পথরেখা অনলাইন : প্রথম টেস্টে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ঘুড়ে দাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অথচ শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রানের পাহাড়সম রান করে। নিজেদের পরিচিত কন্ডিশনের সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে যতটা প্রতিরোধ গড়ার কথা তার ছিটেফোটাও করতে পারেননি। উল্টো টেস্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহনই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে ক্রিকেটাররা। প্রথম টেস্ট মিলিয়ে তিন ইনিংসে এখন দুইশ রান করতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রতিপক্ষের ছয় হাফ সেঞ্চুরির জবাবে বাংলাদেশ করেছে মাত্র একটি। দলের কঙ্কালসার চেহারা বের হতে যেন আর কিছু বাকি নেই। যেভাবে ব্যাট করতে তাতে বড় ব্যবধানে পরাজয় যেন সময়ের ব্যপার মাত্র। ৩৫৩ রানে পিছিয়ে থেকে কত রান করে জবাব দিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। বল হাতে ভাল করলেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছে সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সবশেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর বিশ্বকাপের বহুল আলোচিত ‘টাইমড আউট’ ম্যাচে অবশ্য ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। প্রায় পাঁচ মাস পর লঙ্কানদের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন তিনি।
অন্যদিকে লিটন দাস পারছেন না ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হতে। চট্টগ্রামে ১ উইকেটে ৫৫ রানে সোমবার দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। সকালের শুরুটা ভালো করলেও হুড়মুড়িয়ে প্রথম সেশনের শেষে স্বাগতিকেরা উইকেট হারায়। স্কোরবোর্ডে ৪১ ওভারে ৪ উইকেটে ১১৫ রানে রেখে বাংলাদেশ যায় মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হক ও সাকিবের যেখানে হাল ধরার কথা, সেখানে তাদের পঞ্চম উইকেটের জুটিতে যোগ হয়েছে মাত্র ২১ রান। হাত খুলে খেলতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজের পর খেলা শুরুর তাড়াতাড়িই আউট হন সাকিব। ৪৫ তম ওভারের প্রথম বলে আসিথা ফার্নান্দোকে গ্ল্যান্স করে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন সাকিব। ঠিক তার পরের বলেই আসিথার ফুল লেংথ ডেলিভারি ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাদে পড়েন সাকিব। রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলে আউট হয়েছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। ২৩ বলে ১৫ রান করেছেন তিনি। সাকিবের বিদায়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৪৪.২ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৬ রান। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে লিটন লেগ সাইডে ফ্লিক করেও রান নিতে পারেননি।
নিজের মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই লিটন কাভার ড্রাইভে দারুণ চারে ইনিংস শুরু করেন। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা বাংলাদেশের এই ব্যাটার কিছুটা হলেও যেন আশা বাড়িয়েছিলেন এরকম শটে। তবে সেটা ছিল অতটুকুই। ৪৫ তম ওভারের পঞ্চম বলে আসিথার অফস্টাম্পের বাইরের বল খোচা দেন লিটন। শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস তা তালুবন্দী করেন। ৩ বলে ৪ রানেই শেষ লিটনের ইনিংস। ১৩০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে নামেন শাহাদাত হোসেন দীপু। ৮ রান আউট হলে তার দেখানো পথে ৭ রানে আউট হয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ। দলের সর্বোচ্চ ৫৪ রান করে জাকির হাসান। ৩৩ রান করে লড়াইয়ে চেষ্টা করে যান প্রথম টেস্টে উইকেট কামড়ে থাকা মুমিনুল হক সৌরভ। বাংলাদেশ যেখানে ৬৮.৪ ওভার ব্যাট করে অলআউট হয়ে যায় সেখানে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করে ১৫৯ ওভার। এদিকে লিটনকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা করা হয়, পোথাসের দৃষ্টিতে তা অমানবিক। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই কোচ। সময়টা কঠিন, অনেকদিন ধরেই ব্যাটে রান নেই।
এর মধ্যে আউটের ধরন নিয়েও অনেক আলোচনা। মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় থাকার কথা নয় লিটন কুমার দাসের। যদিও নিক পোথাস মনে করেন, ভালো অবস্থাতেই আছেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। চান্দিকা হাতুরুসিংহের অবর্তমানে প্রধান কোচের দায়িত্ব থাকা দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচ মনে করেন, নিজের মতো থাকতে দিলে লিটন তার সেরাটা দেখাবে। গত বছরের অক্টোবরের পর ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি লিটন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে শূন্য রানে আউট হয়ে তৃতীয় ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েন। এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজও ভালো যায়নি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের। তিন ম্যাচে করেন ৪৩ রান, সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটের এক ম্যাচেও রানের খাতা খোলার আগে ফেরেন সাজঘরে। অনুজ্জ্বল টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ব্যর্থতার ওয়ানডে সিরিজ। দল থেকে বাদ দিলেও টেস্টে লিটনকে নিয়ে আশাবাদী ছিল দল। দীর্ঘতম ফরম্যাটে রানের দেখা পেলে আত্মবিশ্বাস মিলবে, যা বাকি দুই ফরম্যাটেও কাজেও দেবে। কিন্তু সবার এমন আশা বাস্তরে রূপ নেয়নি। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৫ রান করা লিটন দ্বিতীয় ইনিংসে দলের চরম দুঃসময়ে অবিবেচকের মতো শট খেলে আউট হন। এখন নিজেদের সমস্যা থেকে বের হতে টেস্ট খেলার প্রতি মনযোগী হওয়ার কোন বিকল্প দেখছেন না বিশ্লেষকরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে আবারও ব্যাট করতে নেমেছে শ্রীংলকা।
পথরেখা/আসো