পথরেখা অনলাইন : শুক্রবার; ৩১ মে ২০২৪— সন্ধ্যায় হৃদয়স্পর্শী সুরের মূর্ছনায় সিক্ত হবেন শ্রোতারা; এমন প্রত্যাশাই আয়োজকদের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুদ্ধসঙ্গীতের আবির ছড়ানো এই আয়োজনে দর্শক-শ্রোতা আমন্ত্রিত। এমন এক আয়োজন করেছে স্টেট মাল্টিমিডিয়া। গানের বিদ্যাপীঠ ছায়ানট মিলনায়তনে আয়োজন করছে রবীন্দ্র সংগীতের একক পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশনা করবেন শান্তিনিকেতনের প্রতিভাবান শিল্পী মধুবন্তী চক্রবর্তী।
মধুবন্তী চক্রবর্তীর কমবেশি ১২টি একক রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিবেশনা থাকছে। আয়োজক স্টেট মাল্টিমিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিফাত মোহাম্মদ রাফসান জানি জানিয়েছেন; এই আয়োজনে— তাই তোমার আনন্দ আমার পর, আছি তোমারই মাটির কন্যা, বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা, মেঘ বলেছে যাব যাব, আমারে তুমি অশেষ করেছে, জগতে আনন্দযজ্ঞেসহ রবীঠাকুরের আরো কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গান।
অনন্ত আনন্দধারা শিরোনামে শান্তিনিকেতন এবং সঙ্গীতভবনের প্রতিভাবান শিল্পী মৃদভাষী মধুবন্তী চক্রবর্তী আলাপনে জানান নিজের শিল্পী হওয়ার গল্প। বলেন—শুরু থেকেই সংগীতের দিকে ঝোঁক সৃষ্টি হয়। শিল্পের যতগুলো শাখা আছে; সেসবের মধ্যে সংগীত আমার কাছে বিশেষভাবে প্রিয়। বাবা বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ মায়ের একমাত্র কন্যা মধুবন্তী চক্রবর্তী। নাম দেওয়া হয় দক্ষিণ ভারতীয় রাগিনীর নাম অনুসারে মধুবন্তী। ১৯৯১-৯২ সালে শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন দ্বিতীয় শ্রেণীতে। তার দিদিমা বাজাতেন সেতার। মায়ের দিদিমা ছিলেন ধ্রুপদ সঙ্গীতশিল্পী। মামা বাড়িতে সংগীতের পরিবেশে গান গাওয়া শুরু। মধুবন্তী চক্রবর্তী জানালেন— শান্তিনিকেতনে পড়াকালে ১৯৯৫ সালে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কালচার রিসোর্সেস এন্ড ট্রেনিং [সিসিআরটি] থেকে রবীন্দ্রসংগীতে বৃত্তি পাই। সেই থেকে গান শেখা শুরু। গুরু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের কাছে, যা চলছে টানা ২০১২ সাল পর্যন্ত। শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছি বিদুষী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ে কন্যা ইন্দ্রানী মজুমদারে কাছে। প্রতিভা বিকশিত হতে খুব সময় লাগেনি। কলকাতা জহর শিশু ভবন আয়োজিত রবীন্দ্রসংগীত প্রতিভার অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন ২০০৭ সালে। ২০০৭ সালে জুনিয়র আর্টিস্ট স্কলারশিপ অর্জন করা মধুবন্তী বিশ্বভারতীতে ২০০৬ সালে স্নাতকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছেন। ২০০৮ সালে স্নাতকোত্তরেও প্রথম বিভাগে প্রথম। ২০১০ সালে বিশ্বভারতী থেকে বিএড পাস করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করছেন।
গানের ক্যারিয়ার খুব ছোট নয়। যদিও বাংলাদেশের এই প্রথম আয়োজনে গাইছেন। কিন্তু এর আগে আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেনের গান গেয়েছেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ঢাকায় ২০২২ সালে প্রথম সিডি প্রকাশিত হয় ‘মানবকন্যা’ নামে। বিশ্বভারতীতে পড়াকালে দিল্লিতে মুম্বাই ও কলকাতায় বেশ কিছু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মধুবন্তী চক্রবর্তীর সরল স্বীকারেক্তি— পড়াশুনার ক্ষেত্রেও গান আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আমার সংগীত পছন্দের জগৎটা অনেক বিস্তৃত। শাস্ত্রীয় সংগীতেরও ভীষণ ভক্ত আমি। মন-প্রাণভরে অবসরে ধ্রুপদী গান শুনতে ভালো লাগে। আমি অনেক গানের কথাই বলতে পারি, যেগুলো প্রতিদিন শুনলেও পুরোনো হয়ে যায় না। তাই পড়াশুনা ছাপিয়ে গান আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে সেই শিশুকাল থেকেই। গান সেই থেকেই মনে গভীর বাসা বেঁধেছে।
পথরেখা/এএস