দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : নর্দাম্পটনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুখস্মৃতিটাই যেনো ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ ২০২২ এ হ্যামিল্টনে। ছেলেদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অভিষেকে আসরে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে হারিয়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল উৎসবে ভাসিয়েছে বাংলাদেশকে। ২৩ বছর পর বাংলাদেশের মেয়েদের হাত ধরেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। প্রতীক্ষিত নারী বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ অভিষেক আসরেই পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবে দিয়েছে পূর্ণতা। পাকিস্তানের মেয়েদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওডিআই রেকর্ডটা ছিল লড়াকু। নারী বিশ্বকাপে এই চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অবতীর্ন হওয়ার আগে ১১ ম্যাচে ৫ জয়ের বিপরীতে হেরেছে বাংলাদেশ ৬টিতে। তবে নিকট অতীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচী এবং হারারেতে ২ ম্যাচের ২টিতে জিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ছিল আত্মবিশ্বাসী। হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবতীর্ন হওয়ার আগে তাই বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক জ্যোতির কণ্ঠে ছিল হুংকার। সেই হুংকারে দিয়েছেন কাঁপিয়ে পাকিস্তানকে।
ওম্যান্স ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরকে (২৩৪/৭) ম্লান হতে দেননি জ্যোতির দল। ওপেনিং পার্টনারশিপের ৯১, দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৬৪ রানে বাংলাদেশ নারী দলকে দুর্ভাবনায় রেখেছিল পাকিস্তানের মেয়েরা। শেষ ৬০ বলে ৬৭ রানের টার্গেটে হাতে যখন পাকিস্তানের ৮ উইকেট, তখন জয়ের পাল্লা তাদের দিকেই ঝুঁকেছিল। তবে ডেখ ওভারে বোলিংয়ে লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন ম্যাচের ফল নির্ধারক হয়েছেন। ৪২ তম ওভারে ওমামিয়া সোহেলকে (১১) মিড অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে দিয়েছেন প্রথম ধাক্কা। ৪৪ তম ওভারে পর পর দুই ডেলিভারিতে আলিয়া রিয়াজ (০) ও ফাতিমা সানাকে (০) এলিডাব্লুউতে ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের হাত থেকে ম্যাচটা ছুটিয়ে এনেছেন। শেষ ১৮ বলে ২৫ রানের টার্গেট প্রুতিপক্ষকে দিয়েই জয়ের সুবাস পেয়েছে বাংলাদেশ। সিদরা আমিন একাই টেনে নিচ্ছিলেন পাকিস্তানকে। তবে রিতু মনির ফ্লাট থ্রোতে এই সেঞ্চুরিয়ানকে (১৪০ বলে ১০৪) রান আউট করেই ম্যাচটা পুরোপুরি হাতের মুঠোয় নিয়েছে বাংলাদেশ। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পুঁজিটা ভালই পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-এর ১০ ওভারে ৫১/১, শেষ পাওয়ার প্লে-এর ৫৯/৪ এ বাংলাদেশ স্কোর করেছে ২৩৪/৭। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বোচ্চ টিম স্কোর। নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি এসেছে ফারজানা হক পিংকির ব্যাট থেকে, দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে (৫২)। বিশ্বকাপে উপর্যুপরি দ্বিতীয় ফিফটি উদযাপন করেছেন তিনি। হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করে থেমেছেন ৭১ রানে। ১১৫ বলে ৫ চার এ শোভিত ইনিংসটি থেমেছে তার নাসরা সান্ধুকে ক্রস খেলতে যেয়ে কট বিহাইন্ডে।
ফাতিমা সানাকে পর পর ২টি বাউন্ডারি মেরে পরের বলেও চেয়েছিলেন বাউন্ডারি মারতে। ফ্লিক শট নিতে যেয়ে টাইমিং হয়নি। আম্পায়ার এলবিডাব্লুউর আপীলে সাড়া দিয়েছিলেন। তবে রিভিউ আপীলে ৩৬ রানের মাথায় বেঁচে গেছেন। বেঁচে যাওয়া পিংকি তৃতীয় উইকেট জুটিতে নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে ১২৩ বলে ৯৬ রান যোগ করেছেন। ফিফটি হাতছাড়া করেছেন জ্যোতি (৬৪ বলে ৪৬)। ওপেনার শারমিনও হাতছাড়া করেছেন ফিফটি (৫৫ বলে ৪৪)। ওম্যান্স ওডিআই ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরের ম্যাচে সবচেয়ে বড় অবদান ফারজানা পিংকির। সালমা খাতুনের ইকোনমি বোলিং (৯-০-২৯-১), রোমানার বোলিং (৭-০-২৯-২)ও বাংলাদেশকে দিয়েছে জয়ের আবহ।তবে পাকিস্তানের হাতের মুঠে থেকে ম্যাচ বের করে আনার কৃতিত্ব ফাহিমার (৩/৩৮)। ডেথ ওভারে ম্যাচটা ঘুরিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারে তাই বিবেচ্য হয়েছেন তিনি।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : ফাহিমা খাতুন (বাংলাদেশ)।
বাংলাদেশ : ২৩৪/৭ (৫০.০ ওভারে), শামীমা ১৭,শারমিন ৪৪, ফারজানা পিংকি ৭১, নিগার সুলতানা ৪৬,রোমানা ১৬, রিতু মনি ১১, ফাহিমা ০, সালমা ১১, নাহিদা ২, ফাতিমা সানা ১০-০-৫৪-১, নিদা দার ১০-০-৪৫-১, নাসরু সান্ধু ১০-০-৪১-৩, ওমামিয়া সোহেল ৮-১-৩১-১।
পাকিস্তান : ২২৫/৯ (৫০.০ ওভারে), নাহিদা খান ৪৩, সিদরা আমিন ১০৪, বিসমাহ মারুফ ৩১,ওমামিয়া সোহেল ১০, নিদা দার ০, আলিয়া রিয়াজ ০,ফাতিমা সানা ০, সিদরা নেওয়াজ ১, ডায়না বেগ ১২, নাসরু সান্ধু ৯*, ঘুলাম ফাতিমা ৫*, জাহানারা ৪-০-২০-১, সালমা ৯-০-২৯-১, রোমানা ৭-০-২৯-২, ফাহিমা ৮-০-৩৮-৩।
ফল : বাংলাদেশ ৯ রানে জয়ী।
দেশকন্ঠ/অআ