পথরেখা অনলাইন : ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও হেরে গেছে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ক্রিকেট দল। এই ম্যাচে ফারিহা তৃষ্ণা হ্যাটট্রিকের পরও দলের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। দলীয় ভরাডুবিতে চরম হতাশার সিরিজের শেষ দিকে এসে যেন হঠাৎ আলোর ঝলকানি। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে প্রথমবার খেলতে নেমেই হ্যাট্রিকের কীর্তি গড়েন ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা। একেবারে শেষদিকে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও ১৬১ রানের বড় পুঁজি গড়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। জবাবে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১০৩ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ৫৮ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল এলিসা হিলির দল। এর আগে ওয়ানডেতেও বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ঘরের মাঠে পরম শক্তিধর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যেন ‘রিয়েলিটি চেক’ হয়ে গেল বাংলাদেশের মেয়েদের। বলার মতো কোন পারফরম্যান্স একটা ম্যাচেও দেখাতে পারেনি, পারেনি জয়ের কোন সম্ভাবনা তৈরি করতে।
বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলাটা কতটা কঠিন ছিল সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে স্বাগতিকরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আত্ববিশ্বাসী হওয়ার মতো কোন অর্জন হয়নি। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ম্যাচে দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটারকে টপ অর্ডারে পাঠাল অস্ট্রেলিয়া। দুজনেই চড়াও হলেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। যেমন দাপুটে ব্যাটিং করেছেন, মনে হলো, জর্জিয়া ওয়ারহ্যাম ও গ্রাস হ্যারিস জাত টপ অর্ডার ব্যাটারই। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে ১৬২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। ওপেনিংয়ে নেমে হ্যারিস খেলেছেন ৩৪ বলে ৪৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। তিন নম্বরে নেমে ওয়ারেহ্যামের ৩০ বলে ৫৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১৯০ স্ট্রাইকরেট। যার কল্যাণে অজিরা পায় ১৬১ রানের বড় স্কোর।
তবে বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলের অর্জন পেসার ফারিহা তৃষ্ণার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক। শেষ ওভারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন এই পেসার। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি। এই ম্যাচ জিতলে জিতলে টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিশ্চিত করবে অজিরা। তবে এমন ম্যাচে অতিথিদের ব্যাটিং অর্ডারে ছিল কিছুটা বিস্ময়। টপ অর্ডারের হিলি, বেথ মুনি, এলিসে পেরিরা ব্যাটিংয়ে নেমেছেন পরে। ফোবি লিচফিল্ডের সঙ্গে ওপেনিং করেন হ্যারিস। যিনি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে অধিকাংশ ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন ৬-৭ নম্বর পজিশনে। উদ্বোধনী জুটি অবশ্য বড় করতে দেননি ফারিহা তৃষ্ণা, তৃতীয় ওভারেই লিচফিল্ডকে ফেরান ২ রানে। তারপর উইকেটে এসে হ্যারিসের সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ওয়ারহ্যাম। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে স্কোরে যোগ করেন ৫৪ বলে ৯১ রান।
দলকে বড় স্কোরে ভিড়টা গড়ে দেন তাঁরা। ১২তম ওভারে নাহিদা আক্তারের শিকার হওয়ার আগে ৩০ বলে ১০ চারে ৫৭ রান করেছেন ওয়ারহ্যাম। অথচ ৫৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মাত্র ১৫ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন ওয়ারহ্যাম। সব সময় ৮ ও ৯ নম্বরে পজিশনে ব্যাটিং করেন তিনি। পরে টাহলিয়া ম্যাকগ্রা ১৯ ও পেরি ২৯ রানের দুটি কার্যকর ইনিংস খেলেছেন। যার সৌজন্যে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬১ রানের বড় স্কোর জমা করে অস্ট্রেলিয়া। তবে বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলের অর্জন পেসার ফারিহার হ্যাট্রিকসহ ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট। ২০তম ওভারের শেষ তিন বলে ফারিহা পরপর ফেরান পেরি, সোফি মোলিনু ও মুনিকে। টি-টোয়েন্টিতে এটি তাঁর দ্বিতীয় হ্যাট্রিক। তবে এটি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।
মেয়েদের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় বোলার হিসেবে দুই হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন ফারিহা। উগান্ডার কোনচি আকো, হংকংয়ের ক্যারি চান, এই দুই বোলারের দুটি করে হ্যাট্রিকের কীর্তি রয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে এশিয়া কাপে সিলেটে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিক করেছিলেন এ পেসার। অবশ্য বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিক করেন ফাহিমা খাতুন, ২০১৮ সালে আরব আমিরাতের বিপক্ষে করেছিলেন তিনি। এত বড় অর্জনের দিন দেশকে জেতাতে না পারার অক্ষেপ দীর্ঘদিন থাকবে তৃষ্ণার।
পথরেখা/আসো
আসো