স্পোর্টস রিপোর্টার : ৩১৪ রানের ’স্বাস্থ্যবান’ ইনিংসের পর ২৭৬ রানে দক্ষিন আফ্রিকাকে অলআউট করে দিয়ে ৩৮ রানের দারুণ এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিকে জয় পাওয়ায় সিরিজে এখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা। আজকে দ্বিতীয় ম্যাচে মাছে নামছে দুই দল। সেখানে বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকবে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করা, অন্যদিকে দক্ষিন আিফ্রকা যে কোন মূল্যে সিরিজে ফেরাই লক্ষ্য। প্রথম ম্যাচে ’আন্ডারডগ’ হিসেবে শুরু করে জয় পাওয়ার পর এখন বাংলাদেশ ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামছে। প্রথম ম্যাচের আগেই আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ দল। ১৫ ম্যাচে ১০ জয়ে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে ছিল টেবিলের শীর্ষে। আর প্রথম ম্যাচ জিতে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে তামিম ইকবালের দল। তবে এবার চ্যালেঞ্জটা বেশ শক্ত। প্রতিপক্ষের নাম যে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে দেশটি সফর করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। প্রোটিয়াদের সঙ্গে একদিনের ক্রিকেটে ২১ বারের মুখোমুখি দেখায় চার জয়ের বিপরীতে হার ১৭টি। এবার চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রথম ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। এজন্য তামিম ইকবালের দল খেলতে চায় সাহসী ক্রিকেট।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে দারুণ কিছু অর্জন যোগ হয়েছে। অজেয় নিউজিল্যান্ড জয় করেছে টেষ্ট ক্রিকেটে। ব্ল্যাক ক্যাপসদের মাটিতে জয় থাকলেও দেশটির বিপক্ষে কোনো জয় ছিল না। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি এই তিন ফরম্যাটে টানা ৩২ ম্যাচ হারের পর প্রথম জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতে টাইগাররা। গত জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহসিক টেস্ট জয় আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে তামিম ইকবালদের। ঢাকা ছাড়ার আগে টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম নিউজিল্যান্ড আত্মবিশ্বাসকে পুঁিজ করে দক্ষিণ আফ্রিকা বধের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রথম ম্যাচ জিতে সেটার পক্ষে কথা বলার মতো মানুষ এখন অনেক খুজে পাওয়া যাবে। বিশ্বকাপ সুপার লিগে প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে এটাই প্রথম ম্যাচ জয় টাইগারদের। টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গা সিরিজ নিয়ে আশার কথা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই দক্ষিণ আফ্রিকায় আন্ডারডগ হিসেবে এসেছি। এখানে আগে কোনো ম্যাচ জিতিনি। তবে ওয়ানডে দল নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা লম্বা সময় ধরে এই ফরম্যাটে ভালো খেলেছি। খেলোয়াড়রা তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে। আমরা প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ একটি সিরিজ আশা করছি।’
তবে প্রথম ম্যাচ জিতে সবকিছুকে নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারী বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে জোহানেসবার্গ স্টেডিয়ামে মাঠে নামছে দুই দল। সুপার লিগে এই সিরিজের আগে ১৫ ম্যাচে ১০ জয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১০০ পয়েন্ট সবার উপরে। ১০ ম্যাচে ৩ জয়ে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে ১০ নম্বরে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০২ সাল থেকে খেলছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় ছাড়া আর কোনো জয় নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় নেই একটিও। ৬ টেস্ট ও ১৪ ওয়ানডে এবং ৪ টি-টোয়েন্টি’র সবগুলেতে হার। সেঞ্চুরিয়ানে নামার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও কাজে দিয়েছে। এছাড়া প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা। ২০১৯ সালের জুনে বিশ্বকাপে ওভালের ম্যাচটি মাশরাফি বাহিনী ২১ রানে জিতেছিল। আর গত কাল মধ্যরাতে বাংলাদেশ জিতেছে ৩৮ রানে
দুই দেশ এখন পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন ২১টি। টাইগারদের জয় সাকল্যে ৪টি এবং ১৭ হার। একটি খেলা হয়নি। তামিম বাহিনীর চার জয়ের দুটি বিশ্বকাপে এবং দুটি সিরিজে। প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে প্রথম জয় ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রোভিডেন্সে ৬৭ রানে। এরপর ২০১৫ সালে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি হারের পরের দুটি জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথমটি ৮ উইকেটে হারের পরের দুটি টাইগাররা জিতেছিল ৮ ও ৭ উইকেটে। আরেক জয় ওভালে ২০১৯ সালে। প্রথম ম্যাচে কেশভ মহারাজ আউট হতেই ইতিহাস লেখা হলো বাংলাদেশের নামে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রোটিয়াদের বিপক্ষে অধরা জয়ের আক্ষেপ ঘুচলো বাংলাদেশ দলের। এর আগে সেখানে খেলা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কোনো ম্যাচই জেতেনি টাইগাররা। তিন ফরম্যাটে ১৯ ম্যাচ খেলে পরাজয় সবকটিতে। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা ১৪ ওয়ানডের কোনোটিতেই জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ দল। সেই আক্ষেপ ঘুচলো এবার। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা সবশেষ সিরিজে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে প্রোটিয়ারা। ৩ ম্যাচ সিরিজ জেতে ৩-০ ব্যবধানে।
আজকে বাংলাদেশ জিতলে পাল্টে যাবে সকল হিসাব-নিকাল আর পূর্বাভাস। তবে বাংলাদেশ তাদের স্ভাবসুলভ খেলাটা খেলতে চায়। সেক্ষেত্রে জয়-পরাজয় যে কোন কিছুই হতে পারে। তবে প্রথম ম্যাচ থেকে যে ধাক্কা দিয়েছে স্বাগতিকদের সেখানে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে রাসেল ডোমিঙ্গোর শীষ্যরা।