মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : এক বছরের মধ্যেই আরেকটি বিশ্বকাপের ময়দানী লড়াইয়ে নামতে হবে বাংরাদেশকে। চলতি বছরই অষ্টেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। আর ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে বসতে যাচ্ছে। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে চোঁখ এখন জেমি সিডন্সের। জাতীয় দলের এই ব্যাটিং পরামর্শক আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে তার দ্বিতীয় মেয়াদে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এখন দক্ষিন আফ্রিকার দলের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের উন্নতিতে তার চোঁখ এখন। কাজটিকে উপভোগ করতে করতে দলের উন্নতিতে ভুমিকা রাখতে চান তিনি। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টাইগারদের অস্ট্রেলিয়ান কোচ সিডন্সকে বিদায় বলে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অনুমান করার প্রয়োজন নেই যে, সেই বিদায়টা কোনো পক্ষ থেকেই ভালোভাবে হয়নি। তবে মনে অভিযোগ-অভিমান থাকলেও সেই বিসিবিই টাইগারদের সেই পুরনো গুরুকে ফিরিয়ে এনেছে। এবার অবশ্য তার দায়িত্ব প্রধান কোচ হিসেবে নয়। শিষ্যদের মাঝে তার নয়া পরিচয় হবে ব্যাটিং পরামর্শক। আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জাতীয় দলের হয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এখন আগামী দু’বছর নিজের অভিজ্ঞায় রাঙাতে চান দলকে। তবে পুরনো অভিমান থাকলেও বাংলাদেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছেন অকপটে। তার বিদায় হয়েছিল বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর। তবে তাতে কি আবারো তার চোখ সেই বিশ্বকাপেই। এবার নতুন মিশন। এই বছর টাইগাররা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে তারই দেশে। আপাতত তার জন্যই শিষ্যদের প্রস্তুত করতে চান। নিজের এমনই লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেছেন দক্ষিন আফ্রিকা যাবার আগে। তিনি আশাবাদী কন্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ভাল কিছু করা যে সম্ভব সেটা অনেক আগেই প্রমাণিত হয়েছে। ওয়ানডেতে দলটা বেশ বাল, তবে টি-টোয়েন্টিতে উন্নতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। আমরা যে ম্যাচই খেলি না আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতা।’
সিডন্স আরও জানান, ’বাংলাদেশ দলের উন্নতিটা হতে পারে ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টি বা টেস্ট। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের মনোযোগের বড় একটা অংশ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে, সবারও তাই রয়েছে। আমার মনোযোগ থাকবে বিশ্বকাপের দিকে।’ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশনে চোখ সিডন্সের। তার আগে আগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ দল। তার মানে নিজের শিষ্যদের দেখে নেয়ার। তাই চট্টগ্রামেই সেই প্রস্তুতিটা নিতে শুরু করে দিয়েছেন। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আফিফ হোসেন-মেহেদি হাসান মিরাজ-লিটন দাস-মুশফিকুর রহিমরা দারুণ ব্যাটিং করে এনে দিয়েছেন সাফল্য। তাই পরীক্ষিতদের নিয়ে তার খুব একটা চিন্তা নেই। ওয়ানডে সিরিজে নেই এমন চার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটার-মুনিম শাহরিয়ার, নাঈম হাসান, শহিদুল ইসলাম, মেহেদী হাসানকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজও করেন।
দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে কিছুটা অবদান রাখতে পারাটাই এখন বড় লক্ষ্য। কাজে নেমে পড়ার আগে ব্যাটিং কোচ সিডন্স জানালেন তার বাংলাদেশে আসার কারণ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার ভাললাগার জায়গা। আমরা যদি অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে বেশ ক’জন ভালো টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটার পাই তাহলে দিন শেষে আমরা ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য ভালো একটা দল পাবো। আমরা জানি ভারতে বিশ্বকাপ জিততে হলে বা ভালো করতে হলে আমাদের বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে।’ বিশেষ করে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন বড় রানের সংগ্রহ। এমনটাই মনে করেন সিডন্স। তাই বড় কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষাতে না গিয়ে দল সাজাতে মনোযোগী হতে চান তিনি। কোচ আরও বলেন, ‘ভারত বিশ্বকাপে ম্যাচ জিততে হলে প্রতি ম্যাচেই তিন শতাধিক রান করতে হবে বলে মনে করেন সিডন্স, ‘২৬০-২৭০ রান করে আমরা কিছুই করতে পারবো না, আমাদের কমপক্ষে ৩২০ এর ওপরে রান করতে হবে। আমি দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই না। তবে আমার হাতে যে ক’জন ব্যাটার রয়েছে তাদের নিয়েই কাজ করতে চাই। অবশ্যই টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আমার হাতে বেশ ক’জন ব্যাটারের তালিকাও রয়েছে।’
বিশ্বকাপ দলে কাদের নিয়ে তিনি ভাবছেন বা কারা জায়গা করে নেবে সেটা নিয়ে এখনই কোনো কথা বলতে নারাজ টাইগারদের নয়া ব্যাটিং পরামর্শক সিডন্স। তিনি বলেন, ‘কে দলে থাকবে না থাকবে সেটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি আসলে সেইসব ছেলেদের নিয়ে কাজ করতে চাই যারা টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে উন্নতি করতে চায়।’ ২০০৭ সালে টাইগারদের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হেড কোচ ছিলেন সিডন্স। সেখানে আছে তার তিক্ত অভিজ্ঞতাও। যে কারণে নতুন করে কাজ শুরুর আগে তার টাইগারদের নিয়ে আবেগ কতটা তাও তুলে ধরেন অকপটে। চাকরি হারালেও যে বাংলাদেশের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখতেন তা জানাতে ভোলেননি। তিনি বলেন, ‘প্রথম মেয়াদে আসার পর, বাংলাদেশকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করতো না। সেই কয়েকটা বছর এখানে খুব উপভোগ করেছি। এখানে ফিরতে মুখিয়ে ছিলাম, আশা নিয়ে ছিলাম সুযোগের সন্ধানে, সেটি পেয়েছি বলেই আজ আমি এখানে। বিশ্বের যেখানেই হোক আমি কোচিং করাতে প্রস্তুত ছিলাম। বাংলাদেশের জন্য আমি সহজলভ্য ছিলাম। কিছু কিছু বোর্ড পরিচালক ও ক্রিকেটারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। আমার সামনে একটা সুযোগ আসে বিসিবি’র এইচপি’তে (হাই পারফরম্যান্স) ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করার। যেখানে সব জুনিয়র ও জাতীয় দল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি পুরোটাই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। এটি পুরোসময়ের জন্য নাকি অন্য কিছু- আমি নিশ্চিত ছিলাম না। তারপরও বিষয়টাকে গুরুত্বও দেইনি’।
তামিম ইকবালের ‘সেরা ক্রিকেট’ এখনো সামনে পড়ে আছে বলে মনে করেন জেমি সিডন্স। তামিম ইকবাল নিজে বলেছেন, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট জেমি সিডন্স। ২০১১ সালে সিডন্স বাংলাদেশ দলের চাকরি হারানোর পর আবার নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন বিসিবির। এখন ব্যাটিং পরামর্শকের ভূমিকায় এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ। তামিমের ‘ফুটওয়ার্ক’ নিয়েই বেশ কাজ করতে দেখে গেছে। নেট অনুশীলনে ছক কষে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এই লেন্থের বল এদিকে এভাবে খেলতে হবে, এখানে পেলে ঐদিকে খেলতে হবে। কখনো নেটের পিছনে, কখনো সামনে, কখনো পাশ থেকে তামিমের কৌশলগুলো ধরিয়ে দেন সিডন্স। ধরিয়ে দেন সঠিক জায়গা পা নিয়ে খেলার কৌশল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে তামিমের যাত্রাটা বেশ নজরকাড়াই ছিল। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পোর্ট অফ স্পেনে ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানের সেই স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। তবে ওই ইনিংসের পর সেভাবে সুবিধা করতে পারছিলেন না। ভারতের বিপক্ষে সেই ইনিংসের পর ১২ ওয়ানডেতে ফিফটি পাননি তামিম। বলা হতো বাঁহাতি এই ওপেনারের হাতে তখন সীমিত কিছু শট ছিল।
দেশকণ্ঠ/আসো