খেলা হল প্রাকটিস নির্ভর। চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা আর ত্বক শারীরিক এই অনুভূতি সবার আছে। নিজেকে খেলার মাঠে প্রতিষ্ঠিত করতে, গড়তে সবাই অনুশীলন করেই। প্রতিষ্ঠা পাওয়া নির্ভর করে কাইনেস্থিটিক শেনসন কার কতখানি ঐ খেলাতে প্রবল তার উপর। তবে অনুশীলনের উপর কোন কথাই নাই।
আর্মির বাইরে হরদম প্রাকটিস করত জামাল হায়দার। ভীষণ খাটত এমন কি ঈদের দিনও হকি মাঠে অনুশীলন করত। একবার স্বাধীনতা টুর্নামেন্টে আর্মি দলের সেন্টার হাফ জহীর ইনজিওরড আলিকে ট্রাই করার একদিন পর ওর ও হাতের আংগুল ফাটল। সেট হাফ লাইন থেকে জহীর অর আলি আহত থাকায় কাকে সেন্টার হাফ দেয়া যায়। আর্মি দল তখন চ্যাম্পিয়ন দল। জেনারেল মতিনকে বললাম। তিনি ডাক সাইটে মানুষ আবার হকি ফেডারেশনের সভাপতি। তাকে জানালাম যে বাইরে থেকে একজন এনে খেলাব কিনা? বল্লেন আর্মি টীমে সিভিল খেলালে বহুত ঝামেলা হতে পারে। ঠিক করলাম জামালকেই খেলাব। জামাল তখন ফর্মের তুংগে। আর আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঢাকা জেলার সাথে, জামাল হঠাৎ না থাকলে ঢাকা জেলা দল নাই হয়ে যাবে। কাগজ পত্র তৈরি হল। জামাল আট মাস ধরে আর্মিতে আছে। রেশন নিচ্ছে। জামাল কে বললাম, সে রাজি না। বললাম এই যে অর্ডিন্যান্সে চাকরি করতাছস, রেশন নিছস এখন খেলবি না, বাড়িতে মিলিটারি পুলিশ গিয়া ধইরা আইন্যা মাঠে নিয়া আইব।
কর্নেল ফেরদৌস স্যার বলল, জামাল অযথা ঝামেলা কেন করছ, এই টুর্নামেন্টে খেল। এর মধ্যে জহীর ভাল হয়ে যাবে। আগামীতে তোমার আর দরকার হবে না তবে এবার, চাকলাদার বলছে যখন মন দিয়ে খেলে নাও। রাইট হাফ আমি, সেন্টার হাফ জামাল আর লেফট হাফ মুকলেস, এই হাফ লাইন বল রুখতে আর ফরওয়ার্ডে যোগান দিতে অনুকরনীয়। চ্যাম্পিয়ন হলাম। দল পরিচালনা করতে সব দিক খেয়াল রাখতে হয়, এই সচেতনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই হবে আর আমাদের তা ছিল।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক, জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত
পথরেখা/আসো