জেনারেল জিয়া হত্যার পর দিন জিওসি জেনারেল মন্জুর দরবারের আয়োজন করেন। তিনি ছিলেন চমৎকার বক্তা। অথচ দরবারে সৈনিক, জেসিও, অফিসারের সামনে তিনি গুছিয়ে কথা বলতেই পারতে ছিলেন না। একজন ডিভিশন কমান্ডার, তিনি হাতে বুট নিয়ে সৈনিকদের দেখাতে থাকলেন এ বুট কত নিম্নমানের। এরকম সব অবান্তর এবং অগুছালো কথা, সৈনিকরা ফিসফাস শুরু করল বুটের কারণে কেন প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যাই করতে হবে।
খুব ছোট্ট কারণে জেনারেল মন্জুর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাকে ঢাকাতে স্টাফ কলেজের কমাডান্ট করে পোষ্টিং করা হয়েছিল। চিটাগং ডিভিশন ছিল ডিভ প্লাস শক্তির। শান্তি বাহিনীর এ্যাম্বুস এবং লড়াই এর জন্য এই ডিভিশন ছিল দেশের সব থেকে শক্তিশালী। তার কমান্ডার আলাদা মর্যাদার। এভাবে পোষ্টিং তার না-পছন্দ। তবে এ সব ঘটনার একদম নিভৃতচারী হলেন জেনারেল এরশাদ। আর্মি তখন মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। পাকিস্তানের বন্দী শিবির থেকে রিপার্টিয়েড এ সব অফিসাররা কোনঠাসা আর্মিতে।
জিয়া হত্যার পর দরবার করেও সিপাহীদের মন গলাতে না পেরে তিনি তার অফিসে কনফারেন্স ডাকেন। এ্যাসল্ট কোর্সে যাওয়া রফিকের ডেকে তাকে কালুরঘাট ব্রিজ কন্ট্রোলে রাখতে বললেন আর কুমিল্লা থেকে আসা বাহিনী আটকাতে বললেন। রফিক বান্দরবনে কর্নেল মুহিত কে কল করলে, তিনি বলেন কোথায়ও যাবার দরকার নেই। এই পরিস্থিতিতে এ্যাসল্টকোর্স কম্পিটিশন হবে না, তুমি সবাইকে নিয়ে বান্দরবন চলে আস।
কনফারেন্সে পরিস্থিতি খারাপ বুঝে জেনারেল মন্জুর কিছুক্ষণের বিরতি দিলেন এবং বাসায় গেলেন। তিনি আর কনফারেন্সে ফেরত না এসে পালানোর পথ গ্রহণ করলেন। যে মন্জুর তার তীকবুদ্ধির জন্য সব্বার কাছে প্রশংসিত, তিনি খেই হারালেন। পালাচ্ছেন গাড়িতে মেজর জেনারেলের দুইস্টার লাগান আর ডিভ কমান্ডারের ফ্লাগ। এরই মধ্যে জেনারেল এরশাদ মন্জুরকে ধরিয়ে দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকার ঘোষনা করলেন । মন্জুর ফটিকছড়িতে ধরা পরলেন। জাতীয় রক্ষী বাহিনীর মেজর এমদাদ জেনারেল মন্জুরকে চিটাগং ক্যান্টনমেন্টে জীপের পিছনে বসিয়ে রওনা হয়, পরে জেনারেল মন্জুরের মাথার পিছনে একটি পিস্তলের গুলিতে মৃত পাওয়া যায়। মুক্তিযাদ্ধা জেনারেল জিয়া শেষ। শেষ আর এক মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মন্জুর, তাতা থৈ থৈ নৃত্য করা মুক্তিযোদ্ধাদের, দিনা দিন দিন ফুরাইল শুকনাতে তরণী।
এত সব ঘটল, পাকিস্তান থেকে আসা রিপার্টিয়ার্ডরা সবকিছুতেই অগ্রাধিকার পেল। আর এ সবের মূল কারিগর, শান্ত নিভৃতচারী দাবা খেলার ওয়েটিং মুভে বিশ্বাসী জেনারেল এরশাদ। জেনারেল এরশাদের মগজ জাদুঘরে রাখাই যায়।
লেখক : সাবেক অধিনায়ক জাতীয় ও সেনাবাহিনী হকি দল, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার জয়ী এবং কলামিষ্ট