মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন সমীহ করা দল প্রমাণিত; গত কয়েক বছর ধরে। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন দলটি যে সাফল্য দেখিয়েছিল; সেটিকে প্রথম হিসেবে ধরা হয়। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার দুই বছর পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছিল লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। সামনের বছর ভারতের অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ওয়ানডে সুপার লিগের আয়োজন করছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রা সংস্থা। সেখানেই চমক দেখিয়েছে তামিম ইকবালের দল। আফগানিস্তান সিরিজ শুরুর আগে বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের ঝুলিতে ছিল ১২ ম্যাচে ৮ জয়ে ৮০ পয়েন্ট। সামনে ছিল কেবল ইংল্যান্ড। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। একই সঙ্গে ইংল্যান্ডকে টপকে সুপার লিগের শীর্ষে উঠে গেছে। প্রতিযোগিতাটিতে প্রথম দল হিসেবে ১০০ পয়েন্ট রাসেল ডোমিঙ্গো-জেমি সিডন্স শীষ্যদের। সুপার লিগের পয়েন্টের মারপ্যাঁচেই ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা বিচার করা হবে। যেখানে বাংলাদেশ-আফগান সিরিজের আগে ১৫ ম্যাচে ৯ জয়ে ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ছিল ইংল্যান্ড।
১২ ম্যাচে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে আফগানিস্তান সিরিজ শুরু করা বাংলাদেশ দল টানা ২ ম্যাচ জিতেই ইংল্যান্ডকে হটিয়ে উঠে গেছে শীর্ষে। প্রতিটি দল ২৪ ম্যাচে ২৪০ পয়েন্টের জন্য লড়ছে। যেখানে প্রথম দল হিসেবে বাংলাদেশের নামের পাশে যোগ হলো ১০০ পয়েন্ট। সেটিও মাত্র ১৪ ম্যাচে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারত ১২ ম্যাচে অর্জন করেছে ৭৯ পয়েন্ট। ১৮ ম্যাচে ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে আয়ারল্যান্ড। সমান ১৮ ম্যাচ ৬ জয় শ্রীলঙ্কার। ৬২ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে টেবিলের পঞ্চম স্থানে। ছয়ে থাকা আফগানিস্তান ৮ ম্যাচে অর্জন করেছে ৬০ পয়েন্ট। ৯ ম্যাচে আফগানদের সমান ৬০ পয়েন্ট নিয়ে সাতে অস্ট্রেলিয়া। ১৫ ম্যাচ ৫ জয়ে ৫০ পয়েন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তারা আছে ৮ নম্বরে। নয় আর দশে আছে পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ ম্যাচ খেলে ৪০ পয়েন্ট বাবর আজমের দলের। ১০ ম্যাচে মাত্র ৩৯ পয়েন্ট প্রোটিয়াদের। এর আগে ১৯৮৬ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। তবে একাধিক ম্যাচের সিরিজ খেলতে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার ঘরের মাটিতে একাধিক ম্যাচের সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। এরপর ২৩ বছরে ৭৬টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে দলটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজটি বাংলাদেশের ৭৭তম। গত শুক্রবার আফগানদের হারিয়ে বাংলাদেশ ২৯তম শিরোপার স্বাদ পেলো।
আগের ২৮ সিরিজের মধ্যে প্রতিপক্ষকে ১৫ বার হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল আফগানিস্তানকে শেষ ম্যাচে হারাতে পারলে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬, আর পয়েন্ট হবে ১১০! ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তিন বছর মেয়াদি সুপার লিগে খেলছে মোট ১৩টি দল। ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে অংশ নিয়েছে ২০১৫-১৭ আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগের বিজয়ী দল নেদারল্যান্ডস। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দল এ সময়ে ৮টি করে সিরিজ খেলবে। ৪টি দেশের মাটিতে আর বাকি চারটি প্রতিপক্ষের মাঠে। প্রতিটি সিরিজ হবে ৩ ম্যাচের করে। যেখান থেকে শীর্ষ সাত দল সরাসরি অংশ নেবে ২০২৩ সালে ভারত বিশ্বকাপে। স্বাগতিক হিসেবে ভারত অবশ্য সরাসরিই খেলবে। এ সিরিজগুলোতে প্রত্যেক ম্যাচ জয়ের জন্য ১০ পয়েন্ট করে পাবে দলগুলো। তাই প্রত্যেকটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে।
যদিও আগামী ২০২৭ বিশ্বকাপে থাকছে না এ পদ্ধতি। সেখানে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা ১০ দল সরাসরি খেলবে। আর বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসবে আরও চার দল। ৮৮ রানে জয়ের এই ম্যাচে দারুণ কিছু মাইলফলক অর্জন করেছেন মুশফিকুর রহিম। লিটন দাসের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়েন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। দুজনের গড়া ২০২ রান ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। রেকর্ড জুটিতে লিটন সেঞ্চুরি করেন। মাত্র ১৪ রানের জন্য মুশফিক পাননি ২২৯ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। ৪১ নম্বর হাফসেঞ্চুরির ইনিংসটি ছিল ৮৬ রানের। সেঞ্চুরি না পেলেও রেকর্ড গড়েছেন টাইগারদের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার। হাফসঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন সাকিব আল হাসানকে। ওয়ানডেতে এই মুহূর্তে মুশফিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২২৯ ম্যাচে তার রান ৮ সেঞ্চুরি ও ৪১ হাফসেঞ্চুরিতে ৬৬৭০। সবার ওপরে তামিমের রান ২২১ ম্যাচে ১৪ সেঞ্চুরি ও ৫১ হাফসেঞ্চুরিতে ৭৬৮৬, তিনে সাকিবের রান ২১৭ ম্যাচে ৯ সেঞ্চুরি ও ৪৯ হাফসেঞ্চুরিতে ৬৬৩০ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রান ২০২ ম্যাচে ৪৪৮৩ রান ৩ সেঞ্চুরি ও ২৫ হাফসেঞ্চুরিতে।
শুধু ওয়ানডে নয়, টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে টাইগার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১৩ হাজার রানের মাইলফলকও গড়েছেন মুশফিক। এখানেও সবার ওপরে টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি- টুয়েন্টি ৩ ফরম্যাটের ৪০৭ ম্যাচে মুশফিকের রান ১৩০৯৪। ৭৮ টেস্টে রান ৪৮৭৩ ও ৯৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান ১৪৬৫। তিন ফরম্যাটে তামিমের রান ৩৬৩ ম্যাচে ১৪২৩২। ৬৪ টেস্টে ৪৭৮৮ এবং ৭৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৭৫৮ রান এবং সাকিবের রান ৩৭০ ম্যাচে ১২৫৫৩। ৫৯ টেস্টে ৪০২৯ এবং ৯৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ১৮৯৪ রান। টি-টুয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর রান ৩৬৫ ম্যাচে ৯৩৭৮। টেস্টে অবসর নেওয়া মাহমুদউল্লাহর রান ৫০ টেস্টে ২৯১৪ ও ১১৩ টি- টুয়েন্টি ম্যাচে ১৯৭১ রান। ২৮ ফেব্রুয়ারি; সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানদের হারাতে পারলে হোয়াইটওয়াশের পাশাপাশি সুপার লিগে আরেকটু এগিয়ে যেতে পারবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।
দেশকণ্ঠ/আসো