দেশকন্ঠ প্রতিবেদন : দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে তাদের পেসাররা ভয়ংকর বলে যে কখা প্রচলিত, তা ভুল প্রমান করেছে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে। দ্বিতীয় ম্যাচে হয়েছে উল্টোটা। প্রথম স্পেলে এনগিডি (৫-১-১৬-১), রাবাদা (৭-০-২৫-৩) তোপে ছিন্ন-ভিন্ন বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিয়নে যাদের ব্যাটিংয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক দলকে, জোহানেসবার্গে তারা ফ্লপ ! সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ওপেনিং পার্টনারশিপে করেছে ৯৫। জোহানেসবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে স্কোরশিটে ৩৪ উঠতে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৫ উইকেট । প্রথম ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি, এবার তোমাদের পালা। এই বার্তাটি হয়তবা দিতে চেয়েছেন তামিম, লিটন, সাকিব,মুশফিক, ইয়াসির। তামিম ৯ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেও বাকি ৪ ব্যাটার সেদিন উদযাপন করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। তাতেই বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর করে (৩১৪/৭) স্বাগতিকদের বড় চ্যালেঞ্জ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম জয় উদযাপন করেছে। সেখান থেকে আফিফ (৭২)-মিরাজ (৩৮)-মাহমুদউল্লাহ'র (২৫) ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়িেছে বাংলাদেশ। আফিফ-মাহমুদউল্লাহর ৭১ এবং আফিফ-মিরাজের ৮৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশ স্কোর টেনে নিতে পেরেছে ১৯৪/৯ পর্যন্ত। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে জোহানেসবার্গের বাউন্সি উইকেটে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে বড্ড অসহায় মনে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের (৩০/৩)। বাউন্সারেই কেঁপেছে বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা। ৩৩তম জন্মদিনে তামিম থেমেছেন মাত্র ১ রানে। এনগিডির দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ (৪ বলে ১)। রাবাদার দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা বাউন্সে ফ্লিক করতে যেয়ে কভারে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিব। রাবাদার শর্ট বলে ভয় পাব কেনো ? তা জানিয়ে দিতে চেয়ে আপার কাট করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে হতাশ লিটন (২১ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৫)।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ সাহসী হাফ সেঞ্চুরিতে নিজের বুকের পাটার জানান দেয়া ইয়াসির রোববার শুরু থেকেই ধুঁকেছেন রানের জন্য। রাবাদার ৬ষ্ঠ ওভারে বাউন্সারে মুখ বাঁচাতে যেয়ে অনোন্যপায় হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ (১৪ বলে ২)। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র ব্যর্থ মুশফিক (৯) দ্বিতীয় ম্যাচে থেমেছেন ১২ রানে। পার্নেলের দ্বিতীয় ওভারে ডিফেন্স করতে যেয়ে এলবিডাব্লুতে কাঁটা পড়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। স্কোরশিটে ৩৪/৫এর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জার শংকাই দেখেছে অনেকে। তবে ৬ষ্ঠ জুটিতে মাহমুদউল্লাহ-আফিফের ৭১ রানে সে দুর্যোগ কেটেছে। বাভুমাকে এক ওভারে ফাইন লেগও কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে ছন্দ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ স্পিনার সামছিরর বলে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ (৩৪বলে ৩ চার এ ২৫)। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রখম হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করেছেন আফিফ সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৯৩ রানের হার না মানা ইনিংসের পর ৩ ম্যাচ বিরতি দিয়ে উদযাপন করেছেন ১২তম ম্যাচে দ্বিতীফ ফিফটি। শুরু থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা বোলারদের উপর হয়েছেন চড়াও। দক্ষিণ আফ্রিকা পেসারদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, তা জানিয়ে দিতে রাবাদাকে এক ওভারে ২টি বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেছেন। মহারাজকে স্কোয়ার লেগে সিঙ্গল নিয়ে ৭৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি উদযাপনের ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন আফিফ ৭২ পর্যন্ত।
রাবাদার শেষ ওভারের তৃতীয় বলে মিড উইকেটে দিয়েছেন ক্যাচ (১০৭ বলে ৯ চার এ ৭২)। ৭ম উইকেট জুটিতে মিরাজকে নিয়ে ৮৬ রানের পার্টনারশিপ বিচ্ছিন্ন হয়েছে আফিফের আউটে। নো বল কল শুনে মহারাজকে ছক্কা মেরেছেন মিরাজ। স্লগেও ব্যাটটা চওড়া করে মহারাজকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছিলেন। তবে পার্টনার আফিফকে হারিয়ে মর্মাহত মিরাজ থেমেছেন আফিফ আউট হওয়ার দুই বল পর। দিয়েছেন মিড অফে ক্যাচ (৪৯ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৩৮)। সেট ব্যাটার আফিফ-মিরাজের কেউ শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে না পারায় শেষ পাওয়ার প্লেতে যোগ করতে পেরেছে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৮। প্রথম স্পেলে ৩ উইকেট (৭-০-২৫-৩) এবং দ্বিতীয় স্পেলে ২ উইকেটে ( ৩-০-১৪-২) ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৮৪ ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের (১০-০-৩৯-৫) মুখ দেখলেন রাবাদা। আশ্চর্য হলেও সত্য, দুটি ৫ উইকেটের ইনিংসই তার বাংলাদেশের বিপক্ষে ! ২০১৫ সালে অভিষেকে ৬ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার মিরপুরে (৬/১৮), ৭ বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে পেলেন দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট (৫/৩৯)। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার রেকর্ডটা দারুণ-৯ ম্যাচে ১৯ উইকেট, গড় ১৯.৫২।
দেশকন্ঠ/অআ