পথরেখা অনলাইন : বাংলা চলচ্চিত্রের প্রবীণ অভিনেতা প্রবীর মিত্রের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। বর্তমানে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। জনপ্রিয় এই অভিনেতার চিকিৎসার খরচের জন্য সরকারি সহায়তা চায় তার পরিবার।
এ বিষয়ে প্রবীর মিত্রের ছোট ছেলে সিফাত ইসলাম বলেন, ‘সরকার থেকে শিল্পী সমিতি আমরা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সমিতির মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি, কিন্তু সমিতির কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, বিষয়টি রাষ্ট্র দেখুক। অর্থ সহায়তা নয়, তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুক। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার সুযোগ থাকলে তা হোক। এই চলচ্চিত্রের জন্য উনি অনেক দিয়েছেন। আমরা চাই, জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি সেই সম্মানটা পান।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অঞ্জনা আন্টি মারা গেলেন। তার জানাজায় এফডিসিতে অনেকেই গেছেন। এমন অনেকের মাধ্যমে শিল্পী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি আমরা। আর বাবার সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ছিল, তাদের অনেকেই দেশের বাইরে, দেশে যারা আছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই।’
সিফাত ইসলাম আরো বলেন, ‘বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। বার্ধক্যজনিত কিছু শারীরিক জটিলতায় গত ২২ ডিসেম্বর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। তার শরীর অক্সিজেন পাচ্ছিল না। এরপর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার তাকে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছে। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। তার ব্লাড লস হচ্ছে, প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছে।’
প্রবীর মিত্র ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। স্কুলজীবন থেকেই তিনি নাট্যচর্চায় যুক্ত হন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র।
১৯৬৯ সালে নির্মিত ‘জলছবি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়। প্রয়াত এইচ আকবর পরিচালিত ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি।
প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’।
প্রায় চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। নান্দনিক অভিনয়ের জন্য বরাবরই প্রশংসিত প্রবীর মিত্র। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার পুরস্কার ভাগ্য প্রসন্ন নয়। কেবল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
পথরেখা/এআর