মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : খেলোয়াড় হিসেবে অনেকগুলো জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলেছেন রাজিন সালেহ। কিন্তু শিরোপার নাগাল পাননি, উল্টো ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খেতে হয়েছে। এবার কোচ হিসেবে সেই অরাধ্য শিরোপা জয় করলেন রাজিন। জাতীয় দলের সাবেক এই সহকারী কোচ সিলেট বিভাগের হয়ে শিরোপা করলেন। বলা যায় বড় একটা অর্জনই হয়েছে পূন্যভুমির। এক রাউন্ড বাকি থাকতেই শিরোপা জয় নিশ্চিত করেছে সিলেট বিভাগ। অবশ্য আগেই বোঝা গিয়েছিল জাতীয় লিগের শিরোপা যাচ্ছে সিলেটের ঘরে। রেজাউর রহমান রাজা, সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদের কারণে গতকালই শিরোপার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল সিলেট। যদিও বরিশালের ১০৫ রান তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই ২ উইকেট হারায় তারা। তবে অধিনায়ক অমিত হাসান ও নাসুম আহমেদ দারুণ জুটিতে মিলে গেল পার হয়ে যায় সেই লক্ষ্য। বরিশাল বিভাগকে হারানোর পাশাপাশি জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো সিলেট বিভাগ।
মঙ্গলবার আসরের ষষ্ঠ রাউন্ডে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে জিতেছে স্বাগতিকরা। ছয় ম্যাচে চারটি জয় ও দুটি ড্রয়ে শিরোপাজয়ী সিলেটের পয়েন্ট ৩৭। দুইয়ে থাকা ঢাকা বিভাগ সমান ম্যাচে দুটি জয় ও চারটি ড্রয়ে অর্জন করেছে ২৫ পয়েন্ট। জাতীয় লিগের আর একটি রাউন্ড বাকি থাকায় তাদের পক্ষে সিলেটকে টপকানো সম্ভব না। সিলেট ম্যাচের শেষদিনে নামে ১০৫ রানের সহজ লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু ২৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় তারা। সেই ধাক্কা সামলে চতুর্থ উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন অমিত ও নাসুম। ৫২ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় ৪৪ রান করা নাসুম আউট হন জয় থেকে ১ রান দূরে থাকতে। সিঙ্গেল নিয়ে দলকে শিরোপা এনে দেন অধিনায়ক অমিত। উল্লাসে মাতানো অমিত অপরাজিত থাকেন ৬৯ বলে পাঁচটি চারের সাহায্যে ৩৮ রানে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বরিশাল প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৩০৪ রান।
পেসার রাজা ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৬৯ রান খরচায়। জবাব দিতে নেমে ৩৪২ রান করে সিলেট। ৩৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড পাওয়ায় বড় অবদান ছিল তোফায়েল ও রাজার। নবম উইকেটে ৯৪ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। তোফায়েল ৮৪ বলে ৬৪ ও রাজা ১৪০ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আগের দিন বরিশালকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪২ রানে গুটিয়ে দেওয়ায় খালেদ ও তোফায়েল রাখেন মূল ভুমিকা। খালেদ ৪ উইকেট দখল করেন ১৮ রানে। তোফায়েল ৩ উইকেট পান ১৭ রানের বিনিময়ে। বোলিং বিভাগের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ ও শিরোপা জেতার কাছে চলে যায় সিলেট। শিরোপার সুবাস আগেই পাচ্ছিল সিলেট। অপেক্ষা ছিল শুধু সময়ের। ২০২৪-২৫ জাতীয় ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সিলেট বিভাগ। ঘরের মাঠে বরিশাল বিভাগকে হারিয়ে জাতীয় লিগের প্রথম শিরোপার স্বাদ পেল ‘দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ’। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটির প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন রাজিন সালেহ।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় দলের সাফল্য নিয়ে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন। সুযোগ পেলে জাতীয় দলে কোচিং করাতে চান বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। অনেকের কাছে রাজিন লাল সবুজ ক্রিকেটের ট্র্যাজিক হিরো হিসেবে বিবেচিত। যোগ্যতা থাকলেও দীর্ঘসময়ের জন্য সার্ভিস পাননি। সিলেটকে চ্যাম্পিয়ন করানো দলের প্রধান কোচ হিসেবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, চ্যাম্পিয়ন ব্যপারটি সবসময়ই অন্যরকম। আর সিলেট বিভাগের জন্য এনসিএলের প্রথম শিরোপা জয়ে সঙ্গী হতে পারায় খুব ভাল লাগছে। এটাকে একটা বড় সফলতা আমি মনে করি। লিগ চালুর ২৩-২৪ বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিলেট চ্যাম্পিয়ন হলো জাতীয় লিগে, এটা আমার জন্য একটা বড় একটা পাওয়া। ক্রিকেটার হিসেবে না পারলেও কোচ হিসেবে করতে পারায় আনন্দটা একটু বেশিই হয়েছে তার।
লিগ শুরুর আগে সিলেট বিভাগকে নিয়ে কেউই আগাম ধারনা পাননি। কিন্তু রাজিন দলকে শিরোপার জন্যই তৈরি করেছিলেন, আমরা যখন শেষ ম্যাচটা খেলে সিলেট আসলাম তখন আমাদের মধ্যে একটা চিন্তা হয়েছিল যে বরিশালের সাথে আমরা ম্যাচটা জিতব। কারণ আমাদের বোলিং লাইন তাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তারপরও প্রথম ইনিংসে ঠিকমতো করতে পারিনি, তবে আমাদের একটা বিশ্বাস ছিল যে প্রথম ইনিংসে বরিশাল ভালো করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ভালো করব। এই বিশ্বাসটা আমাদের কাজে লেগেছে এবং আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো খেলে ম্যাচটা জিতে নিয়েছে। আবার শেষ ইনিংসে বোলাররাও দারুণ করেছে। জাতীয় দলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখার বিষয়ে রাজিন বলেন, সুযোগ পেলে জাতীয় দলের হয়ে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হয়ে কাজ করা এটা গর্বের বিষয় বলে মনে হয়। আমাকে যদি কাজ করার সুযোগ দেয় আমি অবশ্যই রাজি আিছ। আগেও এসেছিলাম কোচ হয়ে, ভবিষ্যতেও সঠিক পারিশ্রমিক পেলে আসতে চাই।
পথরেখা/আসো