• মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫
    ১ মাঘ ১৪৩১
    ঢাকা সময়: ০৬:৫৭

মৃতশিশু জন্মানোর হার প্রতিরোধ সম্ভব

পথরেখা অনলাইন :  মা হওয়ার উত্তেজনায় অনেক খুশি ছিলেন মৃদুলা। কিন্তু সন্তান জন্মের দুই ঘণ্টা আগে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। মিথিলা (৩১) একটি মৃত শিশু প্রসব করেন।চিকিৎসকরা বলছেন, যেকোনো কারণে হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে এবং চিকিৎসা পেতে দেরি হলে মৃতশিশু জন্মাতে পারে। এমনকি মায়েরও প্রাণ চলে যায়। তাই সাবধান থাকা প্রয়োজন।

মৃতশিশু জন্মানোর কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক এবং সেন্ট্রাল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা দেওয়ান বলেন, ‘মৃতশিশু জন্মানোর অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ, কিছু রয়েছে গর্ভকালীন জটিলতা। সাধারণভাবে বলতে গেলে, মায়ের পেটে ভ্রুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকা প্রয়োজন। এ জন্য গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হিমোগ্লোবিন, অ্যালবুমিন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ভ্রুণের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং এসব কারণে মৃতশিশু জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ে। প্রসবের পূর্বে মায়ের কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হলে, প্রি-একলাম্পশিয়া, ভাইরাল ইনফেকশন বা প্রসবের নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে কিংবা প্রসবের সময় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না থাকলে মৃতশিশু জন্মাতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জরায়ুতে পানির মধ্যে শিশু থাকে। সেখানে অনেক সময় পানি কম থাকে বা পানি ভেঙে পড়ে যায়। সেক্ষেত্রেও জন্মানোর আগেই শিশু পেটে মারা যেতে পারে। এখনও আমাদের দেশে শতকরা ৪৮ ভাগ ডেলিভারি বাড়িতে হয়। এতে নানা জটিলতা তৈরি হয় এবং এভাবেও মৃতশিশু জন্মাতে দেখা যায়। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ডেলিভারি করা ঠিক নয়।’

মৃতশিশু জন্মানোর কারণ অনুসন্ধান এবং তা প্রতিরোধের জন্য সম্প্রতি সরকার এবং ইউনিসেফ একসাথে কাজ করছে। মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘ইউনিসেফ’-এর কৈশোর ও মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু সাদত মো. সায়েম বলেন, ‘আগে মৃতশিশু জন্মানোর বিষয়টি রেকর্ড হতো না। চলতি বছর থেকে এটা রেকর্ড হচ্ছে। মূলত দুটি কারণে এটা রেকর্ড হতো না। এক. কুসংস্কার এবং দুই. মৃতশিশু জন্মালে ওই মা এবং তার পরিবারকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না। সমাজে তারা নেতিবাচকভাবে চিহ্নিত হন। এ জন্য অনেক সময় মৃত শিশু জন্মালেও তা স্বীকার করা হতো না। বলা হতো শিশুটি জন্মের পরপরই মারা গেছে, কিংবা জন্মের পর কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল, সে শ্বাস নিয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে পরে মারা গেছে। ফলে শিশুটির মৃত্যু নবজাতকের মৃত্যু হিসেবে রেকর্ড হতো।’

তবে দ্রুত চিত্র বদলাচ্ছে। সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আজিজুল আলীম। তিনি বলেন, ‘ম্যাটারনাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডেথ সার্ভিলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স (এমপিডিএসআর)- কর্মসূচিতে বর্তমানে মৃতশিশুর বিষয়টি যোগ করা হয়েছে। এটি এখন ৪৮টি জেলায় কাজ করছে। শিগগিরই তা ৬৪টি জেলায় কার্যকর হবে। জেলা, থানা এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়েও মৃতশিশু জন্মালে তার কারণ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে একটি নির্দিষ্ট ফরমেট পূরণ করে জাতীয় পর্যায়ে তা পাঠানো হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে মৃতশিশু জন্মানোর এই হার ১০-১২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। যা এসজিডির সাথে যুক্ত হবে।’

তিনি আরো বলেন, “সন্তান নেওয়ার আগে একজন মায়ের পূর্ব প্রস্তুতিও প্রয়োজন। এ জন্য আমরা কাউন্সিলিংয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সরকার এটি গ্রাম পর্যায়েও শুরুর কথা ভাবছে। মৃতশিশু জন্মানো প্রতিরোধের জন্য সরকার ‘প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি’ বাড়ানো এবং ‘প্রসবপূর্ব চেকআপ’কেও গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তবে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডা. ফারহানাও কাউন্সিলিয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে মায়েরা আগে থেকে সচেতন হতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু গর্ভবতী মায়ের একার বিষয় নয়। এর সাথে জড়িত বহু বিষয়। এটা প্রতিরোধ করতে হলে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী চেকআপ করতে হবে এবং বাড়িতে ডেলিভারি না করে হাসপাতাল, ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারির প্রয়োজনীয় সাপোর্ট থাকতে হবে। তাই এ বিষয়ে পরিবার এবং সরকারকে যত্নশীল হতে হবে।’

সর্বোপরি, গর্ভবতী মায়ের সচেতনতা এবং পরিবার ও সরকারের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মৃতশিশু জন্মানোর হারকে রুখে দেয়া সম্ভব বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট সকলে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্বের কথাও তারা তুলে ধরেন।
পথরেখা/এআর
 

 

  মন্তব্য করুন
আরও সংবাদ
×

পথরেখা : আমাদের কথা

আমাদের পোর্টালের নাম— pathorekha.com; পথরোখা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিনের সত্য-সংবাদের পথরেখা হিসেবে প্রমাণ করতে চাই। পথরেখা সারাদেশের পাঠকদের জন্য সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মতামত প্রকাশ করবে। পথরোখা নিউজ পোর্টাল হিসেবে ২০২৩ সালের জুন মাসে যাত্রা শুরু করলো। অচিরেই পথরেখা অনলাইন মিডিয়া হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। পথরোখা  দেশ কমিউনিকেশনস-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
 
পথরোখা জাতীয় সংবাদের উপর তো বটেই এর সঙ্গে রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, খেলাধুলা, কৃষি, বিনোদন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতা এবং চৌকস ফটোগ্রাফিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখে।
 
পথরোখা’র সম্পাদক আরিফ সোহেল এই সেক্টরে একজন খুব পরিচিত ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ ৩০ বছর কর্মজীবনে তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা, আজকের কাগজ, রিপোর্ট২৪ ডটকম প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এ ছাড়া তিনি সরকারী ক্রীড়া পাক্ষিক ‘ক্রীড়া জগত’ ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিক অপ্সরা নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি জনপ্রিয় অনলাইন দেশকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
পথরেখা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও, এটি দেশের নাগরিকের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে কথা বলবে। ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভুলতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি যে জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। পথরেখা রাজনৈতিক ইস্যুতে নির্দলীয় অবস্থান বজায় রাখবে। একটি নিরপক্ষ অনলাইন হিসেবে আমরা নিজেদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করার শতভাগ প্রছেষ্টা করব। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেও কিছু ভুল হতেই পারে। যা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি সব মহলেই। সততা পথে অবিচল; আলোর পথে অবিরাম যাত্রায় আমাদের পাশে থাকুন; আমরা থাকব আপনাদের পাশে।
 
উল্লেখ্য, পথরেখা হিসেবে একটি প্রকাশনী দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এবার উদ্যোগ নেওয়া হলো অনলাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে প্রকাশ করার।