসলামের কল্যাণে সেটা খানিক দেরিতেই এসেছে। দিনের শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তাইজুল ইসলাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার এই ম্যাচে বেশি কিছু করতে পারলেন না। ৬ রান করে কাসুন রাজিথার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। ৫১ রানে ৬ উইকেট পতনের পর অনেকটা সময় মুমিনুলকে সঙ্গ দেন মিরাজ। দুজনে বেশ অনেকটা সময় দেখেশুনে ক্রিজে থেকেছেন। গড়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। ১০৫ বলে ৬৬ রানের জুটিতে কিছুটা আক্রমণাত্মক হতে চেয়েছিলেন মিরাজ। সেটাই কাল হলো তার জন্য। রাজিথার দিনের দ্বিতীয় শিকার হলেন স্লিপে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর শরিফুল এসে মুমিনুলকে নিয়ে দলের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন আরও ৪৭ রান। নিজে করেছেন ১২ রান। তবে ৪১ বল খেলার পর ধৈর্য্যরে বাঁধ ভাঙে তার। স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে গিয়ে রাজিথার বলে কট এন্ড বোল্ড জন তিনি। পরের বলেই ফিরে যান খালেদও। শেষ ব্যাটার হিসেবে নাহিদ রানা ফিরেছেন ডাক মেরে। লাহিরু কুমারার বাউন্সারে পরাস্ত হন তিনি। ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল। বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয় তাতে। আগের দিনে শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মাহমুদুল হাসান জয়, শাহাদাত হোসেন দীপু এবং লিটন কুমার দাস ফেরেন ডাক মেরে। এছাড়া পঞ্চম দিনে এসে ডাক মেরেছেন নাহিদ রানা এবং খালেদ হোসেন। সবমিলিয়ে পাঁচ ডাকে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। বিশাল পরাজয়ের পর অধিনায়ক শান্ত দারুণ হতাশ হয়েছেন, ’প্রতিপক্ষ ধনাঞ্জয়া এবং কামিন্দু যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা দুর্দান্ত ছিল। আমাদের বোলাররাও যেভাবে বোলিং করেছে তা দুর্দান্ত ছিল। উইকেট ভালো ছিল। আমাদের নতুন বলের ব্যাটিংয়ের জন্য উন্নতি করতে হবে। পরের টেস্টের আগে অনেক কাজ করতে হবে এটা নিয়ে। যখন চট্টগ্রামে যাব পরিকল্পনা থাকবে তখন এবং আশা করি, আমরা আরও ভালো করব’। জোড়া সেঞ্চুরিতে ম্যাচ সেরা হয়েছেন লংকান ব্যাটার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
পথরেখা/আসো