দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ ২৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া শেষ হচ্ছে বলে ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে রাজধানীসহ দেশজুড়ে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নামে। ভিড় দেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গণটিকাদান কর্মসূচির সময়সীমা আরও দুদিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, গণটিকার সময় বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রথম ডোজ চলবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আবার এও বলেন, আগের মতোই প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ কার্যক্রম চলবে।
২৬ ফেব্রুয়ারি একদিনে এক কোটি টিকা দেওয়া হবে, সেইসঙ্গে টিকার প্রথম ডোজ আর দেওয়া হবে না—স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন ঘোষণায় টিকাকেন্দ্রগুলোতে শনিবার সীমাহীন ভোগান্তি ও অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। ভোর পাঁচটা থেকে টিকে নিতে এসেও টিকা পাননি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও একদিনের জন্য ছুটি নিয়েও শনিবার এসেছেন, কিন্তু টিকা পাননি।
‘ছুটি কি প্রতিদিন পাবো?’ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিরাপত্তারক্ষীকে প্রশ্ন করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পোশাক শ্রমিক। রংপুরে সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কিতেও অনেকে আহত হয়েছেন। চরম বিশৃঙ্খলভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন টিকাগ্রহীতারা। এমন ভোগান্তিরমূলে ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘শেষ তারিখ’ ঘোষণা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টিকার কমতি নেই। সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, আজকের পরও টিকার প্রথম দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ চলমান থাকবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণটিকা কার্যক্রমের সময় আরও দুদিন বাড়ানো নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা কখনও বলিনি, করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আমরা বলেছি, ২৬ তারিখের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
অথচ অধিদফতরেরই আরেক কর্মকর্তা ও ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব একাধিকবার বলেছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হচ্ছে টিকার প্রথম ডোজ কার্যক্রম। তিনি এও বলেছেন, কেবল বিশেষ প্রয়োজনে সীমিত পরিসরে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শামসুল হক বলেন,‘যদি প্রয়োজন থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা আলাদা ক্যাম্পেইন করবো। তাছাড়া প্রথম ডোজের রুটিন টিকাদান কর্মসূচি আর চলবে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ডোজের টিকাকে একটা ধারায় আনতে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ করা হবে। কিন্তু কেউ যদি বিশেষ কারণে, যদি অসুস্থ থাকেন, তাকে তো দিতে হবে। বিশেষ কারণে প্রথম ডোজ দেবো, নয়তো নয়।’
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক বুলেটিনে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘আমরা নির্ধারণ করেছি, ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজের কার্যক্রম চালু রাখবো এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ দিন। সেদিন প্রথম ডোজের জন্য মেগা ক্যাম্পেইন হবে।’
তার আগের দিন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ খুরশিদ আলম টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হচ্ছে বলে জানান বিশেষ এক ভিডিওবার্তায়। সেদিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘অধিক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে আমাদের প্রথম ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। পরে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবো।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ফেসবুকে পেজেও একাধিকবার বিশেষ ঘোষণা শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হবে টিকার প্রথম ডোজ প্রদান কর্মসূচি।’
মহামারিকালের দুই বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সমন্বয়হীনতা শুরু থেকেই দেখে আসছি জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, ‘মাল্টিপল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর কথা বলছে, যেটা অপ্রত্যাশিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘একদিনে এক কোটি টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়। সেইসঙ্গে তারা বললেন, ২৬ জানুয়ারিতে শেষ হবে টিকার প্রথম ডোজ। এখন কেন তারা বলছে, এটা কন্টিনিউ করবে। তাহলে আগে কেন ২৬-এ শেষ বলা হলো?’
ডা. রশিদ যোগ করেন, ‘এর মানে হলো স্বাস্থ্য বিভাগের কনফিডেন্স ছিল না। জনগণের এই টিকা নেওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। টিকা নিতে পারলে তারা নেবে। যখন দেখা গেলো তারা সবাইকে টিকা দিতে পারলো না এবং আরও টিকা রয়ে গেছে তখন বলা হচ্ছে, টিকা আরও দেওয়া হবে।’
‘কিন্তু শনিবার জনগণের যে ভোগান্তিটা হলো এর জন্য দায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। মন্ত্রণালয়ের এখন জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে তারা আসতে বলেছেন, মানুষ এসেছেন। কিন্তু সে উৎসবে তারা প্রতারিত হয়েছেন। দে মাস্ট অ্যাপোলোজাইজ।’
চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিএসআর)-এর মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটা ছিল চরম খামখেয়ালিপনা, দায়িত্বহীনতা এবং অযোগ্যতার পরিচায়ক।
দেশকণ্ঠ/রাসু