মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে দারুণ জয় পাওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ১-১ সমতায়; তাই সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে দু’দলেরই। আজকে তৃতীয় ম্যাচে তাই জয়ের কোন বিকল্প নেই বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা কোন দলের জন্যই।
প্রায় দুই যুগের আক্ষেপ ঘুঁচেছে গত শুক্রবার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে ২০ বারের দেখায় তাদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে দাপট দেখিয়ে ৩৮ রানে জিতেছিল তামিম ইকবালের দল। সিরিজ নিশ্চিতের আশায় দ্বিতীয় ম্যাচেই মাটিতে নামতে হয়েছে সফরকারীদের। নিবেদনহীন ব্যাটিং আর নির্বিষ বোলিংয়ে রীতিমতো করতে হয়েছে অসহায় আত্মসমর্পণ। তবে এখনও ‘প্রথম’ সিরিজ জিতে ইতিহাসের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশ দলের সামনে। সেজন্য পাওয়ার-প্লে’তে বেশি রান করার দিকে চোঁখ রাখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বাহাতি ওপেনারের পরিকল্পনাটা সোজা, উইকেট না দেয়া।
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে তামিম ইকবাল-লিটন দাস ধীরে শুরু করলেও পরবর্তীতে তা ধরে রাখতে পেরেছে ব্যাটাররা। রাবাদা-এনগিদির পাওয়ার-প্লে খুব দেখেশুনেই খেলেছিলেন তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে তা করতে ব্যর্থ হন দুই ওপেনারই। ম্যাচ শেষে বারবার প্রথম দশ ওভারের কথা জোর দিয়ে বলছেন তামিম। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ হারলেও মোমেন্টাম হারিয়ে যায়নি বলে আশাবাদী হয়েছেন অধিনায়ক তামিম। তার মতে সিরিজ জেতার সুযোগ এখনও রয়েছে বাংলাদেশের সামনে, ‘সিরিজে আমরা প্রথম ম্যাচে খুবই ভালো খেলেছি। তবে দ্বিতীয়টা খারাপ খেলেছি তা মানতেই হবে। একটা জিনিস আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা যদি প্রথম দশ ওভারে উইকেট না দিয়ে তাঁদের ভালোভাবে সামাল দিতাম, তাহলে অবশ্যই মাঝের ওভারে রান করতে পারতাম। আর মোমেন্টাম ওদের কাছে আছে কী না... ক্রিকেটের প্রতি ম্যাচই নতুন করে শুরু করতে হয়। তাই শেষ ম্যাচটি আমি মনে করি দু’দলের সামনেই সমান সুযোগ রয়েছে।’
তবে শেষ ম্যাচ কীভাবে খেলবে তামিম তা ছেড়ে দিয়েছেন দলের ক্রিকেটারদের ওপরই, ‘প্রতিটি ম্যাচেই নতুন করে মোমেন্টাম পায় দলগুলো। আমি এটা নিয়ে চিন্তিত নই। একটা ব্যাপার আমি বলব, আমাদের ভালো খেলতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। আমরা যদি প্রথম ম্যাচের মতো খেলি তাহলে আমাদের সুযোগ থাকবে আর যদি দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের মতো খেলি তাহলে আমাদের জয়ের সম্ভবনা খুবই কমে যাবে। আমাদের ভালো খেলতেই হবে, কোনো অজুহাত দাড় করানো চলবে না।’ এই স্বপ্নের পালে হাওয়া দিচ্ছে অবশ্য ভেন্যু। দ্বিতীয় ওয়ানডে জোহানেসবার্গে হলেও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ম্যাচের ভেন্যু সেঞ্চুরিয়ানে। যেখানেই ইতিহাস প্রথম ম্যাচ জিতে গড়েছিল সাকিব-তাসকিনরা। সেটাও আশা জাগাচ্ছে তামিমের জন্য, ‘জয়-পরাজয় যাই হোক আমার কাছে মাঠ বড় ফ্যাক্টর মনে হয় না। দুটো ভেন্যুই আমাদের জন্য অ্যাওয়ে। তবে যেহেতু আমরা সেঞ্চুরিয়নে জয় পেয়েছি। কিছুটা বাড়তি আত্ম বিশ্বাসতো থাকবেই। তবে শেষ কথা হলো আমাদের ভালো খেলতে হবে। ওদের মেইন বোলার রাবাদার কথা ধরি- ওকে যদি আগে উইকেট না দিই, মাঝের ওভারগুলোতে আমরা অবশ্যই রান করতে পারব। এভাবেই খেলতে হবে’।
এদিকে বাড়তি বাউন্সেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যত সর্বনাশ হয়েছে বাংলাদেশের। ক্রিকেট ইতিহাসের বিখ্যাত এক ভেন্যু জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম। গত রবিবার বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে ওয়ান্ডারার্সের অতীতকে ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই। এই মাঠেই ২০০৬ সালে ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার ধ্রুপদী লড়াইয়ে ৪৩৪ রান টপকে জিতেছিল স্বাগতিকরা। ২০১৫ সালে এখানে এবি ডি ভিলিয়ার্সও ৩১ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এসবের ছিটেফোঁটাও অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল না। ইনিংসের শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল টাইগাররা। রাবাদা-লুঙ্গিরা উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স পেয়েছেন। তাতেই নাকাল হয়ে আউট হয়েছেন তামিম-সাকিবরা। পরে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময়ও বাড়তি বাউন্স দেখা গেছে। মূলত ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর ধাক্কাই ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সেঞ্চুরিয়নের দাপুটে ব্যাটিংয়ের ছবিটা ওয়ান্ডারার্সে বয়ে আনতে পারেননি লিটন-ইয়াসিররা।
যদিও আফিফ হোসেনের অনন্য হাফ সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানের পুঁজি গড়েছিল বাংলাদেশ। শুরুর বপর্যয়ের কারণেই উইকেটের প্রকৃত সুরটা ধরতে পারেনি টাইগাররা। সেখানে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলারদের কৃতিত্বও অনেক। রাবাদা একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে লিটন, সাকিব, ইয়াসির আলিকে ফিরিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে প্রতিরোধ গড়া আফিফ, মিরাজকেও তিন বলের ব্যবধানে আউট করেছেন ডানহাতি এ দ্রুতগতির পেসার। আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৫ রান করেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে লুঙ্গি এনগিদির লাফিয়ে উঠা বল সামলাতে পারেননি তামিম ইকবাল। বল চলে গেছে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ফিল্ডারের হাতে। সাকিবকে করা রাবাদার বলেও ছিল বাড়তি বাউন্স। ফ্লিক করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেওয়া সাকিব রানের খাতা খুলতে পারেননি। অষ্টম ওভারে লিটনের বুক উচ্চতায় উঠেছিল রাবাদার শর্ট বল। আপার কাট খেলতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ার জন্য লিটনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে।
একই পেসারের শর্ট বলে ইয়াসিরও ক্যাচ দেন। পারনেলের লেম্হ বলে অবশ্য এলবির ফাঁদে পড়েছিলেন মুশফিক। সকালের এমন দুর্যোগেই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও জানালেন, সকালের এক ঘণ্টায় বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি ব্যাটাররা। তিনি বলেন, ‘সকালে একটু বাড়তি বাউন্স হচ্ছিল। বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি আমরা। ওই সময়টা পার করে দিলে কিন্তু স্কোরটা বড় হতো। আমার মনে হয় প্রথম ম্যাচ জিতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে এমন হয়েছে। এজন্যই ওরা আমাদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন উইকেটে খেলে।’ আজকে জিতলে তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর থাকবে এই ম্যাচের দিকে।
দেশকণ্ঠ/আসো