মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : ২০ বছরের পর ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে ওয়ানডে সুপার লিগ ১২০ পয়েণ্ট নিয়ে শীর্ষে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। তারই ধারাবাহিকতায় টেস্ট সিরিজে মাঠে নামছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। ডারবানে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ৩১ মার্চ শুরু হবে। কেপটাউনের বারুদে সাফল্য ডারবানে জ্বলে ওঠার আশা করছে সফরকারীরা। তবে বাংলাদেশের ভয় কিন্তু সেই পুরনো জায়গায়, বাউন্সি উইকেট। তাজা ঘাসে ভরা উইকেট। কোচ জেমি সিডন্সের বিশ্বাস, এককথায় দারুণ এই প্রস্তুতির সুফল মিলবে টেস্ট সিরিজে। সূচিতে ওয়ানডে সিরিজ আগে হলেও এবার শুধু টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররাও ওয়ানডে দলের সঙ্গেই যায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। যে কারণে দীর্ঘসময় ধরে তারা প্রোটিয়া দেশটিতে অবস্থান করছে।
নিজেদেরকে দেশটির কন্ডিশনের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়েও নিয়েছে। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকসহ ওই ক্রিকেটাররা নিবিড়ভাবে অনুশীলন করেন সাবেক ক্রিকেটার ও এখন খ্যাতিমান কোচ গ্যারি কার্স্টেনের ক্রিকেট একাডেমিতে। ব্যাটিং কোচ সিডন্সের তত্ত্বাবধানেই চলে এই ক্যাম্প। তবে শুরুর দিকে কোচিং করান স্বয়ং কার্স্টেনও। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, যিনি কার্স্টেন একাডেমিরও কোচ। ওই ক্যাম্প এখন শেষ। তবে সিডন্সের মনে রয়ে গেছে রেশ। দল এখন প্রথম টেস্টের শহর ডারবানে। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সিডন্স শোনালেন প্রস্তুতি ক্যাম্পের বিস্তারিত, ‘কেপটাউন দুর্দান্ত ছিল এই ক্যাম্পটা। আবহাওয়া ছিল অনেকটাই নিখুঁত। ৯ জন ছিল ক্যাম্পে, পরে ২ জন দেশে ফিরে যায়। যাদের মধ্যে স্কোয়াডের বাইরে থাকা মোহাম্মদ মিঠুন ও রেজাউর রহমান রাজা ফিরে যান। দক্ষিণ আফ্রিকার আবহাওয়া ও পিচ কন্ডিশন সম্পর্কে যেভাবে ধারণা হয়েছে, ভালো কয়েকজন নেট বোলার ছিল, আমাদের বোলাররা তো ছিলই, ব্যাটসম্যানরা দারুণ কাজ করেছে’।
এই ব্যাটিং পরামর্শক আরও বলেন, ’কোচিংও দারুণ হয়েছে, গ্যারি কার্স্টেন ছিল, রায়ান কুক ও আমি কাজ করেছি মুমিনুল ও সাদমানসহ সবার সঙ্গে আলাদা করে, সব মিলিয়ে কার্যকর ১০টি দিন ছিল। কঠোর অনুশীলন, জিম সেশন, অনুশীলনের দারুণ সুযোগ-সুবিধা। আশা করি, মুমিনুল ও সাদমানরা টেস্টের জন্য দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।’ যদিও খুব বেশি ক্রিকেটার ছিলেন না ক্যাম্পে, ম্যাচ পরিস্থিতির মতো করে অনুশীলনের সুযোগও হয়নি সেভাবে, প্রস্তুতিতে তবু যথেষ্ট ঝাঁঝ ছিল বলেই দাবি সিডন্সের। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে কার্যকর প্রস্তুতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি, ‘ব্যাট-বলের মুখোমুখি লড়াইটা তীব্রই ছিল। চকচকে নতুন বল, সবুজ ঘাসের উইকেটৃ ঠিক ম্যাচ পরিস্থিতি নয়, তবে ব্যাট-বলের লড়াইটা ম্যাচের মতোই হয়েছে। নতুন বলে আমাদের দুই পেসার দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে বল করেছে, এরকম কিছুই দরকার ছিল ওদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়তি বাউন্সে কিভাবে বল ছাড়তে হয় বা ডিফেন্স করতে হয়, ঢাকা, চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি বাউন্স এখানে, স্টাম্পের ওপর দিয়ে ছাড়া বা বাইরের বল ছাড়া, ভালোভাবে ঠেকানো, বাজে বলকে সীমানায় পাঠানো, এসবই অনুশীলন হয়েছে।’ বৃষ্টিভেজা মাঠের কারণে এ দিন অনুশীলন করতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
এদিকে ভয় রয়েছে ডারবানে বৃষ্টি হওয়া নিয়ে। আকাশের কান্না শুরু হলে কি সেটি শত্রু হবে কিনা সেই প্রশ্নও রয়েছে। সেঞ্চুরিয়নে ওয়ানডে সিরিজের আগে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। টসের পরপরই মেঘে আকাশ ঢেকে গেলেও শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে সিরিজে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে ডারবানে টেস্ট সিরিজের আগে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। টেস্ট দল একসঙ্গে হয়ে অনুশীলন শুরু করতেই বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বেরসিক বৃষ্টি। ডারবানে টেস্ট সিরিজের আগে সোমবার ছিল ক্রিকেটারদের ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিন। কেউ কেউ অনুশীলন করবেন, বাকিরা জিমে সময় কাটাবেন, এমন ছিল কথা। কিন্তু রবিবার বৃষ্টির কারণে ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারেননি। সেজন্য সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর থেকে মূল মাঠে অনুশীলন করার কথা দলের। শনিবার কিছুটা সময় ম্যাচের মতো করে অনুশীলন করেছিল দল। তবে রোববার একটা বলও মাঠে গড়ায়নি। ক্রিকেটাররা যতটুকু পেরেছেন জিম সেশন করেছেন। সেটারও প্রয়োজন রয়েছে নিজেকে ফিট রাখতে।
মূল মাঠে অনুশীলনের সুযোগ পেলেও নিয়মিত বৃষ্টির কারণে কতটুকু মাঠের অনুশীলন হবে সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় ডারবানে বৃষ্টি প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, ডারবান টেস্টের প্রথমদিন আকাশ সারাদিনই মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। পূর্বাভাসে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া টেস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে টেস্টের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রাতে। তবে পরের দুই দিন গুরুত্বপূর্ণ সেশন চলে যেতে পারে বৃষ্টির পেটে। ওই বৃষ্টিই নির্ধারণ করতে পারে টেস্টের ফল। কোর্টনি ওয়ালশের পর আরো এক পেস কিংবদন্তি অ্যালান ডোনাল্ড বাংলাদেশি পেসারদের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার দেশের মাটিতেই ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে পেস বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেছেন। তার সামনেই তাসকিন-শরীফুলদের পেস আক্রমণে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
এদিকে ডারবানের পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত টেস্ট ভেন্যু ডারবানের কিংসমিড স্টেডিয়ামে প্রোটিয়ারা টেস্ট খেলছে ১৯২৩ সাল থেকে। এই মাঠে খেলা ৪৪ টেস্টের ১৬টিতেই হেরেছে তারা। জিতেছে ১৪ টেস্টে, বাকি ১৪টি হয়েছে ড্র। নিজেদের বিখ্যাত ভেন্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকা যে নিয়মিত হেরে ‘অভ্যস্ত’, আরেকটি পরিসংখ্যানে পরিষ্কার হবে। ডারবানে হওয়া সর্বশেষ চার টেস্টের একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি স্বাগতিকেরা। এই মাঠে প্রোটিয়ারা সর্বশেষ জিতেছে ২০১৩ সালে, ভারতের বিপক্ষে। আরেকটি তথ্য, উপমহাদেশের তিন দল, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার কিন্তু ডারবানে জেতার রেকর্ড আছে। তার মানে মাঠটা উপমহাদেশের দলগুলোর জন্য যথেষ্ট ‘পয়া’। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া এই মাঠের সর্বশেষ টেস্টটা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকবে কুশল পেরেরার চতুর্থ ইনিংসে সেই অপরাজিত ১৫৩ রানের বিখ্যাত ইনিংসটি, যেটির সৌজন্যে লঙ্কানরা পেয়েছিল ১ উইকেটের রোমাঞ্চকর এক জয়।
সম্ভাব্য বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (উইকেটকিপার), ইয়াসির আলি রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলাম।
দেশকণ্ঠ/আসো