মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ফুটবলে একটা সময় দেশসেরা অনেক ফুটবলারের জন্ম দিয়েছে। আজমত হোসেন থেকে শুরু করে রজনী কান্ত বর্মন, ইকবাল হোসেন, রেজাউল করিম বিপ্লব, আশরাফুল কাদের মঞ্জু, নারায়ন পালের মতো খেলোয়াড়রা ঢাকার ফুটবল আলো করে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ক্রিকেটে সেভাবে কেউ আলো ছড়াতে পারেনি। তবে একজন ঠিকই জেলাকে আলোকিত করেছেন। তিনি রিপন মন্ডল। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে নিজের আগামনী বার্তা জানান দিয়েছিলেন, এবার প্রথমবারের মতো সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষের শুরুর অপেক্ষায় থাকা টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়েছেন। এরই মধ্যে ক্যারিবীয় দেশটিতে পৌছেছেন এই পেস বোলার। ২০২২ যুবাদের বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার মাঝে ১৪ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার হয়েছিলেন রিপন। সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা একাদশেও। এরপর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত দেখা গেছে এই পেসারকে।
তাকে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করতে বিসিবিও বয়সভিত্তিক দলের পর থেকে অন্যান্য দলে খেলেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমবার ডাক পেলেন জাতীয় দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণার পর রিপন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেস বোলিং পাইপলাইন দিনে দিনে চোঁখে পড়ার মতো সমৃদ্ধ হচ্ছে, নিয়মিত উঠে আসছেন প্রতিভাবান পেসার। সেই পাইপলাইন থেকেই এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ঘোষিত দলে চমক বলা যেতে পারে ২২ বছর বয়সী পেসার রিপন মন্ডল। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলে খেলে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি হিসেবে খেলেছেন এশিয়ান গেমসে।
বিভিন্ন দলে খেলতে খেলতে তাই জাতীয় দলে খেলাটা অনেকটা প্রত্যাশিত ছিল। সেই আত্ববিশ্বাস রিপনের রয়েছে, কারণ অনেকটা নীরবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন লাল সবুজ জার্সি গায়ে চাপাতে। এছাড়া জাতীয় দলে স্বল্প সময় খেলা পেসার নাদিফ চৌধুরী রিপনকে নিয়ে দীর্ঘসময় কাজ করেছেন। বিসিবির অন্যান্য পেস বোলিং কোচদের সান্নিধ্যও পেয়েছেন এগিয়ে যাবার পথে। ছোটবেলায় বেশি বেশি টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলে জোরে বল করতেন রিপন। তাই সবাই বলত ক্রিকেট বলে চেষ্টা করতে। তখন রাজধানীর মহাখালীর এক ক্লাবে ১৫ বছর বয়সে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই অনুশীলন করার পর ২০১৭ সালে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে নাম লিখিয়েছেন। যদিও প্রথম মৌসুমে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। তবে পরের মৌসুমে সুযোগ পেয়েছিলেন। তখনই বিসিবি’র বয়সভিত্তিক দলের কয়েকজন নির্বাচক রিপনের পারফরম্যান্স দেখে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে ডাকেন। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়ে যান।
দুই বছর আগে উনিশ না পেরুনো ছেলেদের এই আসরেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। যুদিও বাংলাদেশ দল তারও দুই বছর আগে পাওয়া সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি। এশিয়ান গেমসের টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে রিপন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, জাতীয় দলে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অন্য অনেকের কাছে যেমন তেমনি আমার কাছেও স্বপ্নের মতো। যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সামর্থ্যরে প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে দলে স্থায়ী হতে পারি। জাতীয় দলের সুযোগের সংবাদটা অবশ্য তার কাছে গেল কয়েকদিনের অবস্থা দেখে আচ করতে পারছিলেন। টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ আসতে পারে মনে হচ্ছিল তার কাছে। খুব বেশি রোমাঞ্চিত না থাকলেও ভেতরে ভেতরে একটা আশা ছিল।
সুযোগ পাওয়ার পর এখন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের সেরাটা দেওয়া। সেই লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে রিপন বলেন, সুযোগ পাওয়ার পর আমার বন্ধু ও কোচরা আমাকে বারবার বলছিল, তুই ভালো করবি, তোর পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে, আর সর্বোচ্চ ফিট থাকতে হবে। তাদের কথাগুলো আমার ভেতরে আত্মবিশ্বাস অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো খেলা ছিল না। কিন্তু জাতীয় দলের টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নেটে বোলিং করতে দেখা গেছে। যদিও জাতীয় লিগে খেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে বিরতির সময় বাসায় বসে না থেকে বড় ভাইদের অনুশীলনে গিয়ে বোলিং করতেন। গাজীপুরের টঙ্গীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা রিপনের কাছে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার চেয়ে টিকে থাকার লক্ষ্যটাই বেশি, জাতীয় দলে ফিরতে তামিম ইকবাল ভাইয়েল বিপক্ষে বোলিং করেছি। সোহেল ইসলাম স্যার এবং মিজানুর রহমান বাবুল স্যারও আমাকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি যেখানে খেলি, সেখানে ভালো করে আস্থার প্রতিদান দিতে। কোনো বাড়তি সুবিধা না পেলেও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার কাজের ফল বলে মনে করি।
পথরেখা/আসো