পথরেখা অনলাইন : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুক্রবার রাত আটটায় অ্যান্টিগায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামতে যাচ্ছে সফরকারীরা। পাঁচ পান্ডবের সবাইকে বাইরে রেখেই নামতে হচ্ছে। নেই নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আপদকালীন দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। যেমনটা কোচ হিসেবে ফিল সিমন্স, সিনিয়র সহকারী ও ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের জন্যও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নাম শুনলেই সবার চোখে ভেসে ওঠে বেশ কিছু ছবি। মুখে চলে আসে অনেকগুলো নাম। ক্রিকেটের একঝাঁক বড় তারকা-স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স, অ্যালভিন কালিচরন, রোহান কানহাই, ক্লাইভ লয়েড, ভিভিয়ান রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যামব্রোস, ব্রায়ান লারা কিংবা ক্রিস গেইল। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশের আছে মিশ্র স্মৃতি। দুইরকম অভিজ্ঞতা। আছে পাঁচদিন লড়াই করে টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব।
পরিসংখ্যান মতে, জিম্বাবুয়েকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট শক্তিগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয়ের অনন্য কৃতিত্বটাও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। সেবার ২ টেস্টের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয় এসেছিল। তবে বাজে অভিজ্ঞতাও আছে। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের দুই যুগের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। আরও বড় কথা হলো, প্রথম টেস্টের ভেন্যু অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে প্রথম টেস্ট খেলতে মাঠে নামবে মিরাজের বাংলাদেশ, সেই মাঠেই সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল টাইগাররা। সেটা খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব করলে ৬ বছর ৪ মাস আগে। ২০১৮ সালের ৪ জুলাই অ্যান্টিগার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে এমন লজ্জায় পড়েছিল বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং কামরুল ইসলাম রাব্বি, এই ৪ জন আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ মাত্র ৮ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে লিটন দাসই ৫৩ বলে ২৫ রান করে দুই অংকে পা রাখে। সেই টেস্টের লিটন দাস, মুমিনুল হক আর মেহেদী হাসান মিরাজ আছেন এই দলে। ১৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত এ টেস্টে টাইগাররা খেলতে নামবে পঞ্চপান্ডবের কাউকে ছাড়া। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বোলিং করতে গিয়ে হাঁটু ও গোড়ালির ইনজুরির শিকারের পরপরই টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার। ২০০৯ সালের সেই বিজয়ের মিশনেই অভিষেক হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এরপর সময়ের বিবর্তনে ২০২১ সালে শেষ হয়েছে মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ার। তামিম ইকবালও খেলছেন না ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে। শুধু সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমই টেস্ট খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
সাকিব রাজনৈতিক নানা টানাপোড়েনে দলে অনিশ্চিত, খেলছেন না এই সিরিজে। ইনজুরির কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নেই মুশফিকুর রহিমও। টাইগারদের সর্বনিম্ন টেস্ট ইনিংস যে ভেন্যুতে, সেখানে পঞ্চপান্ডবের কাউকে ছাড়া খেলতে নেমে কেমন করে নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন দল, সেটাই এখন দেখার। এদিকে বাংলাদেশকে হারিয়ে শেষটা রাঙাতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই দলের জন্যই বছরের শেষ সিরিজ। বাংলাদেশ বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলের কেউই বছরটা খুব একটা ভালোভাবে পার করেনি। বাংলাদেশ একের পর এক সিরিজ হেরেছে। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, নিজেদের শেষ ৪ সিরিজেই হেরেছে টাইগাররা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বছরের শেষটা কেটেছে মিশ্র। তবে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপটায় ভালো কিছু করে দেখাতে না পারার আক্ষেপ আছে তাদেরও। এমন অবস্থায় বছরের শেষটা ভাল করতে মরিয়া উইন্ডিজ দল। যেখানে বাংলাদেশকে তারা মোকাবেলা করবে তিন ফরম্যাটেই।
সিরিজ শুরুর আগের দিন ক্রিকবাজকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান কোচ আন্দ্রে কুলি বলেন, ’খুব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ আমাদের জন্য, আমরা জয় দিয়ে বছর শেষ করতে চাই। কারণ দক্ষিন আফ্রিকা সিরিজের হতাশাজনক পারফরম্যান্স থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই’। লাল বলে অধিনায়ক মিরাজের পরীক্ষা কেমন হয় সেটাও দেখার বিষয়। প্রস্তুতি ম্যাচে টপ অর্ডার নিয়ে চিন্তা রয়েই গেল বাংলাদেশের। একেবারে শেষদিকে ব্যাটিং কোচ হেম্পকে প্রত্যাহার করে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সালাউদ্দিনকে। বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট মহসিন শেখ এখন আছেন আরব আমিরাতে সাকিব আল হাসানের দল ‘বাংলা টাইগার্স’-এর সঙ্গে। আগামীতেও থাকবেন কিনা বিসিবির কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে কাজ করবেন মহসিন শেখ। অ্যানালিস্টই নন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কোচিং স্টাফে নেই ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পও।
পথরেখা/আসো