পথরেখা অনলাইন : জাতীয় দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান হলেও এখন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে নিয়মিত খেলতে পারছেন না লিটন দাস। ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান তাই ছুটি চাইছেন। ঘরে বাইরে সব জায়গায় খুব বাজে সময় কাটাচ্ছেন এই ব্যাটার। যা জাতীয় দলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছে। আকাশী-নীল জার্সিধারীরা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল হলেও লিটন সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। অন্যান্য মৌসুমের মতো এবারো শক্তিশালী দল গঠন করেছে আবাহনী। আসরে এখন পর্যন্ত খেলা ৯ ম্যাচের সবকটিতেই জয়ের দেখা পেয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা। এই ইনফর্ম দলের স্কোয়াডে আছেন লিটন দাসও। তবে ৯ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন কেবল একটিতে। সম্প্রতি ব্যাট হাতে রান খরায় ভুগছেন লিটন। নিজেকে ফিরে পেতে বিশ্রাম চেয়ে নিয়েছেন আবাহনী থেকে। মানসিকভাবে চাঙা হয়ে ফিরতে চান এই ওপেনার। মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কোচ সুজন ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাকে নিয়ে ওঠা অনেক প্রশ্নের। জানা গেছে, লিটন একটা বিরতি চেয়েছে। তার দিনে লিটন ওয়ান অব দ্য বেস্ট প্লেয়ারবলতে দ্বিধা নেই। সব সময় লিটনের ব্যাটিং ক্রিকেটপ্রেমিরা পছন্দ করেন। ওর ব্যাটিং দেখা অন্য রকম ব্যাপার। লিটন হয়তো মেন্টালি হয়তো ব্লক আছে। এখন তার বিরতি চেয়ে নেওয়াটা বড় খবর হয়ে আছে।
সজুন বলেছেন, ’যদি আমার ওই ফ্লেক্সিবিলিটি না থাকত তাহলে হয়তো আমি লিটনকে এই ব্রেকটা দিতাম না। ফ্লেক্সিবিলিটি আছে, আমাদের যে ব্যাটিং অর্ডার আমি মনে করি একটা ব্রেক নিয়েই আসুক। তাকে সুপার লিগ থেকে পাব আশা করছি।’ ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন, এটা খেলোয়াড়দের মানতে হয়। সুজন আরও বলেন, ‘আমাদের দলটা যথেষ্ট শক্তিশালী, যথেষ্ট না অনেক শক্তিশালী। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এ রকম এত শক্তিশালী দল কবে ছিল আমার মনে পড়ে না।’ লিটনের একাদশে সুযোগ নিয়ে সুজনের ভাষ্যে অনেকটা এরকম, ‘সময়ের হিসেব করলে আগে কাজটা সহজ ছিল। এখন আর সহজ নেই। আবাহনী এখন জাতীয় দল থেকেও ভালো! আমি শান্তকে হাসতে হাসতে বলছিলাম, তোর জাতীয় দল থেকে আমার আবাহনী এখন শক্তিশালী। সুতরাং যারা আবাহনীর জন্য প্রতিদিন অনুশীলন করছে, পারফর্ম করছে, তাদের ফেলে দেওয়া সহজ নয়।’
আবাহনীতে কারও জায়গা পাকা নয়, দাবি করে সুজন বলেন, ‘আমি তো বললাম, আবাহনীতে কারও জায়গা নিশ্চিত নয়। আমি খুবই পেশাদার। আবাহনী অনেক টাকা দেয়। অন্য প্রিমিয়ার লিগ দল থেকে বেশি টাকা দেই বলে ওরা আবাহনীতে খেলে। লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন কিন্তু আবাহনীতে অনেক বছর খেলছে। ওরা কিন্তু যেতেও চায় না। তারা আবাহনীতে থাকতে চায়। অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আমি যখন আবাহনীর জন্য কাজ করি, তখন আমিও পেশাদার হয়ে কাজ করি। আমার খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা একটা অনুভূতি আছে। ওদের আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। কিন্তু যখন দলের ব্যাপার আসবে, সেখানে আবাহনী প্রথম।’ জাতীয় দলের হয়ে কোন ফরম্যাটেই সুবিধা করতে পারছেন না লিটন। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট, এই তিন ফরম্যাট মিলিয়ে লিটন দাসের সাম্প্রতিক ফর্ম মোটেই ভাল যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে ছাড়া ২ টেস্টের ৪ ইনিংস, ২ ওয়ানডে এবং ৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একটিতেও কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ ৩৬। এর মধ্যে তিনবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে লিটনের রান ছিল যথাক্রমে ০, ৩৬, ৭। এরপর ২ ওয়ানডেতেই আউট হয়েছেন কোন রান না করে। তৃতীয় ওয়ানডেতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে নেমেও চরম ব্যর্থ। শাইনপুকুরের বিপক্ষে বিকেএসপিতে এক ম্যাচ খেলে আউট হয়ে যান মাত্র ৫ রানে। এরপর সিলেট টেস্টে দুই ইনিংসে ২৫ আর ০ এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে করেছেন ৪ এবং ৩৮ রান। অর্থ্যাৎ জাতীয় দলের হয়ে শেষ ৯ ইনিংসে সাকুল্যে লিটনের রান ১১০। এর চেয়ে আর খারাপ আর কি হতে পারে? এদিকে নিজের ব্যাটের এ করুণ অবস্থা সম্ভবত লিটন নিজেও ঠিকভাবে মানতে পারছেন না। তাই আবাহনীর হয়ে প্রিমিয়ার লিগ থেকেও কিছু দিনের জন্য বিশ্রাম চেয়ে নিয়েছেন লিটন দাস। লিটনের এ অবস্থা কেন? কী কারণে তার ফর্ম এত খারাপ? দেশের অন্যতম ব্যাটিং প্রতিভার হঠাৎ কেন এই অবনমন? তার সমস্যা কোথায়, টেকনিক, টেম্পরামেন্টে নাকি মানসিক? এসব প্রশ্নের উত্তর দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই জানা জরুরী। কারণ ইনফর্ম লিটনকে বড় বেশি প্রয়োজন।
পথরেখা/আসো্া