পথরেখা অনলাইন : নিজের দেশের পরিচিত কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাল খেলে জয়ের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। কিন্তু তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের কোনটিতেই জিততে পারেনি নিরাগর সুলতানা জ্যোতির শীষ্যরা। কোন ম্যাচেই স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা ১০০ রান পূর্ন করতে পারেনি। শেষ ম্যাচে মাত্র ৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ দল। ৯০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়েই টপকে যায় অজি নারীরা। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমে ৩-০ ব্যবধানে হারলো হাসান তিলকারাত্নের শীষ্যরা। আগের দুই ম্যাচ হারায় এই ম্যাচ স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই থাকলেও সেটি এড়ানো সম্ভব হয়নি। বলা যায় সেই পুরনো চিত্র মিরপুরে। প্রতিপক্ষের বোলারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ। তারপর পরাজয়ের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া। অস্ট্রেলিয়ার নারী দলের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই ওয়ানডে সিরিজ খুইয়েছে স্বাগতিক মেয়েরা। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আগের দুই ম্যাচের মতো বুধবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা।
৫০ ওভারের ম্যাচে অজি বোলারদের তোপে মোটে ২৬ দশমিক ২ ওভার খেলতে পারল টিম টাইগ্রেস। সবকটি উইকেট হারিয়ে নব্বই রানের আগে অলআউট হয়ে গেছে বাংলার মেয়েরা। এ নিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে কোনোটিতেই দলীয় রান একশ ছাড়াতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রথম ম্যাচে ২১৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৯৫ রানে থেমেছিল বাংলাদেশের ইনিংস। এরপর সিরিজ হারের ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯৭ রানে অলআউট হয় জ্যোতিরা। আর এবার শেষ ম্যাচে মান বাঁচানোর ম্যাচে গুটিয়ে গেল মাত্র ৮৯ রানে। বাংলাদেশ নারী দলের এটি যৌথভাবে ষষ্ঠ সর্বনিম্ন সংগ্রহ ওডিআইতে। পুরো সিরিজেই নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন অধিনায়ক জ্যোতি। যার প্রভাব পড়েছে পুরো দলের ব্যাটিংয়েও। এদিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সোবহানা মোস্তারির বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া সুমাইয়া আক্তার শূন্য রানে ফেরেন। এরপর দলীয় ৮ রানে আরেক ওপেনার ফারজানা হক বিদায় নিলেন।
এরপর স্কোরবোর্ডে ৩২ রান যোগ করতেই টপঅর্ডারে মড়ক লাগে স্বাগতিকদের। দুই ওপেনারের ব্যর্থতার পর আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন মুর্শিদা, রিতু মনি ও ফাহিমা খাতুনরাও। অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি হাল ধরার চেষ্টা চালালেও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে মান বাঁচানোর চেষ্টা করে গেলেন বোলাররা। ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা এসেছে দুই টেলএন্ডার ব্যাটারের কাছ থেকে। দশম উইকেটে মারুফা আক্তার ও সুলতানা খাতুনের জুটিতে ২২ বলে ২৬ রানের সুবাদে দলীয় সংগ্রহ ৮৯ রানে গিয়ে থামে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৬ রান এসেছে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ব্যাট থেকে। দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন কেবল চারজন। টাইগ্রেস পেসার মারুফা আক্তার অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট সংগ্রহ করেছেন কিম গ্রার্থ এবং অ্যাশলে গার্ডনার। এ ছাড়া এলিসা পেরি নেন ২ উইকেট। প্রথমবার সিরিজ খেলতে এসেই বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে বিশ্বকাপ শিরোপাধারীরা।
২০২৩ আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। আইসিসির সবধরণের ইভেন্টে এটি অজি পুরুষ ক্রিকেট দলের নবম ট্রফি। তখনও অস্ট্রেলিয়া নারী দল থেকে চারটি ট্রফি পিছিয়ে প্যাট কামিন্সের দল। নারী ও পুরুষ দলের ট্রফি নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় হাস্যরস। হাস্যরস যাই হোক না কেন নারী ক্রিকেটে যে অজিদের একক আধিপত্য তা ট্রফির সংখ্যাতেই স্পষ্ট। সেই মাইটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। আইসিসি ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভূক্ত ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয়েছে। ফলাফল অনুমিত, বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে হার। কিন্তু যেভাবে হেরেছে জ্যোতিদের দল, তাতে তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। মিরপুরে টানা তৃতীয় ওয়ানডেতে একশ’র আগেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। প্রথম সিরিজে ধবলধোলাই হলো বাংলাদেশ! লক্ষ্যে খেলতে নেমে অজিদের বেশি কসরত করতে হয়নি। অ্যালিসা হিলি-লিফচফিল্ডের জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। লিফচফিল্ড ১২ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। ১১ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন হিলিও। তার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ ৩৩ রান। এরপর অ্যালিসা পেরি-বেথ মুনি ম্যাচ শেষ করে আসেন। প্যারি ২৭ ও মুনি ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন সুলতানা খাতুন-রাবেয়া আক্তার। মেয়েদের ক্রিকেটের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত হাবিবুল বাশার সমুন বলেছেন, জেতা নয়, উন্নতি করা আমাদের মূল লক্ষ্য। যে ব্যাটিং অজিদের বিপক্ষে করেছে সেটা যে ভবিষ্যতে আর না হয় সেদিকেই কাজ করবে টিম ম্যানেজেম্যান্ট।
পথরেখা/আসো