পথরেখা অনলাইন : পাকিস্তানে গিয়ে না খেললেও মাঝের কিছুটা সময় ভারতের সাথে ’মোটামোটি’ মানের সম্পর্ক ছিল পাকিস্তানের। বৈশ্বিক অনেক টুর্নামেন্টেই নিয়মিত দেখা হতো। কিন্তু ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে দুই চির বৈরি দেশ দুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে ভারত। তাদের দাবি, হাইব্রিড মডেল তথা ভারতের ম্যাচগুলো যেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করা হয়। চিরপ্রতিদ্বন্ধী দেশের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমের দাবি, ভারতকে ছাড়াই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের কথা ভাবছে পিসিবি। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যে কোনো টুর্নামেন্টে না খেলার মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। সোমবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে পূর্ব নির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানও বাতিল করেছে আইসিসি। সেই অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় এই মেগা ইভেন্টের সূচি নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। অনুষ্ঠানটি হওয়ার মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১০০ দিনের কাউন্টডাউনও শুরু হতো।
ভারতের আপত্তির মুখে সূচি নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের ৩টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ৮ দলের এই টুর্নামেন্ট। জানা গেছে, ভারতের দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত আইসিসিকে মেইল বরাতে জানিয়েছিল বিসিসিআই। পরে আইসিসি সেটি অবহিত করেছে পিসিবিকে। চিরপ্রতিদ্বন্ধী দেশের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এবার কঠোর হতে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতকে ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের সিদ্ধান্তের কথা আইসিসির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে মহসিন নাকভীর বোর্ড। দেশটির গণমাধ্যমে দাবি, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যে কোনো টুর্নামেন্টে ক্রিকেট ম্যাচ না খেলার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একজন জানিয়েছেন, ‘কোনো টুর্নামেন্টেই আমরা ভারতের সঙ্গে খেলব না, যতক্ষণ না ওরা পাকিস্তানে এসে খেলতে চাইবে।’ মোটকথা ভারতকে বেকায়দায় ফেলতে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।
এর মধ্যে আছে আইনি ব্যবস্থা এবং বাদ যাচ্ছে না অলিম্পিক গেমসও। ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজনে মরিয়া ভারত কদিন আগে আগ্রহ প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটিতে (আইওসি) চিঠি পাঠিয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্ধিদের এমন সিদ্ধান্তেও বাগড়া দেবে পাকিস্তান। দেশটির সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারত সরকারের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টকে রাজনীতিকরণ নিয়ে আইওসির কাছে বক্তব্য তুলে ধরবে তারা। প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলবে ৯ মার্চ পর্যন্ত। আট দলের অংশগ্রহণে এসব ম্যাচ পাকিস্তানের করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সাল থেকে পাকিস্তানে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে না ভারত। এমনকি গত বছর পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপ খেলার বিষয়ে আপত্তি জানায় বিসিসিআই। শেষ পর্যন্ত হাইব্রিড মডেলে ভারতের ম্যাচগুলো শ্রীলঙ্কায় আায়োজন করা হয়।
২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে ঝামেলা যেন থামার নয়। কারণ মাঠে যা-ই হোক, মাঠের বাইরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্ধী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনে টুর্নামেন্টটি এখন সুতোয় ঝুলছে। পিসিবি এখন শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করছে ভারতের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে পিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। পিসিবি এই ঘটনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সরকারকে জানিয়েছে। সরকারের ভেতরের সূত্র থেকে জানিয়েছে যে কর্মকর্তারা ভারতের একগুঁয়ে মানসিকতার ব্যাপারে খুবই বিরক্ত। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থার কথাই ভাবা হচ্ছে বলে ক্রিকেট পাকিস্তানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হতেই পারে। এমনকি ক্রিকেট দলের সফর বাতিল নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে না যাওয়ার কথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) যে চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসিকে পাঠিয়েছে, সেটার ব্যাপারে ক্রিকইনফো এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কারণ ভারত সরকারের থেকে পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে বিসিসিআই কোনো সবুজ সংকেত পায়নি। আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে সূচি প্রকাশ না করলেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ কয়েক মাস আগে টুর্নামেন্টের সূচি ফাঁস হয়ে যায়। সেই সূচি অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ হওয়ার কথা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। বেশির ভাগ সময়ই আইসিসি টুর্নামেন্টের সূচি ১০০ দিন প্রকাশ করে থাকে। আইসিসিকেও বারবার তাড়া দিচ্ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সূচি প্রকাশ করতে। লাহোরে এক অনুষ্ঠানে টুর্নামেন্টের সূচি ঘোষণার অনুষ্ঠান থাকলেও সেটা আইসিসি শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ ভারতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তানে যাবে না দেখে সূচি তৈরি করে ঝামেলা পেকেছে বলে ক্রিকবাজের এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল। ২০০৮ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল সবশেষ পাকিস্তান সফর করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড বারবার পাকিস্তান সফর করলেও ভারত নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে যেতে চায় না। সবশেষ ২০২৩ এশিয়া কাপও বাধ্য হয়ে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান দুই দেশ মিলে আয়োজন করতে হয়েছে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতকে পাকিস্তানের মাঠে খেলাতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করতে থাকে। সামনে হয়তো কোন নতুন নাটকের অবতারনা হতে যাচ্ছে।
পথরেখা/আসো