মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ব্যাকফুটের বাংলাদেশ দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। তিন ওয়ানডে সিরিজের সূচনা ম্যাচে ৩৮ রানের জয় তুলে নিয়েছে সাকিব-তাসকিনরা। বাংলাদেশের ৩১৪ রানের জবাব দিতে নেমে ২৭৬ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। এই জয়ই ইতিহাস। এই জয়ের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বাংলাদেশ কোনো ফরম্যাটে জয়ের দেখা পায়নি।
এদিন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোলারদের ব্যবহার করেছেন অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রুও এনে দিয়েছেন বোলাররা। বল হাতে মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন রাসি ফন ডার ডুসেন। তিনি ব্যক্তিগত ৮৬ রান করে তাসকিনের বোলে ক্যাচ আউট হন। টাইগার বোলার মেহেদি হাসান মিরাজ ৯ ওভার বল করে ৬১ রান খরচে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট তুলে নেন। এরপর তাসকিন আহমেদ ১০ ওভার বল করে ৩৬ রানের খরচায় তুলে নেন প্রোটিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট। সর্বশেষ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন কেশব মহারাজ।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ লিটন দাস, সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলীর তিন অর্ধশতকে ৩১৪ রান করে। শুরুতে তামিমের পর শেষদিকে অবদান রাখেন মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, আফিফরা। বাংলাদেশ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৪ রান। সব মিলিয়ে দলীয় পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত বাংলাদেশ পেল সেরিয়নে দুর্দান্ত জয়। ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ডেভিড মিলার স্ট্যাম্প আউট হয়ে যাওয়ার পরই ধারাভাষ্যকাররা বলে দিয়েছেন, ম্যাচটা এখানেই শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয় নিশ্চিত। বাকি ছিল আর কতদুর যেতে পারে স্বাগতিক প্রোটিয়ারা। ৩১৫ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে ৪৮.৫ ওভারে প্রোটিয়াদের অলআউট করে দিয়েছে ২৭৬ রানে। ৩৮ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তামিম ইকবাল অ্যান্ড কোং। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে ৯ বার মুখোমুখি হযেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কোনোবারই জয় পায়নি। জয় তো দূরে থাক, নূন্যতম লড়াই করারও সাহস দেখাতে পারেনি টাইগাররা। সবচেয়ে ছোট ব্যবধানে পরাজয় ছিল ৬১ রানে (২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর পচেফস্ট্রমে)।
আর সে জায়গায় এবার দেশ ছাড়ার আগেই তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান এবং কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোরা বলছিলেন, অন্তত একটি জয় হলেও পেতে চান তারা। রাসেল ডোমিঙ্গো তো বলেই দিয়েছিলেন, এবার তিনি এমন কিছুর আশা করছেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে কখনো হয়নি। ঠিক ছকে আঁকা একটি ম্যাচ ছিল এটা। শুরুতে তামিম ইকবাল-লিটন দাস মিলে ৯৫ রানের যে জুটি গড়েছিলেন, সেখানেই গড়ে উঠেছিল আত্মবিশ্বাস। যে কারণে তিন ফিফটিতে বাংলাদেশের রান পার হলো ৩০০। ৩১৪ রানে গিয়ে থামলো টাইগাররা। আফগানিস্তান সিরিজে নিজেকে প্যাসেঞ্জার মনে করা সাকিব আল হাসানই ছিলেন সবচেয়ে সফল। ৬৪ বলে তিনি খেললেন ৭৭ রানের ইনিংস। সবমিলিয়ে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেদের কাজটি করে দিয়েছেন। এরপর বোলারদের হাতে ছিল ম্যাচ।
শেষ পর্যন্ত তারাও প্রমাণ করলো নিজেদের। জয়ের লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ হলো বাংলাদেশের। চতুর্থ ওভারেই প্রোটিয়া ওপেনার জানেমান মালানের উইকেট তুলে নেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। তার বলে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন মালান। দুর্দান্ত ক্যাচটি তালুবন্দী করেন মুশফিকুর রহিম। প্রায় মাটিতে লাগতে যাওয়া বলটি এক ঝলকে গ্লাভসে তুলেন টাইগার উইকেটরক্ষক। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে প্রথম আঘাত আসলো দলীয় ১৮ রানের মাথায়। আম্পায়ারও অবশ্য নিশ্চিত ছিলেন না ক্যাচের ব্যাপারে। সফট সিগন্যাল ‘নটআউট’ দিয়ে থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠালেন। তাতে দেখা গেলো বল ব্যাটে লেগেছে, ক্যাচও পরিষ্কারভাবেই গ্লাভসবন্দী করেছেন মুশফিক। শরিফুলের বোলিং তোপের পরপরই আক্রমণে নিয়ে আসা হয় ডান-হাতি পেসার তাসকিন আহমেদকে। তামিমের এই আস্থার প্রতিদান দিলেন তাসকিন। অনেক নাটকীয়তার পর দক্ষিন আফ্রিকায় গিয়ে প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ৭৭ ও বল হাতে ১০ ওভারে ৫৬ রান দিয়েছেন। স্বভাবতই ম্যাচ সেরার পুরস্কার গেছে এই বাহাতি অলরাউন্ডারের হাতে।
বাংলাদেশ : ৩১৪/৭, ৫০ ওভার (সাকিব আল হাসান ৭৭, লিটন দাস ৫০, ইয়াসির আলি রাব্বি ৫০, তামিম ইকবাল ৪১, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৫, মেহেদি মিরাজ ১৯*; মার্কো জানসেন ২/৫৭, কেশভ মাহারাজ ২/৫৬, রাবাদা ১/৫৭)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২৭৬/১০, ৪৮.৫ ওভার (রাশি ফন ডার ডুসেন ৮৬, ডেভিড মিলার ৭৯, টেম্বা বাভুমা ৩১, কাইল ভেরাইনি ২১, কেশভ মারাহাজ ২৩, লুঙ্গি এনগিদি ১৫*; মেহেদি হাসান মিরাজ ৪/৬১, তাসকিন আহমেদ ৩/৩৬, শরিফুল ২/৪৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১/২৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
দেশকণ্ঠ/আসো